somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যঃ একদা ছিল না মোবাইল সকল হস্তে

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



◘ দৃশ্য ১ ◘
একদা সকলের হাতে হাতে মোবাইল নামক যন্ত্রের দেখা মিলিত না। গুটিকয়েক অতীব শৈখিন মানুষই কেবল এই যন্ত্র খরিদ করিবার এবং তদ্রুপ গলা কাটা কলরেটে কথা বলিবার মতন দুঃসাহস দেখাইতো। কলেজে মোবাইলধারী যুবকটি সুন্দরীদের সুনজর লাভের মত কৃতিত্ব দেখাইতে সক্ষম হইত এবং ইহা অন্যান্য যুবকদের ঈর্ষার কারণ হইয়া দাঁড়াইতো। মোবাইলবিহীন যুবকেরা মোবাইলধারীদের ফটকা পোলাপাইন নামক পদবীতে ভূষিত করিয়া আঙ্গুর ফল টক প্রবাদের সার্থকতা নিরুপনে ভূমিকা পালন করিত।

◘ দৃশ্য ২ ◘
দূর হইতে বন্ধু রবিনের হাসিমাখা চেহারা চোখে পড়িলো। তাহার গতিবিধি দেখিয়া মনে হইলো সে আমার দিকেই আসিতেছে। সামনে আসিবার পরে আমি তাহার চকচকে চোখ দুটি দেখিতে পাইলাম। সে চোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ দৃপ্তমান হইতেছে।

-দোস্ত দুলাভাইরে কইছি আমার জন্য একটা মোবাইল পাঠাইতে।
-তাই নাকি? ভালই তো। পাঠাইবো নাকি?
-হ। সামনের সপ্তায় কুয়েত থাইকা উনার ছুটো ভাই আইতাছে। উনার কাছে দিয়া দিবো। তুই কইলাম আমারে সব কিছু শিখাইয়া দিবি।
-কুনো টেনশন লইছ না। আমি আছিনা?

আমার কথায় আশ্বস্ত হইয়া রবিনের আনন্দ আরো বহুগুনে বাড়িয়া গেলো। সন্ধ্যায় তাহার চাইনিজ খাওয়ানোর প্রস্থাব আমি ফিরিয়া দিতে পারিলাম না।

◘ দৃশ্য ৩ ◘
রবিন বেচারার মন খুবই খারাপ। যদিও তাহার দুলাভাই তাহার জন্যই মোবাইলখানা পাঠাইয়াছিলে, কিন্তু রবিনের দজ্জাল পিতা ইহার দখল লইয়াছে। নোকিয়া ৩৩১০ মডেলের মোবাইলখানা হাতে লইয়া অত্যান্ত ভাবগম্ভীর্যের সহিত তিনি ঘন ঘন গ্রামের বাজারে যাতায়াত করেন এবং আগ্রহীদের মাঝে এই যন্ত্রের তাৎপর্য বর্ণনা করিয়া থাকেন। দুই দিন সাধনা করিবার পর তিনি কল করা এবং কল রিসিভ করিবার মতন কঠিন ব্যাপার শিখিবার সফলতা লাভ করিয়াছেন।

◘ দৃশ্য ৪ ◘
কলেজ হইতে বাসায় ফিরিয়াই দেখিতে পারিলাম রবিনের পিতা আমাদের ড্রয়িংরুমে মোবাইল হাতে বসিয়া আছেন। তাহার মুখমন্ডল দেখিয়া প্রতীয়মান হইতেছে তিনি পুত্র হারাইবার মত দুঃখে কাতর হইয়া আছেন। ভুরুকুচকাইয়া তিনি ঘন ঘন তাহার মোবাইলের চারপাশ খুটিয়া খুটিয়া দেখিতেছিলেন। আমাকে দেখা মাত্র বিদ্যুৎ বেগে আমার দিকে ছুটিয়া আসিলেন।

-ভাইগনা তুমারে সকাল থাইকা খুঁজতাছি। তুমাগো বাড়িতে এই লইয়া চাইর বার আইলাম। কৈ ছিলা ?
-কলেজে গেছিলাম। কি ব্যাপার মামা? কুনো সমস্যা?
-আরে মোবাইল নিয়া বিরাট সমস্যায় পড়ছি। কি এক মছিবত নিয়া আইলো রবিন।
-ক্যান মামা, কি হৈছে ?
-বাজার থাইকা একটু আগে ৩০০টাকার মোবাইল কার্ড কিনছি ঢুকামু দেইখা। কিন্তু বাড়িতে আইয়া অনেক খুজাখুজি কইরাও তো কুনো লাইন ঘাট করতে পারলাম না।
-যেই দোকান থাইকা কার্ড কিনছেন ওদের বললেই তো ব্যবস্থা কইরা দিতো।
-আরে মোবইলডা বাড়িতে চার্জে দিয়া গেছিলাম। কিন্তু বাড়িতে আইয়া মুবাইলের ভিতরে কার্ড ঢুকাইবার মত কুনো ফুডা তো খুইজা পাইলাম না। একটা ফুডা আছে চার্জ দিওনের। আর তো কুনো ফুডা দেহিনা। এতো বড় কার্ডটা এইডার ভিতরে ক্যামনে ঢুকামু?
উনার কথা শুনিবার মাত্র আমার মাথায় ঘূর্ণিপাক শুরু হইয়া গেল এবং অতি কষ্টের সহিত নিজেকে সামলাইয়া লইতে সক্ষম হইলাম। ফুডাবিহীন পন্থায় মোবাইলে কার্ড ঢুকাইয়া দিয়া তাহাকে বিদায় করিলাম। তাহাকে আর ফুডাবিহীন পদ্ধতি শিখাইবার মতন রিস্ক না লইয়া আমি খাইতে বসিয়া গেলাম। যদিও তাহার কথা শ্রবণ করিয়া আমার পেট কিঞ্চিৎ ভরিয়া গিয়াছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৭
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×