কুদ্দুস মিয়ার বোঝার বয়স হওয়ার পর থেকেই পণ করেছিল সে বাসর রাতে বিড়াল মেরেই ছাড়বে। বন্ধুরা তাকে মজা করে কুদ্দুইচ্চা বলে ডাকলেও সে যতটা অবাক হয়না, তার থেকে বেশি অবাক হয় যখন সে শুনে বেশির ভাগ পুরুষই বাসররাতে বিড়াল মারতে পারেনা। তাই সে এই অসাধ্য সাধন করে বন্ধুদের মুখে চুনকালি মেখে প্রমাণ করবে সে আসলে কুদ্দুইচ্চা না, শেখ কুদ্দুস মিয়া।
আজ বাসর ঘরে ঢোকার আগ মুহুর্তে তার বন্ধুদের ফ্যাকাসে মুখের কথা চিন্তা করে তার খুব হাসি পেতে লাগলো। কেননা আজ সে এক ঐতিহাসিক কাজ করতে যাচ্ছে যার মাধ্যমে সে তার বন্ধুদের সমালোচনার কড়া জবাব দিতে পারবে। সে প্রমাণ করে ছাড়বে সেই আসল পুরুষ।
কুদ্দুস মিয়া বাসর ঘরে ঢুকেই খুব শক্ত করে দরজা বন্ধ করে দিল। যেন আজ এখানে যাই ঘটুক না কেন; কেউ যাতে বাসর ঘরে ঢুকতে না পারে আর কেউ যেন বেরও না হতে পারে। দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষাও করে নিল সে। তার নতুন বউ মোসাম্মৎ কুলসুম বেগম খাটের উপড় আটোসাটো হয়ে বসে আছে। তার স্বামীর হাতের মোটা লাঠি আর দরজা আটকানোর কায়দা দেখে সে কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে গেছে। তার মতিগতি সুবিধার ঠেকছেনা কুলসুমের কাছে। ইতিমধ্যে সে কয়েকবার ঢোকও গিলে ফেলেছে। এমনকি কপালে ঘামের বিন্দুও জমা শুরু হয়ে গেছে। মনে মনে সে আইয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করল।
কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে কুদ্দুস মিয়া খাটের তলা থেকে একটা লোহার খাচা বের করল। খাচায় একটা হুলো বিড়াল বাইরে বের হওয়ার জন্য খুব ছটফট করছে। কুদ্দুস মিয়া বিড়াল সমেত খাচাটা খাটের উপড় নিয়ে রাখল। নতুন বউকে বলল- "আমি এক দুই তিন বলার সাথে সাথে খাচার দরজাটা খুলে দিবা।"
কুদ্দুসের কান্ডকারখানায় কুলসুম ভীষণ অবাক হতে লাগলো। কিন্তু আপাতত সান্তনার কথা হচ্ছে তার কপালে মনে হয় খারাপ কিছু নাই। তবে কুদ্দুস মিয়ার কাজকর্ম তার কপালের ঘাম বৃদ্ধি করেই চলল। কুদ্দুস মিয়া খাচার সামনে এটাকিং মোডে প্রস্তুত হল।
ওই দিকে কুলসুমও স্বামীর কাউন্টডাউন এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। এক দুই তিন বলার সাথে সাথে কুলসুম খাচার দরজা খুলে দিল ঠিকই, কিন্তু কুদ্দুস তার শট মিস করল। বদমাশ বিড়াল খাচা থেকে বের হয়ে তুলকালাম শুরু করে দিল। পালাবার পথ খুঁজতে গিয়ে একের পর এক জিনিসপত্র ভাঙতে লাগল। কুদ্দুসও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। বিড়ালের পিছু সে ছাড়ছেই না। হঠ্যাৎ বিড়ালটা লাফ দিয়ে কুলসুমের উপড় গিয়ে পড়ল। আর ওমনি সে ওমা, ওমা, মরে গেলাম, মরে গেলাম বলে চিৎকার করতে লাগল। কুলসুমের গলার আওয়াজ বাড়ির সবার কানেই গেল বটে। কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারণে কেউ বাসরঘরমুখী হওয়ার মত দুঃসাহস দেখালো না।
এই ঘটনার পরে আশেপাশের সবার কাছেই কুদ্দুস মিয়া আসল পুরুষ হিসেবে পরিচিতি পেল বটে, কিন্তু কুলসুমের কাছে এমনকি নিজের কাছেও সে আজীবন কুদ্দুইচ্চা হিসেবেই রয়ে গেল।
*মূল লেখাটি পূর্বে বাংলাদেশ প্রতিদিনের "রকমারি রম্যতে" প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫