এখন বাইরে প্রচুর ঝড় হচ্ছে, আমার বাড়ির দেয়ালের কার্নিশ বেয়ে নামছে জলের ধারা। কনক্রিটের উপর জল পড়ার একটা আলাদা শব্দ আছে। একটা সমলয়ে কিন্তু কিন্তু বেতালা শব্দ। এর মাঝে গাছের পাতার সাথে বাতাসের যুদ্ধ আর বজ্রের গম্ভীর নিনাদ। পরিবেশ টা রহস্যজনক। আমার সামনে এক পেয়ালা প্রাগৈতিহাসিক গরম কফি, মানে অনেক সময় আগে করা হয়ে ছিলো, ঠান্ডা হয়ে এখন রাঙ্গা তেতো জল। আমি শব্দ শুনছি। বৃষ্টির শব্দ! মাঝে মাঝে আমার জানালায় বৃষ্টির ঝাটকা লাগছে, এক অপার্থিব পান্ডব বিবর্জিত তান্ডব যেন। আমার ফোন বাজছে, কিন্তু নিঃশব্দে। শুধু তার কাঁপা কাঁপা ভাইব্রেশনের বিশ্রী গোঙ্গানির শব্দটা আসছে, মসৃন টেবিলে যৌনতাকাতর নারীর মতোন। অস্থির কম্পন ও গোঙ্গানি। ঝড়ের শব্দের সাথে ওই শব্দটা মিয়িয়ে যাচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে সেটা কোন সমস্যা সে ভাবে তৈরী করছে না শুধু একটা খচখচে মৃদু অস্বস্থি ছাড়া। কিন্তু আমি আসলে কী দেখছি? আমার ঘর অন্ধকার মুঠফোনের রঙ্গিন আলো আমার চশমার ব্যালকনিতে আলো ফেলছে। প্রতিবিম্বের থেকে প্রতিবিম্বিত আলো প্রতিফলিত হয়ে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে আমার চোখে। পাশের ঘরের সিংক থেকে ঢিলে হয়ে যাওয়া জলের কল। সেখান থেকে থেকে কদাচিৎ টিপ টিপ করে শব্দ করে জল পড়ছে, বাসি হয়ে যাওয়া খাবারের এঁটো বাসন গুলোতে। এই বৃষ্টির শব্দেও সেই শব্দটা বেশ প্রখর এবং দৃঢ়!

ঠিক আমার পাশের ঘরেই পড়ে আছে একটা লাশ! আমার লাশ। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, আমার ই লাশ কিন্তু সেটা ঠিক আমি নই। সমান্তরাল জগতের আমি বা আমার ই পরাবাস্তব জগতের আমার প্রতিবিম্বের লাশ। তার অমূলে প্রোথিত একটা ছুরি। আত্মহত্যা নয় তবে, আমার নিজের হ্নতারক আমি। আমি আমার নিজেকে খুন করেছি। আচ্ছা আমার পরাবাস্তব জগতে কিংবা সমান্তরাল জগতে কী আমার ই মতো আমার ই একটা মা বাবা আছেন? কিংবা ভালোবাসার মানুষ? বৃষ্টির শব্দে আমার চিন্তায় বার বার ছেদ ঘটছে। আমি ভেবেছিলাম এটা আমার লুক এ্যলাইক বা আমার ই মতো দেখতে কেউ একজন যেমন ছিলো সাদ্দাম বা হিটলারের। কিন্তু আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ভয়ের স্রোত চলে গিয়েছিলো যখন দেখেছিলাম আমাদের আঙ্গুলের ছাপ হুবাহু এক! আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার এক এমন কী আমার ই মতোন তার ডান পায়ের হাটুতে একটা কালো বড় তিল রয়েছে। যাই হোক কিছু দিন গেলেই গন্ধ উথলে উঠবে মরদেহ থেকে। আচ্ছা, নিজেকে নিজে খুন করলে তো আত্মহত্যা হয় তবে কি এটা আত্মহত্যা? কিন্তু আমি তো আত্মহত্যা করি নি। পরিস্থিতি এমন যে আমি তো আমার কাছে এখন এক জান্তব বাস্তব। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না বা চাচ্ছি না। বার বার একটা কথায় মাথায় আসছে আমি কী করে খুন করলাম আমার নিজেকে। নিজের অস্তিত্বকে কী করে মুছে দিতে পারলাম? বাইরে বৃষ্টি পড়ছে জোর কদমে, থেমে থেমে বজ্রপাতের শব্দ। সিড়িতে ছপাছপ শব্দে একিছু এলোমেলো ভারী বুটের শব্দ। কারা আসছে ?