"হারিয়ে গেছ অন্ধকারে-পাইনি খুঁজে আর,
আজকে তোমার আমার মাঝে সপ্ত পারাবার!
আজকে তোমার জন্মদিন-
স্মরণ-বেলায় নিদ্রাহীন
হাত্ড়ে ফিরি হারিয়ে-যাওয়ার অকূল অন্ধকার!
এই -সে হেথাই হারিয়ে গেছে কুড়িয়ে-পাওয়া হার!"
এক বছরে কবিতাটা দু'বার লিখতে হলো।এ রকম কত সপ্ত পারাবার!
এই যে প্রতি বছর তারিখটা মনে পড়ে,এর পিছেও তো অদৃশ্য একটা হাত থাকে।এই অদৃশ্য হাতই তো আমাকে প্রলুব্ধ করেছিলো সবচেয়ে বেশী।কী ক্ষতি হতো আমাদের দেখা না হলে?কী কাকতালীয়-কী ভয়াবহ দৈব।ও ময়মনসিংহে না আসতে পারতো।আব্বুর পোস্টিং না হতে পারতো।ও আমার আগের স্কুলে না ভর্তি হতে পারতো।সেদিন আমি স্কুলে না যেতে পারতাম।
এতগুলো ভুল এক সঙ্গে হয়ে গেল?
এরও তো একটা Purpose থাকা উচিত।অথবা এর reaction period over হয়ে গেছে?
কত বছর আগের কথা এসব?সাত?আট?অথবা আরো বেশী?মাঝে মাঝে ভাবি এই যে আমার মানসিক গড়ন,তার পুরোটাই ওর দ্বারা প্রভাবিত।লুবজানাকে গড়ে দিয়েছি আমি,কিন্তু যে আমাকে গড়ে দিয়েছিল?
এসব পুরোনো বসন্তের কথা জানে এমন লোক বিরল এখন।খুব বেশী লোক নেই যারা এসবের সাক্ষী ছিল।
যদিও ব্যপারটাকে আমি এখন অস্বীকার করি,যদিও একে ইনফেচুয়েশান বলে উড়িয়ে দেই,কিন্তু সময়টা আসলে নেহাৎ অল্প ছিল না।এষা যখন ছিল ততদিনে আমি শান্ত,স্থির।ও আমার ঋষিতা দেখেছে(অন্য অর্থে এটা দুর্বলতা),কখনোই রেগে উঠিনি আমি-ক্লাস টুয়েলভে এসে সব উত্তেজনা স্তিমিত হয়ে গেছে,বাইরে এসে আরো গম্ভীর।কিন্তু আমার সত্যিকারের পাগলামোটা যারা দেখেছে তার কোনদিনই বিশ্বাস করবে না।পাগলামোটা ফিরে আসে এইসব দিনে।আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে থাকি স্থানু হয়ে।একে একে ফিরে আসে রঙমাখা পাখা প্রজাপতিগুলো।বৃদ্ধ ফড়িংয়ে অস্বচ্ছ ডানা ক্রমশ ভঙ্গুর।
প্রভাতী সেনা লেনের একতলা দালানের বারান্দাওয়ালা বাড়িটার চারপাশে এখনো লাল সাইকেল বালকের দীর্ঘশ্বাসের ভূত ঘুরোঘুরি করে।গাঢ় কাজল,বিন্দু টিপ আর মাটির গহনা পরা বিব্রত বালিকার সামনে বালকের একটা দুপুর একেবারে অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল!
আমাদের শেষবার কথা হয়েছিল ক্লাস টুয়েলভের ফার্স্ট ভ্যাকেশনের কোনও একটা দিনে।আমি খুব আক্ষেপ করে বলেছিলাম "আমরা যা ভাবি তা বেশীরভাগ সময়ই ভুল হয়,শেষে নিজেদের ওপরই আত্মবিশ্বাস হারাই।একদা যাকে সম্মান করতাম সেও সময়ে সময়ে তুচ্ছ হয়ে যায়।কিন্তু প্রেমটা মনের ব্যাপার।কোন লেভেলেই এর মান কমে না।"
ওকে আমার চেয়ে ইনফেরিয়ার মনে হয়েছিল।মনে হয়েছিল আমি ওর চেয়ে ওপরের লেভেলে চলে গেছি চিন্তায় ও কবিতায়।এটা সত্যি -আমি ওর চেয়ে ভালো লিখতাম।সেইটাই আমাকে বেরিয়ে আসতে শক্তি জুগিয়েছিল।
আর কিছু সহজ দুঃখ ছিল-সেটা সে জানতো না।এজন্যই ত্যাগটা সহজ হয়েছিল।
এতদিন পর এসব মনে পড়ে যে অনুভূতি হলো সেটা তো স্বর্গীয়।আর যে এ অনুভূতি দিতে পারে সে দেবী।
আমাদের দেবীদের নিয়ে গেছে চন্দ্রীয় ড্রাগনেরা।
এসব যাই হোক,নিতান্ত বালখিল্যতা অথবা নষ্টামী-কোনটাই গুরুত্বপূর্ণ নয় এখন।ধবধবে সাদা আকাশের ছায়া যেমন বিশার আয়নার উপর পড়ে অন্য জগতের কথা মনে হয়,সেই রকম আশ্চর্য উজ্জ্বল,উজ্জ্বল একটা মুখ।তখন আমি কাছের মানুষ পড়তাম,কালপুরুষ,উত্তরাধিকার পড়তাম,সেই সময়ের বিন্দুবাসিনীকে আমার এত ভালো লেগেছিল!এখন ভাবি সেসব আদিখ্যেতা।অনেক বদলে গেছি আমরা।কিন্তু মনের মধ্যে খোদাই করে যে ছাপ লেগে আছে সেটা হয়তো সময়ে সময়ে ধূলো পড়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে,কিন্তু ধূলো সরাতেই সে দাগগুলো ঠিকই টের পাওয়া যায়-চিরকাল-চিরদিন!
সেই স্নিগ্ধ দাগগুলো রয়ে গেছে।