আদিবাসী মায়েরা রাতে শিশুদের পাহাড়ি ড্রাগনের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়; সে অনেককাল আগের কথা, তখন পাহাড়ের গুহায় একটি ড্রাগন বাস করতো, তার মুখ থেকে আগুন বের হত। বম ভাষায় ড্রাগনকে "বগা" বলা হয়। ড্রাগন-দেবতার জন্য লোকেরা গবাদী পশু উৎসর্গ করত; একবার হল কি, কিছু দুষ্টলোক এই ড্রাগন দেবতাকে মেরে ফেলল, পরে দেবতার অভিশাপে পাহাড় পানিতে ডুবে গেল, আর আশেপাশের গ্রামগুলো ভেসে গেল, সেই থেকে হল বগা লেক।
বান্দরবন জেলার বগা লেক বা বগাকাইন হ্রদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার একটি মিষ্টি পানির একটি হ্রদ, বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে, রুমা উপজেলায় নাইতং মৌজার একটি পাহাড়ের চুড়ায় এর অবস্থান। জায়গাটা কেওকারাডং পর্বতের গাঘেষা আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২,০০০ ফুট (কিওক্রাডাং-৩,১৭২ ফুট)।
ভূতাত্ত্বিকগণের মতে কোন মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে এই হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। এর পানি অম্লধর্মী ফলে এতে কোন জলজ উদ্ভিদ জন্মায়না, যদিও লেকের পাড়ের কাছাকাছি কিছু জলজ উদ্ভিদ দেখা যায়।
হ্রদের পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনও ঘোলাটে দেখায়; কারণ হিসেবে মনে করা হয়, এর নিচে একটি প্রস্রবণ রয়েছে, যার পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়।
ছোট্ট বাবুরা মায়েদের গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ে; যদিও উপকথার কোনো বাস্তব প্রমাণ কখনোই পাওয়া যাবেনা, তবুও উপকথার আগুন উদগীরণকারী ড্রাগন এবং হ্রদের জ্বালামুখের মতো গঠন মৃত আগ্নেয়গিরির ধারণাটির সাথে ভাল ভাবেই খাপ যায়।
লেখাটি জলেডাঙ্গা ব্লগে প্রকাশিত।
এখানে বান্দরবনের আরেকটি পোষ্ট ।