somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইর্ন্টানদের “ডাক্তার” বলা আর ডাক্তারগণের অতিরিক্ত ডিগ্রি লেখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ

২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমতিয়াজ (ছদ্মনাম) নামের একজন মেডিকেল কলেজে দু/এক বছর পড়ার পর তা বন্ধ করে দেন। কিন্তু ওই ব্যক্তিকে গ্রামের লোক ইমতিয়াজ ডাক্তার বলে ডাকতেন। আরেকজন পড়ালেখাই করেননি অথচ তাকে তসলিম (ছদ্মনাম) মাস্টার বলে ডাকেন গ্রামবাসীরা। ওই গ্রামে এই দুজনকে নিয়ে একটা মজার ছড়া প্রচলিত আছে। ছড়াটি হলো “লেখা নাই পড়া নাই তসলিম মাস্টার, ওষুধ নাই পানি নাই ইমতিয়াজ ডাক্তার।” আমাদের দেশে কেউ মেডিকেল কলেজে পড়লেই তাকে “ডাক্তার” বলে। এমনকি, এমবিবিএস এর ছাত্র-ছাত্রীরাও নিজেদের “ডাক্তার” পরিচয় দিয়ে থাকেন। মেডিকেলে পড়লেই কি কাউকে ডাক্তার বলা যায়? তাহলে সাংবাদিকতার একজন ছাত্র কি সাংবাদিক? ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এমন ছাত্রকে ইঞ্জিনিয়ার বা আইনের ছাত্রকে অ্যাডভোকেট বলা যায়? বলা যাবে না।

মেডিকেলে পড়ছে এবং গ্রাজুয়েশন শেষ করে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পেশায় প্রবেশ না করলে ডাক্তার বলা যাবে না। ডাক্তারি পেশায় নাম লেখাতে হলে এমবিবিএস পাস করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। তাই মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের ডাক্তার বলা যায় না।

ডাক্তারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে: “A person, especially a physician, dentist, or veterinarian, trained in the healing arts and licensed to practice.” মেডিকেল সাইন্সে ডাক্তার হচ্ছে: “any medical professional with an MD, a PhD, or any other doctoral degree. A doctor may, for example, be a physician, psychologist, biomedical scientist, dentist, or veterinarian.” এ সংজ্ঞাগুলো থেকে স্পষ্ট যে যারা কোন মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করছে [তবে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে পেশায় আসার পর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য যারা ছাত্র তারা বাদে] তাদেরকে ডাক্তার বলা যাবে না।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ধারা ২২ অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর নিবন্ধন ব্যতিত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় দিতে পারবেন না। আবার ধারা ২৯তে বলা হয়েছে ন্যূনতম এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগী প্রাপ্তগণ ব্যতিত অন্য কেউ “ডাক্তার” পদবী ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ এমবিবিএস পাস করে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন ছাড়া যারা এনজিওতে গবেষক, প্রোগ্রাম অফিসার বা সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন তারাও ডাক্তার পরিচয় দিতে পারেন না।

বিএমডিসি কর্তৃক প্রণীত এমবিবিএস এর ৪৮৯ পৃষ্টার সিলেবাসে ( Curriculum for under-graduate medical education in Bangladesh-updated 2012) ) এমবিবিএস পাস করার পর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করার কথা বলা আছে। সিলেবাসে এমবিবিএস পাস করার পরও তাদের “স্টুডেন্ট” বলা হয়েছে। কোথাও মূল সিলেবাসে “ইন্টার্ন ডাক্তার” শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।
এবং একটি মেডিকেল কলেজের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে: “

” অর্থা্ৎ এখানে “স্টুডেন্ট” এবং “ট্রেইনিজ” প্রপঞ্চগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। দেখুন: Click This Link

ডাক্তারগণ আবার অতিরিক্ত পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না।

কেননা, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: “সকল নিবন্ধিত (বিএমএন্ডডিসি হইতে রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত) চিকিৎসক/দন্তচিকিৎসক এবং সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত নয় এমন কোন নাম, পদবী,শিক্ষাগত যোগ্যতা,বিবরণ ইত্যাদি বিএমএন্ডডিসি হইতে নিবন্ধণ প্রাপ্ত কোন চিকিৎসক/দন্তচিকিৎসক ব্যাবহার করিতে পারিবেন না । কেননা এই সমস্ত স্বীকৃতিবিহীন ডিগ্রী/পদবী ব্যাবহারে কাহারো অতিরিক্ত পেশাগত শিক্ষাযোগ্যতা আছে বলিয়া জনসাধারণ মনে করিতে পারেন এবং প্রতারিত হইতে পারেন। লক্ষ্য করা যাইতেছে যে, কোন কোন নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্তচিকিৎসক তাঁহাদের সাইন বোর্ড প্রেসক্রিপশানপ্যাড,ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে PGT; BHS; FCPS- (Part-I), (Part-II); MD- (in course), (Part-I), (Part-II), (Last part), Course Completed (cc); MS (in course), (Part-I), (Part-II), (থিসিস পর্ব) ইত্যাদি এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হইতে প্রদত্ত ফেলোশিপ এবং ট্রেনিংসমূহ যথা -FRCP, FRHS, FICA, FICS, FAMS, FIAGP ইত্যাদি উল্লেখ করিতেছেন যাহা কোন স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা নয় এবং বিএমএন্ডডিসি কর্তৃক স্বীকৃত নয়। ইহা ছাড়াও স্বীকৃত পোষ্টগ্রাজুয়েশান ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও কেহ কেহ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ,সার্জারী বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ,চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, গাইনী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাহাদের পরিচিতি প্রদান করিয়া তাহা প্রেসক্রিপশান প্যাড, সাইন বোর্ড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ব্যাবহার করিতেছেন যাহা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ হিসাবে গন্য। ইহা স্পষ্টতই বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইজন্য অর্থ দন্ড অথবা কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইতে পারেন । এমতাবস্থায় বিএমএন্ডডিসি হইতে প্রাপ্ত রেজিষ্ট্রেশন বাতিলসহ আইনে উল্লেখিত অন্যান্য শাস্তি পরিহার করার লক্ষ্যে সকল নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্তচিকিৎসককে বিএমএন্ডডিসি কর্তৃক স্বীকৃত নয় এমন কোন ডিগ্রী,পদবী, ফেলোশিপ ট্রেনিং সমূহ ইত্যাদি ব্যাবহার না করা এবং স্বীকৃত পোষ্টগ্রাজুয়েশান ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও নামের পর বিশেষজ্ঞ পদবী ব্যাবহার না করার জন্য অবহিত করা যাইতেছে ।”

[এটি সচেতনতামূলক পোস্ট, কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। কারণ ডাক্তারদের প্রতারণা থেকে যেন আমরা সতর্ক থাকতে পারি। এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নেয়া যায়।]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৪
৩৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×