somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরবে বাংগালীদের দুর্দশার কারন-৮ঃশেষ পর্ব

০২ রা মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি দাম্মাম প্রভিন্সে থাকি ।সৌদির অন্যত্র বাংগালীদের সমস্যাগুলো একই হলেও দাম্মামে বাড়তি সমস্যা হিসেবে গোদের উপর বিষ ফাঁড়ার মত একটা স্কুলের অভ্যন্তরীন সমস্যা আমাদের অনেকগুলো দুর্ভোগের কারন । এই স্কুলের ভিতরের কর্মকান্ড আর একে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত বাংগালীদের পলিটিক্সের কারনে এখনকার অন্যান্য কমিউনিটি ও প্রশাসন ত্যক্তবিরক্ত ।এখানকার কর্মকান্ডের কারনে কত শ্রমিক যে চাকরি হারিয়েছে , কত জনের যে বেতন বৃদ্ধি আটকে গেছে , কত কোম্পানি যে বাংলাদেশ থেকে লোক আনতে গিয়েও পরে নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে এনেছে তার কোন হিসেব নেই ।বাংলাদেশ দুতাবাসের কর্মকর্তারা এ খবর জানলেও ইতিবাচক কোন হস্তক্ষেপ নেই ।

ইতিমধ্যে যারা ৩য় পর্ব পড়েছেন তারা হয়ত কিছুটা ধারনা পেয়েছেন ।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এর পরিচালনার দায়িত্বে আছে একজন জামাতী,শিক্ষাগত যোগ্যতা ম্যাট্রিক পাস,পদ কেরানি ।এম্বাসিতে খোজ নিয়ে যা জেনেছি তা হল , এম্বাসিতে এদের নামে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে । আবার এম্বাসিরই ২/৩জন অসত কর্মকর্তা রিয়াল খেয়ে চুপ।যেমন , রাস্ট্রদুত ফজলুল করিমের আগের জন ইকরাম সাহেবকে স্বর্নের মুকুট দেয়া হয়েছিল,স্কুলের কমিটিতে থাকার জন্য ।

দুঃখের বিষয় , সৌদি অথরিটির স্কুলটিতে তেমন কোন ইতিবাচক ভুমিকা নেই । তাদের যেমন বোঝানো হয় তারা তেমনি করে ।ঐ কেরানী সৌদি অথরিটিতে যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রন রক্ষা করে চলে ।এজন্য সে কমিউনিটির সবাইকে জিম্মি করে হেন অপকর্ম নেই যা সে করে না । যেমন- স্কুলের ফাইলে সন্তানের ভর্তির সময় পিতামাতার পাসপোর্টের কপি ও অন্যান্য বাক্তিগত গোপনীয় তথ্য দিতে হয় । বিবদমান দু-গ্রুপের কাউকে শায়েস্তা করতে হলে সে এক পক্ষ থেকে টাকা খেয়ে আরেক পক্ষকে সেই ফাইল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। আরো যেটা ভয়ংকর তাহল , সেএম্বাসী ও সৌদি মিনিস্ট্রির কর্মকর্তাদের সীল ব্যবহার ও স্বাক্ষর নকল করতে জানে ।তার বেতন একজন শিক্ষকের ২ গুন । মাঝে মাঝে কমিটিকে ব্ল্যাকমেইল করে একলাফে ৫০০ রিয়াল করে বেতন বাড়িয়ে নেয় । বাংলাদেশে ’৭১ এর যুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে লুটতরাজ , ধর্ষন , বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহবহু অভিযোগের আসামী। দেশ সাধীন হলে সে এলাকা ছাড়া হয় ।সে ছিল মতিউর রহমান নিজামীর ইসলামী ছাত্রসংঘের একজন সক্রিয় সদস্য ।

বর্তমান চাঁদপুর জেলার কালিয়াপাড়া থেকে কচুয়া পর্যন্ত সড়কের দুপাশের যত বাজার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়িতে লুটতরাজ হয়েছে ,তার সাথে সে জড়িত ।যুদ্ধের পর গ্রেফতার এড়াতে সে পালিয়ে নারায়নগঞ্জে আশ্রয় নেয় । ’৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর দালাল আইনের মামলাগুলো প্রত্যাহার হলে সে এলাকায় ফিরে আসে এবং একটি মাদ্রাসায় কেরানির চাকুরি নেয় । সেখানেও নানা অপকর্ম কতৃপক্ষের নজরে এলে তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয় ।
বর্তমানে যাত্রাবাড়ীর এক রাজাকারগলিতে তার বাসা ।

এই গলি রাজাকার ও জঙ্গীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ।সম্প্রতিধরা পড়া জংগীনেতা সাইদুর রহমানকে এখান থেকেই আটক করে আইন শৃংখলাবাহিনী ।

এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্নেল মোশাররফ হোসেন ।বাংলাদেশে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় লাখ লাখ টাকা তসরুপের কারনে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের একদিনের নোটিসে বিদায় নেন । এরপর যোগদেন আহছানিয়া মিশন স্কুলে। সেখানেও অনিয়মের কারনে বহিস্কৃত হন।এরপর প্রাক্তন সাংসদ খন্দকার মাহবুবউদ্দিনের বিতর্কিত নিয়োগে যোগ দেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে । সেখানেও ছাত্রী-শিক্ষকের যৌথ আন্দোলনে বিদায় নেন ।যাওয়ার আগে কিছু শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন ।

এরপর আসেন বাংলাদেশ স্কুল,দাম্মামে ।তাকে নিতে দেয়া হয়
দশম শ্রেনির গনিত ক্লাস । দুর্নীতিতে হাত পাকানো লোকের পড়াশুনার প্রয়োজন কোথায়! ভাতিজার গনিত খাতায় দেখলাম দশম শ্রেনীর ম্যাট্রিক্স গুননও জানে না ।যাই হোক এতো ভিতরের খবর । কর্তপক্ষ দয়া পরবশ হয়ে তাকে থাকার জন্য স্কুল ভবনে একটা রুম বরাদ্দ দেয় ।সেই রুম থেকে কম্বল চুরি করে প্রথম কমিঊনিটি ও কমিউনিটির বাইরে প্রশাসনের নজরে আসে । সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী চুরি করলে হাত বা আঙ্গুল কাটা যায় । ঠিক একই সময় স্কুল কমিটির এক আত্নীয় প্রায় ৫০০০০রিয়াল স্কুল তহবিল থেকে চুরি করে ।এই চুরির তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় কমিটির বিভিন্ন সদস্য বিভিন্ন কেনাকাটার নাম করে আরো প্রায় ৮০০০০রিয়াল চুরি করে । এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মও একের পর এক বের হতে থাকে আর কমিঊনিটিতে সমালোচনার ঝড় ওঠে ।

বাংলাদেশিদের চুরি বিদ্যা বিদেশেও রপ্তানী হয় ।এক শ্রীলংকার শিক্ষক শ্রীলংকা থেকে শিক্ষক নিয়োগের নামে কমিটির যোগ-সাজসে সেও বিশাল অংকের দান মারে । জানা যায়, আগে বানিজ্যিক প্রতিষ্টানে চাকুরি করার সময় এই শিক্ষক বিশাল অংকের অর্থ আত্নসাতের কারনে ২ সহযোগীসহ ধরা পড়ে । তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হয় এবং সবার ১টি করে আংগুল কাটা হয় । চুরির অপরাধে আঙ্গুল কাটা হলেও কমিটি তাকে সব জেনে শুনেই নিয়োগ দেয় ।

আরেক হেডমাস্টার আজাদ –আরেক বড় বাটপার ।সে এখান থেকে বাংলাদেশে তার এলাকায় অপকর্ম করে ।পরীক্ষার আগে ছাত্রদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে ।এভাবে অবৈধ উপার্জন করে সে রীতিমত কোটিপতি বনে গেছে । ঢাকায় ৪~৫টি বাড়ি , এলাকায় হিন্দুদের মাস্তান দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দিয়ে বা না দিয়ে প্রচুর ভু-সম্পত্তির মালিক হয়েছে ।তার প্রতিদ্বন্দী কোন শিক্ষক ভালো ক্লাস নিলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয় । একজন পাকিস্তানী শিক্ষক গনিতের ক্লাস নিয়ে ছাত্র ও অভিভাবকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তাকে চুরির মামলায় ফাসানো হয় । সেই শিক্ষক মানসম্মানের ভয়ে পালিয়ে বাঁচে ।

একজন কম্বল চুরি করেও বহাল তবিয়তে থাকে , অপরজন চুরি না করেও পালিয়ে বেড়ায় –কি পরিহাস !

ছাত্রদের আরবী শিক্ষার নামে কিছু চরিত্রহীন বদমায়েস নিয়োগ পায় ।মজার ব্যপার হলো, একজন আরবী শিক্ষকের পুরো পরিবারই এখানকার আরবী শিক্ষক । দোয়া করার নাম করে মেয়েদের শরীরে হাত দিয়ে এরা পুরো সমাজের মান সম্মান ডুবায় ।

নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশিদের সন্তান ভর্তিতে বাধ্যতামুলক হলেও নিয়ম না জানা থাকার কারনে কমিটির সদস্যরা বহুঅভিভাবকের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় ।পরে অভিভাবকরা জানতে পেরে কয়দিন চিল্লাচিল্লি হইচই করে ,তারপর চুপ ।

কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে তাদের আত্নীয়-স্বজন শিক্ষক হিসেবে এনে নিয়োগ দিতে পারে। শিক্ষক হিসেবে কেউ এলে –তার ভিসা , বিমান ভাড়া স্কুল তহবিল থেকে ব্যয় করা হয় ।তারপরও শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে প্রচুর অর্থ আদায় করা হয় ।এর পুরোটাই কমিটির সদস্যদের লাভ । শিক্ষক হিসেবে আসা কমিটির আত্মীয়দের কাছ থেকে ঘূষ বাবদ প্রচুর টাকা আত্নসাত করা হয় । এর পরিমান জনপ্রতি দুই থেকে তিন লাখ টাকা ।

এভাবে যে যেভাবে পেরেছে অর্থ লূট ,আত্নসাত ,চুরি করেছে ।আর এ খবর যখন প্রকাশিত হয় ,তখন কমিউনিটি ও প্রশাসনে এর বিরুপ প্রভাব পড়ে ।

এই স্কুল বন্ধ হয়ে যাক তা করো কাম্য নয় ।তবে এর চেয়েও কম অনিয়মের কারনে সৌদিতে বহু স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে । বহু কষ্টে পড়ে থাকা প্রবাসী বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম এই স্কুল । কিন্তু গুরুতর এসব অপরাধের কারনে যেকোন সময় স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে দাম্মামের বাঙ্গালী কমিঊনিটির একটা অংশ খুশিই হয় ।তবে স্কুলটি বন্ধ হলে বাংগালীদের লাভ ও ক্ষতি দুটোই হবে ।

সৌদি আরবের অন্যত্র অশিক্ষিত বাঙ্গালীদের কার্যকলাপে দেশের দুর্নাম বয়ে আনলেওদাম্মাম প্রভিন্সে এই স্কুলের কারনে বাঙ্গালী সমাজ আজ অস্তিত রক্ষার সম্মুখিন ।উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইয়েমেন ইরাককে সাপোর্ট করার কারনে ১ মাসে সব ইয়েমেনিকে সৌদি ছাড়তে হয়।এদের কারনে সৌদি অথিরিটি যে কোন সময়ে সব বাংলাদেসিকে ফেরত পাঠালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না ।তখন দোষ হবে সরকারের ।কারন , জনগনকে বোঝানো হবে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে বলে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে ।
(শেষ)

(৭ম পর্ব ) (১ম পর্ব )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫৯
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×