somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ভালোবাসা কারে কয়?-সম্পূর্ণ

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই কখন থেকে সেজেগুজে বসে আছে নীলা। অর্কের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ সারাটা দিনই রান্নাবান্না করেই কাটিয়েছে সে। নীলার প্ল্যান ছিল অর্কের প্রিয় ডিসগুলো রান্না করে অর্ককে একটু চমকে দিবে আজ। নাহ নাহ আরেকটা কারনও আছে। নিজের জন্মদিনে পরিবারের সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করা ছোটবেলা থেকেই নীলার একটা শখ। আজ নীলার জন্মদিন। ঘড়িতে প্রায় দশটা বাজে অথচ অর্কের তখনো পাত্তা নেই। অর্কের উপর অবশ্য কখনো রাগ হয়না নীলা। হতে পারেও না। তাছাড়া নীলা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং ম্যাচিউর একটা মেয়ে। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে মান-অভিমান, ঝগড়া-জাটি নীলার খুবই অপছন্দ। অর্ক একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকুরী করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে কাজের উপরই থাকতে হয়। আজ যে নীলার জন্মদিন তা হয়ত অর্কের মনেও নেই। মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কাজের চাপে অনেক সময় নিজের নাম ও ভুলে যায় সে। নীলার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় অর্ককে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসে। কিন্তু সেই সময় বা সুযোগ অর্কের কখনো হয়না। এই নিয়ে অবশ্য তেমন একটা আক্ষেপও নেই নীলার। সপ্তাহে যে একটা দিন অর্কের ছুটি থাকে সেই দিনটাতেই ভালোমত পুষিয়ে নেয় সে। মেয়ে হিসেবে অতি মাত্রার রোমান্টিক নীলা। নীলার অদ্ভুত-মিষ্টি-পাগলামীগুলো দারুন উপভোগ করে অর্ক। যদিও অর্ক পুরোপুরিই নীলার বিপরীত। নীলার মত পাগলামী অর্ক কখনোই করতে পারেনা। তাছাড়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ সবাই একভাবে ঘটাতে পারেনা। সবচেয়ে বড় কথা, নীলা অর্কের মাঝে অসাধারন একটা বোঝাপড়া ছিল। তাদের ভালোবাসার ভিত্তি ছিল অত্যন্ত মজবুত।

কলিংবেল বাজছে অনেকক্ষন থেকে। অর্কের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এসেছে নীলা টেরও পায়নি। চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলল সে। আট-দশটা দিনের মত অতি স্বাভাবিকভাবেই গৃহে প্রবেশ করল অর্ক। হাতমুখ ধুয়ে ড্রেস চেঞ্জ করল। নীলাও প্রতিদিনের মত অর্কের জন্য খাবার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অর্ক যখন ড্রয়িংরুমে বসে অতি মনোযোগ সহকারে খবর দেখছিল, নীলা হুট করে এসে টিভিটা বন্ধ করে দিল। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, “আসেন মশাই এবার খেতে আসেন”। অর্ক অবাক দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে রইল। নীলাকে সাজলে যেন একটু বেশীই সুন্দর লাগে।

--আজকে হঠাত এত সাজুগুজু করলা, কাহিনী কি?

--ইচ্ছা করল তাই সাজলাম। কেন আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে?

--নাহ খুব একটা খারাপ লাগছে না। মুচকি হেসে বলল অর্ক।

অর্ক যদি এখন বলত, “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নীলা। তুমি কি জানো নীল শাড়ীতে তোমাকে কতটা মানায়?” তাহলেই হয়ত নীলা অবাক হত।

--ওমা আজকে তো দেখি আমার সব প্রিয় খাবারগুলা রান্না করেছ। দাড়াও একটু একটু করে টেস্ট করি। হুম সেইরকম হইছে কোরমাটা। তোমার রান্নার হাত আসলেই আমার মায়ের মত!!

খাবার দাবার শেষ করে ওরা দুজন গল্প করছিল। হঠাত করেই অর্ক নীলাকে বলল চোখ বন্ধ করতে। নীলার মাথায় কোনভাবেই কাজ করছেনা কেন হঠাত করে অর্ক এই আবদার করছে। নীলা তেমন একটা গেজালো না। চোখ বন্ধ করে ফেলল।

--এবার চোখ খোল।

চোখ খুলে তো নীলার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অর্ক নীলার আঙ্গুলে খুব সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দিল।

--ওহ মাই গড! হাউ বিওটিফুল! নীলার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।

--হেপী বার্থডে জান! তুমি কি ভাবছিলা আমি ভুলে গেছি?

খুশীতে নীলার চোখে পানি এসে পড়ল। গিফট পেয়ে নীলার যতটা না খুশী লেগেছে তার চেয়ে লাখ লাখ গুন বেশী খুশী লেগেছে এই ভেবে যে অর্ক তার বার্থডে’র কথা মনে রেখেছে।

--শয়তান...এত ঢং কর কেন তুমি? এই বলে নীলা হাসতে হাসতে অর্ককে কয়েকটা ঘুষি দিল।

--এবার তোমার চোখ বন্ধ করার পালা। চোখ বন্ধ কর বলছি!

--কেন আমাকে কি কোনো গিফট দিবা নাকি?

--আগে চোখ বন্ধ কর তো। কোনো কথা নাই!

চোখ বন্ধ করতেই নীলা অর্ক জড়িয়ে ধরে নিবিড়ভাবে কিছুক্ষন কিস করল। অর্কও ওকে জাপটে ধরে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল। ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে ওরা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকল।

(নীলার বর্ণনা হয়ত এই গল্পে আর আসবেনা। মজার ব্যাপার হল নীলা এই গল্পের তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন চরিত্র না)

অফিসে একজন তুখোড় এক্সিকিউটিভ হিসেবে অর্কের বেশ সুনাম রয়েছে। প্রচন্ড মেধা, কাজের প্রতি একাগ্রতা এবং আকর্ষনীয় ব্যাক্তিত্বের কারনে বসের সবচেয়ে আস্থাভাজন ইম্পলয়ী অর্ক। আর তাইতো বস তার একমাত্র মেয়ে সিমিনের সাথে সবার প্রথমে অর্ককেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সিমিন কয়দিন আগেই হার্ভাড থেকে এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরেছে। দু-একদিনের মধ্যেই কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে সে। অত্যন্ত আকর্ষনীয় মুখশ্রী এবং শারিরিক অবয়বের অধিকারী সিমিন। সিমিনের মায়াবী চেহারার ফাঁদে পড়ে যেকোনো পু্রুষই কুপোকাত হতে বাধ্য। তবে সিমিন অবাক হল তার প্রতি অর্কের নির্লিপ্ততা দেখে। অর্কের ব্যাক্তিত্ব কেন যেন প্রচন্ডভাবে আকর্ষন করল সিমিনকে। সিমিন কখনো কোন পুরুষকে দেখে এতটা আকর্ষন অনুভব করেনি। কত পুরুষই তো পাগল ছিল সিমিনের জন্য! কিন্তু আজ সিমিনের কেন যেন মনে হচ্ছে অর্কই সে সপ্নপুরুষ যাকে সে এতটা দিন ধরে খুজে বেড়িয়েছে।

প্রথম পরিচয়ের পর থাকেই অর্কের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে সিমিনের। অর্কের সাথে একটু কথা বলার জন্য একটু কাছ থেকে দেখার জন্য খুব দ্রুতই ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ফেলল। দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই একদিন অর্ককে তার রুমে ডেকে আনলো সিমিন।

--আসুন মিঃ অর্ক। কেমন আছেন আপনি?

--জ্বী ম্যাডাম ভালো। আপনি ভালো আছেন? আর অফিস কেমন লাগছে?

--একটু নারভাস। মনে হচ্ছে বেশ কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছি। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।

--আস্তে আস্তে সবকিছুই বুঝে উঠবেন ম্যাডাম।

--হুম। তবে আপনার হেল্প আমার দরকার। ডেডের কাছে আপনার অনেক প্রসংশা শুনেছি। আমার মনে হয় একমাত্র আপনিই আমাকে এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী হেল্প করতে পারবেন। আপনি কি আমাকে হেল্প করবেন প্লিজ?

--হা হা হা! অবশ্যই ম্যাডাম। আমি আমার সাধ্যমত আপনাকে হেল্প করার চেষ্টা করব। তাছাড়া এটা তো আমার জন্য বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার!

--থ্যাংক্স এ লট অর্ক সাহেব। ইফ ইউ ডোন্ট মাইণ্ড আমরা কি আজ একসাথে লাঞ্চ করতে পারি?

এই প্রস্তাবে অর্ক কিছুটা অবাক হল। তবে সাথে সাথেই তার সম্মত্তির কথা জানিয়ে দিল।

সেদিন লাঞ্চের সময় অনেক কথা হল সিমিন ও অর্কের মধ্যে। অর্ক খুবই প্রফেশনাল। কাজের কথার বাইরে কোনপ্রকার টূশব্দটিও করছে না সে। লাঞ্চের ফাকেই সিমিনকে তাদের কোম্পানীর স্ট্রাটেজী, পলিসি এবং ফিউচার একশন সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা দিল অর্ক।

--অনেক ধন্যবাদ অর্ক সাহেব। অনেক কিছুই জানতে পারলাম আপনার কাছ থেকে। বাই দ্যা ওয়ে কাল তো উইকএন্ড। কালকে প্ল্যান কি আপনার?

--তেমন কিছু না। উইকএন্ডটা বউ-এর সাথে ঘোরাঘুরি করেই কাটিয়ে দেই। আপনার কি প্লান ম্যাডাম?

সিমিন কেমন যেন অনুভুতিহীন হয়ে গেল অর্কের কথা শুনে। প্রচন্ড শক খেলে হয়ত মানুষ অনুভুতিশুন্য হয়ে পড়ে। সিমিন মনে মনে ভাবতে লাগল একটা বারের জন্যও কেন তার মনে হল না যে অর্ক বিবাহিত হতে পারে! অর্ককে পাওয়ার তীব্র আখাঙ্কাই কি তাকে বাস্তব থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রেখেছিল?

--আর ইউ আপসেট ম্যাডাম?

--নাহ আই এম ওকে। আসলে উইকএন্ড আমার কাছে স্পেশাল কিছু না। তবে আপনার উইকএন্ড প্ল্যান শুনে ভালোই লাগল। বেস্ট অব লাক!

এর পর প্রায় মাসচারেক সময় পার হয়ে গেছে। সিমিন পুরোপুরি প্রফেশনাল হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে । বেশ দক্ষতার সাথেই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অর্কের সাথে তার সম্পর্কের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি সবকিছু আগের মতই আছে। এই জীবনে কোন কিছুই তাকে কোনোদিন চাইতে হয়নি। কোটিপতি বাবার একমাত্র কন্যা সে। কোনো কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতে অভ্যস্ত। অথচ আজ যাকে মনেপ্রানে চাইছে, সে আগেই অন্য কারো হয়ে বসে আছে। এই অপ্রিয় সত্যটা কিছুতেই মানতে পারছেনা সিমিন। কেনো অর্কের সাথে তার আরো আগে দেখা হল না? কেনো!!! সিমিনের মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে অর্ককে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিতে। কিন্তু এর পরিনামের কথা চিন্তা করে শিয়রে উঠে সিমিন। অর্ক যদি তাকে অপমান করে বসে? অর্কের মনে যদি তার প্রতি তীব্র ঘৃনা জেগে উঠে? সিমিনকে যদি খুব বাজে চরিত্রের মেয়ে ভেবে বসে অর্ক? প্রশ্নগুলো প্রতিটি মুহুর্ত যন্ত্রনা দেয় সিমিনকে। অসহ্য মানসিক যন্ত্রনায় মাঝে মাঝে চিৎকার করে কেঁদে উঠে সিমিন। সে জানে, তার মনে যে কষ্ট; যে তীব্র যন্ত্রনা; তা কেউ বুঝবে না। বুঝতে চাইবেও না!!

সিমিনদের কোম্পানী বিশাল একটা প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে। প্রজেক্টের লোকেশন চট্রগ্রাম। এই মুহুর্তে সাইট ভিজিট করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে । ওখানে নাকি ছোটখাটো একটা সমস্যও চলছে ইদানিং। অর্কের সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলে খুব দরকার। সে ছাড়া এসব ঝামেলাগুলো এত স্মুথলি কেউ ম্যানেজ করতে পারবে বলে সিমিনের মনে হয়না।

--ম্যাডাম কি আমাকে ডেকেছিলেন?

--অর্ক সাহেব, প্লিজ বসুন। আমরা চিটাগং-এ যে নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছি ইমিডিয়েটলি ওখানটায় যাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। আর ওখানে যে ইদানিং কিছু সমস্যা চলছে তাতো আপনি আগেই জানেন। আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতে পারছিনা।

--ম্যাডাম, আমার প্রতি আপনার ভরসা বোধ হয় একটু বেশীই! মুচকি হেসে রসিকতার সুরে বলল, অর্ক।

--হাহাহাহাহা! হুম ঠিকই বলছেন আপনি।

--আমার তাহলে কখন রওনা দিতে হবে?

--আগামীকাল সকাল সকাল হলে ভালো হয়।

--ম্যাডাম, ইফ ইউ ডোন্ট মাইণ্ড আমার একটা প্রস্তাব ছিল।

--দেখুন অর্ক সাহেব আমি কিন্তু আপনাকে বন্ধুর মতই মনে করি। আপনার কাছে আমি কখনোই এত ফর্মাল বিহেভ আশা করিনা। আর আমি আপনার যেকোনো প্রস্তাবে চোখ বন্ধ করে রাজী হয়ে যাবো, তবে এক শর্তে! আপনি প্লিজ আমাকে আর ম্যাডাম ম্যাডাম ডাকতে পারবেন না! বলুন রাজী??

অর্ক হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। অর্ককে এভাবে হাসতে সিমিন কখনো দেখেনি। অর্ক যে এত সুন্দর করে প্রান খুলে হাসতে পারে সিমিনের জানা ছিলনা।

--সরি একটু বেশীই হেসে ফেললাম বোধ হয়! বাই দ্যা ওয়ে ম্যাডাম, শত হলেও আপনি কিন্তু আমার বস।

--নো আমি আপনার বস না। আমি আপনার বন্ধু। এখন থেকে আপনি আমাকে সিমিন বলে ডাকবেন। ওকে??

--জো হুকুম ম্যাডাম!

--আবার ম্যাডাম!! দিজ টাইম আই এম রিয়েলী গেটিং এংরি, অর্ক! মৃদু হেসে বলল সিমিন।

--অল রাইট মিস সিমিন! ইউ আর নট মাই বস এনিমোর! হেপী?

--থ্যাক্স এ লট অর্ক! এবার আপনার প্রস্তাবটা শুনতে চাই। যদিও আমার উত্তর পজিটিভই হবে।

--মিস সিমিন, আমি চাই আপনিও আমার সাথে চলুন চিটাগং। চিটাগং খুব সুন্দর একটা শহর। প্রজেক্টের কাজের ফাঁকে আমি আপনাকে শহরটা ঘুরিয়ে দেখাবো। আপনার ভালো লাগবে। তাছাড়া আপনি তো জানেন এই প্রজেক্ট আমাদের কোম্পানীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সাথে থাকলে আপনার সাথে ডিসকাস করে অনেক প্রব্লেম ইজিলি সল্ভ করতে পারতাম!

অর্কের কথাগুলো সিমিনের কাছে সপ্নের মত মনে হচ্ছিল। অর্ক কি কথাগুলো আদৌ বলেছে? আচ্ছা অর্ক কি সত্যিই তাকে চিটাগং শহর ঘুরিয়ে দেখাতে চায়?

--মিস সিমিন আপনি কি যাচ্ছেন আমার সাথে? অবশ্য আপনার পারসোনাল প্রব্লেম থাকলে আমি কখনোই ইনসিস্ট করবনা।

--আপনি কি আমাকে পাগল ভেবেছেন? এত সুন্দর একটা প্রস্তাবে আমি কিভাবে অরাজী হই? এন্ড ইউ নো অর্ক, আমি একদম ছোটবেলায় আমেরিকায় চলে গিয়েছিলাম। ওখানেই আমার বেড়ে উঠা। দেশে খুব কম আসা হত আর আসলেও অল্প কদিনের জন্য। বাংলাদেশের বেশীরভাগ জায়গা এখনো আমার ঘোরা হয়নি। এই প্রজেক্টের বাহানায় চিটাগং শহরটা একটু ঘুরে দেখা হবে। আমি কিন্তু দারুন এক্সাইটেড!

--থ্যাঙ্ক ইউ মিস সিমিন। ইটস মাই প্লেজার টু হেভ ইউ ইন দি জার্নি। তাহলে আমরা কাল সকালে রওনা হচ্ছি।

অর্ককে যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে সিমিন। কাজের প্রতি অর্কের সিনসিয়ারিটি, রেসপন্সিবিলিটি, ডেডিকেশন অ্যান্ড পেশন চোখে পড়ার মত।

--কাজ করতে করতে তো বোধ হয় আমাকে চিটাগং ঘুরিয়ে দেখানোর কথা ভুলেই গিয়েছেন, অর্ক।

--আমি আসলেই ভাবতে পারিনি কাজের মধ্যে এতটা সময় ব্যয় হয়ে যাবে। আমাদের তো প্রায় ফেরার সময় হয়ে গেল।

--কিন্তু আমি প্রচন্ড টায়ার্ড অর্ক। এই মুহুর্তে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার এনার্জি আমার একেবারেই নেই। কেন ইউ কান্ডলি বুক মি এ হোটেল রুম প্লিজ? আর আপনি ঢাকা চলে যান। আমি আজকের রাতটা হোটেলে কাটিয়ে কালকে ঢাকা ব্যাক করব।

--হুম বুঝলাম। আপনি আসলে আমাকে আপনার বন্ধু ভাবেন না। বন্ধু ভাবলে এভাবে অন্তত বলতে পারতেন না। আর আপনাকে এখানে একা রেখে আমার পক্ষে ঢাকা ব্যাক করা সম্ভব না।

--অহ মাই গড...আই ওয়াজ জাস্ট থিংকিং এবাউট ইউ। এবাউট ইউর ফ্যামিলি। আমার জন্য আপনাকে খামাখা ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছিলাম না অর্ক।

--ইউ ডোন্ট হ্যাভ টূ অরি এবাউট ইট। আই উইল ম্যানেজ মাই ওয়াইফ। ইউ নো সি ইজ কোয়াইট সুইট এন্ড আন্ডারস্ট্যানডেবল গার্ল। তাছাড়া আমাকে অফিসের কাজে তো প্রায়ই ঢাকার বাইরে এমনকি দেশের বাইরেও থাকতে হয়। নীলা একা থেকে অভ্যস্ত। আমার পরিচিত খুব ভালো একটা হোটেল আছে এখানে। আমি ওখানে ফোন করে দুটা রুম বুক করে রাখছি।

“সো হার নেইম ইজ নীলা, রাইট? সাচ এ লাকি গার্ল”! কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছে সিমিন। ভাগ্যিস অর্ক সেভাবে খেয়াল করেনি!

--হোটেল তো বুক হয়ে গেল। চলুন হোটেলে যাই। আপনার বিশ্রাম দরকার। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে।

--আমার এখনই হোটেলে যেতে ইচ্ছা করছেনা অর্ক। আসুন না কোথাও বসে কিছুক্ষন গল্প করি।

--তাহলে তো খুবই ভালো হয়। আপনার সাথে এখন পর্যন্ত তো কাজের বাইরে তেমন কোনো কথাই বলা হয়নি। এই সুযোগে আপনার সাথে জমিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়া যাবে।

--হুম আমার ও খুব ভালো লাগবে আপনার সাথে আড্ডা দিতে। ইউ নো ওয়ান থিং অর্ক...আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আড্ডাই দিতে পারেন না।

--হাহাহাহাহা। আপনি বোধ হয় আমাকে একটু বেশিই বোরিং ভাবেন, তাই না?

অনেকক্ষন ধরে আড্ডা চলছে ওদের মধ্যে। সিমিন তার প্রবাস জীবনের কিছু মজার ও তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করল অর্কের সাথে। এদিকে অর্কও নীলার সাথে তার প্রথম পরিচয়, প্রেম অতঃপর বিয়ের ঘটনা গুলো শেয়ার করল।

--নীলাকে খুব খুব ভালোবাসেন, তাই না অর্ক?

--হ্যা অনেক ভালোবাসি। তবে আমার মনে হয় নীলা আমাকে তার চেয়েও কয়েকশগুন বেশী ভালোবাসে।

অর্ক যখন হেসে হেসে এসব কথা বলছিল, প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল সিমিনের। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বুক ফাটিয়ে কিছুক্ষন কাঁদতে। নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রন করল সিমিন। ভালোবাসা মানুষকে এত কষ্ট দেয় কেন?

--আপনার কথাও কিছু বলেন সিমিন। আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?

অর্কের কথা শুনে প্রথমে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সিমিন। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। আসলে কি-ই বা বলবে সে? উত্তরে শুধুই একটা মুচকি হাসি দিল।

--মিস সিমিন আপনি কি জানেন আপনি কতটা সুন্দর? আপনার মত রুপবতী নারী আমি আমার জীবনে দেখিনি। আপনি শুধু দেখতেই সুন্দর না...আপনার মত এত অমায়িক, এত ভদ্র, এত মিষ্টি যে কোনো মেয়ে হতে পারে আমার জানা ছিল না। আপনি যাকে ভালোবাসবেন নিঃসন্দেহে সে হবে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান পুরুষ।

-- একটা কথা জানেন মিঃ অর্ক, আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না আমি কতটা দুঃখী...কতটা অভাগী একটা মেয়ে!

--এভাবে বলছেন কেন সিমিন? আপনার কেন এত দুঃখ?

--আপনাকে বলতে পারবনা অর্ক। বললে আপনি আমাকে খুব খারাপ ভাববেন। ঘৃনা করবেন আমাকে।

--আমি আপনাকে ঘৃনা করবনা। কোনো মানুষের পক্ষে আপনাকে ঘৃনা করা সম্ভব না। আমাকে আপনার দুঃখের কথা খুলে বলুন সিমিন। দেখবেন আপনার অনেক হাল্কা লাগবে।

--মিঃ অর্ক আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন। কথাটা বলার পর নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারল না সিমিন। চিৎকার করে কেঁদে উঠল।

অর্ক পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল সে একটা গাছ হয়ে গেছে। সিমিন মেয়েটা পাগলের মত কাঁদছে অথচ একটা বারের মত সান্ত্বনা দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু মনে মনে বলল, হে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমাকে এতটা অক্ষম করে কেন পাঠালে?


সিমিনকে হোটেলে নিয়ে এল অর্ক। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক সে। ভিতরে জমে থাকা তীব্র যন্ত্রনা প্রতিটি মূহুর্তে মৃত্যর স্বাদ দিচ্ছিল সিমিনকে। এখন নিজেকে অনেকটাই হাল্কা লাগছে ওর।

--আমি আপনার পাশের রুমেই আছি সিমিন। কোনো সমস্যা হলে আমাকে নক করবেন।

--আপনি কি আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবেন অর্ক?

--আপনি তো কোনো অপরাধ করেননি সিমিন। কেনো ক্ষমা চাচ্ছেন?

--আমি তো মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলেছি অর্ক। আপনাকে ভালোবাসার কোনো অধিকার আমার নেই তারপরও আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

--ভালোবাসা তো কোনো অপরাধ নয় সিমিন। মানুষ তো জেনে বুঝে, হিসেব নিকেশ করে ভালোবাসতে পারেনা। ভালোবাসা হয়ে যায়। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। আপনার ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। যদি থাকত, আমি আপনাকে এত বেশী ভালোবাসতাম যে আপনি কোনোদিন ভালোবাসার একবিন্দু অভাব অনুভব করতেন না। কিন্তু আমি নিরুপায়।

অর্কের কাছে এত সুন্দর উত্তর সপ্নেও আশা করেনি সিমিন। অর্ক এত ভালো কেনো? সিমিনের খুব ইচ্ছে করে যদি একটি রাত...একটি মাত্র রাত অর্ককে তার বুকে জড়িয়ে রাখতে পারত!

--অর্ক আমি শেষবারের মত আপনার কাছে একটা জিনিস চাইব। কথা দিলাম এই জীবনে আর কোনোদিন আপনার কাছে কোনো আবদার করব না। দেবেন আমাকে?

--আমাকে প্লিজ আর ছোট করবেন না সিমিন। বলুন কি চান আপনি?

--আমাকে কি একটি বারের মত আপনার হাতটা ছুঁয়ে দেখতে দেবেন?

অর্ক সিমিনের পাশে বসে একটা হাত ওর কোলে রাখলো। সিমিনের প্রতি অদ্ভুত একটা আকর্ষন অনুভব করছে অর্ক। অত্যন্ত ভয়াবহ সে আকর্ষন। প্রচন্ড আবেগে সিমিনকে বুকে জড়িয়ে নিল অর্ক। সিমিনও অর্ককে বুকে জড়িয়ে গভীর ভাবে চুমু খেতে লাগল। অর্ককে বুকে পেয়ে সিমিনের মনে হচ্ছিল যেন সে স্বর্গ পেয়ে গেছে! কিন্তু অর্কের বুকে তো সারাজীবনের জন্য আশ্রয় পাবেনা সিমিন! কিভাবে বাচবে সে অর্ককে ছাড়া??

--তুমি কেন আমার জীবনে আরো আগে আসলে না অর্ক? কেনো এতটা কাছে পেয়েও তোমাকে আমার আজ হারাতে হবে? কেনো??

অর্ক কোনো জবাব দিতে পারেনা। কি জবাব দিবে সে? এই প্রশ্নের কি কোনো জবাব আছে আসলে? প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল অর্কের। বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সিমিনকে দেখতে পেলনা অর্ক। পাগলের মত এদিক সেদিক খোজাখোজি করতে লাগল। কোথায় গেল সিমিন? প্রচন্ড অস্থির লাগছিল অর্কের। সিমিনের মোবাইলে ফোন করেও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা থেকে যে গাড়ীটি তারা নিয়ে এসেছিল সেটিও উধাও। হোটেলের ম্যানেজারকে ব্যাপারটা খুলে বলার পর সে জানালো যে, সিমিন একদম ভোরের দিকে গাড়ী নিয়ে একাই বেড়িয়ে গেছে। অস্থিরতা ভয়ংকরভাবে গ্রাস করল অর্ককে। হাত পা কাঁপতে লাগল। অর্কের সিক্সথ সেন্স প্রচন্ড সার্প। তার কেবলই মনে হচ্ছিল ভয়াবহ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। হঠাত শার্টের বুক পকেটে চিরকুটের মত কিছু একটা দেখতে পেল। নিশ্চিত হল যে সেটা সিমিনের চিরকুট।

চিরকুট লেখা ছিলঃ “অর্ক, তোমাকে ছাড়া আমার এই জীবন প্রচন্ড অর্থহীন মনে হচ্ছে। তোমাকে ছাড়া আর একটি মুহুর্তও আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আজকে টিভিতে আমার ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখাবে। তুমি প্লিজ আজকে কোনো খবর দেখো না! আমার ক্ষত বিক্ষত শরীরটা দেখলে তোমার খুব কষ্ট লাগবে জানি। আর নীলা খুব ভালো মেয়ে। তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ওর মনে কোনোদিন কষ্ট দিও না। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। এই জীবনে তোমাকে পেলাম না...তাতে কি! এরপর প্রতিটি জীবনে তুমি আমারই হবা...শুধু আমারই”!!






সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১১ রাত ১০:৩৯
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×