সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর আত্মজৈবনিক রচনা - '' আমি ''
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
একটি কিশোরীকে হকচকিয়ে দেবার জন্য আমার জীবনের প্রথম কবিতাটি ডাকে পাঠিয়েছিলাম সাপ্তাহিক 'দেশ' পত্রিকায় এবং কী আশ্চর্য, ছাপাও হয়ে গিয়েছিল!
সেই সদ্য স্কুল-উত্তীর্ণ বয়সে আমার সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য তেমন আগ্রহ ছিল না। আমি ছিলাম বুভুক্ষু পাঠক এবং সুচতুর বইচোর, নিজে কখনও গ্রন্থ রচনা করব, এমন স্বপ্নেও ভাবিনি। কলেজে এসে কয়েকজন সহপাঠী ও বন্ধুকে দেখেছি কবিতা লেখার জন্য তারা অন্যদের কাছ থেকে কিছুটা খাতির পায়, তখন আমার মনে হয়েছিল, ও আর এমন কী শক্ত কাজ। আমিও পারি। কবিতা লিখে কফি হাউসের বন্ধুদের কাছে পাঠ করে বাহবা পেলেও তা কবি হিসেবে স্বীকৃতি পাবার মাপকাঠি ছিল না। তখন বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'কবিতা' পত্রিকায় মনোনয়নই ছিল সসম্মান স্বীকৃতি এবং সেখানে পাঠানো আমার প্রথম কবিতাই অল্পকালের মধ্যে মুদ্রিত হয়ে যায়। তারপর আর কবিতা থেকে সরে যাবার উপায় রইল না।
'দেশ' পত্রিকাতে কবিতা ছাপা হলেও, তাতে বিশেষ সম্মান ছিল না সে সময়। কারণ মুড়ি, পচা নারকেল ও মিছরির মতো কবিতাগুলো ভালো, মন্দ ও খুব খারাপের সংমিশ্রণ। সাগরময় ঘোষের সঙ্গে আমার মতো কয়েকজন অতি তরুণ লেখকের আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হবার ফলেই 'দেশ' পত্রিকায় কবিতা পায় সম্মানের আসন। আমরা প্রায়ই ফিসফিস করে সাগরময় ঘোষকে অনুরোধ করতাম, সাগরদা আপনি কবিতার জন্য আলাদা পাতা বরাদ্দ করুন! সাগরদা মেনে নিলেন। আলাদা কবিতার পাতা তো দিলেনই, কবিতার জন্য সম্মানদক্ষিণাও প্রবর্তিত হলো। সাগরময় ঘোষ প্রবাদতুল্য সম্পাদক, বহু বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও প্রখর দৃষ্টি, কিন্তু কবিতা বিচারের ব্যাপারে ছিলেন সংকুচিত, নির্বাচনের ভার দিতেন অন্যদের। যেমন আমি নিজেই অন্তত তিরিশ-পঁয়তিরিশ বছর 'দেশ' পত্রিকায় কবিতা নির্বাচন করেছি। আমার আগে ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কিছুদিনের মতো আনন্দ বাগচী, এখন যেমন জয় গোস্বামী। গদ্যের জগতে আকস্মিক প্রবেশের পর আমি আর ছুটি পাইনি। আমার প্রথম উপন্যাস 'আত্মপ্রকাশ'-এর আগে আমি 'দেশ'-এ একটিও ছোটগল্প লিখিনি। কিন্তু নিবন্ধ, রম্যরচনা লিখেছি বেশ কিছু, নীললোহিত ও সনাতন পাঠক নামে।
এছাড়া গ্রন্থ সমালোচনা, কখনও-সখনও ফিল্ম ও নাট্য-সমালোচনা। পরে এমনও হয়েছে, 'দেশ' পত্রিকার কোনো একটি সংখ্যায় আমার চারটি রচনা বেরিয়েছে, যেমন ধারাবাহিক উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, পুস্তক সমালোচনা। সম্পাদকীয় রচনা ধরলে আরও একটি। 'দেশ'-এর মুদ্রণ পদ্ধতিরও কত পরিবর্তন হয়েছে। আমি 'দেশ' পত্রিকার পাঠক থেকে লেখক হয়ে গেছি। এমনকি কবিতা বিভাগটি দেখাশোনা করছি। কিন্তু আমার চাকরিক্ষেত্র ছিল আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ। তখন আনন্দবাজারের সর্বেসর্বা সন্তোষকুমার ঘোষ। আনন্দবাজার সংস্থার সম্প্রসারণের জন্য এঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এক সময় তিনি পরিকল্পনা করলেন, এই সংস্থা থেকে একটি সাহিত্য মাসিকও প্রকাশিত হবে, তার নাম তিনিই দিলেন, 'সানন্দা'। সে পত্রিকার প্রস্তুতি চলল। সন্তোষকুমার ঠিক করলেন, আমাকে আনন্দবাজার থেকে সরিয়ে এই নতুন পত্রিকায় স্থাপন করা হবে। সন্তোষকুমারই নেতা সম্পাদক, আমি তাঁর উপ-সহায়ক। সাগরময় ঘোষের সঙ্গে সন্তোষকুমার ঘোষের মৌখিক সুসম্পর্ক থাকলেও ভেতরে ভেতরে যে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধ চালু ছিল তা আমরা জানতাম। আমি সন্তোষকুমারের সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই সময় একদিন সাগরদা আমাকে ডেকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, তুমি ওই নতুন কাগজটায় যোগ দিচ্ছ?
এই প্রশ্নের মধ্যেই প্রোজ্জ্বল তাঁর অভিপ্রায়। সত্যি কথাটাও জানালাম, আমাকে সানন্দার সঙ্গে যোগ দিতে হচ্ছে। সাগরদা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আমি অশোকবাবুকে বলে তোমাকে 'দেশ' পত্রিকায় আনিয়ে নিচ্ছি, তুমি আমার সহকারী হবে! তখন আমাকে উপলক্ষ করে সন্তোষকুমার ও সাগরময়ের মধ্যে ছোটখাটো একটি সংঘর্ষই ঘটে গেল। 'দেশ' পত্রিকার প্রতিই আমার পক্ষপাতিত্ব জেনে সন্তোষকুমার অভিমান ভরে আমার সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন ও নতুন পত্রিকার পরিকল্পনাও মুলতবি রাখেন। আমি অবশ্য পরে সন্তোষকুমারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি এবং 'সানন্দা' পত্রিকাও অন্য রূপ নিয়ে বেরিয়েছে।
['সাহিত্যের কোন শর্ত নেই' গ্রন্থ থেকে]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।