বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ, তারা নানা বাড়ী যাবে বলে ট্রেনে উঠিয়ে দিতে গেলোম।
ঘটনা # ১
স্টেশনের বেঞ্চের উপর বসার জায়গায় একটি মেয়ের কোলের উপর মাথা রেখেছে সমবয়সী একটি ছেলে (সম্ভবত তারা কুমিল্লা ভার্সিটির বা অন্যকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের)। মেয়েটি প্রায় ছেলের মাথার কাছে মুখ রেখে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে আর চুলগুলি টেনে দিচ্ছে আরেক সহপাঠীও বেশ উপভোগ করছে। এসব দৃশ্য যদিও আজকাল আধুনিকতার নামে গা সওয়া কিন্তু উচ্চস্বরে খিলখিলিয়ে হাসিতে যে অন্যের বিরক্ত হয় সে বোধটাও আমাদের মাঝে বিলুপ্ত প্রায়। - পাশের এক জন বলেই বসল এদের মধ্যে না হয় আত্মসম্মানবোধ নেই বুঝলাম, পারিবারিক লজ্জাবোধও কি নেই?
ঘটনা # ২
প্লাটফর্মের উপর সকল প্রকার যানবাহন চলা নিষেধ আর সেটি যদি হয় ট্রেন আসার আগ মুহুর্তে তা হলে তো আরো বেশী কঠোর হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে এ জিনিস বা বোধটা আজকাল উঠেই গেছে। যাত্রিতে প্রায় ঠাসা প্লাট ফর্মের উত্তর দিক থেকে কোন এক ভদ্র ঘরের অবৈধ সন্তান হর্ণ দিয়ে জায়গা করে মটর বাইক নিয়ে প্লাট ফর্মের উপর দিয়ে এ মাথা থেকে অন্যমাথায় চলে গেল। আছে সেখানে স্টেশনের কর্মরতরা, আছেন স্টেশন নিরাপ্তাকর্মীরা, সবাই নির্বাক। আমার ৭বছরের দ্বিতীয় বাচ্চাটা প্রশ্নকরল বাবা- ওরা প্লাটফর্মের উপর দিয়ে কেন যাচ্ছে, রাস্তা দিয়ে যেতে পারে না। আমার মনে হল ঠিক একই ধরনের অপরাধে ৬ষ্ট বা ৭ম শ্রেণী তে অধ্যায়নরত অবস্থায় বেশ অপমানিত হয়েছিলাম স্টেশন সিপাহিদের কাছ থেকে। দুপুর টাইমে অন্য রাস্তাটি ভাঙা থাকায় এবং সে সময় স্টেশন একদম ফাঁকা থাকায় স্টেশন প্লাটফর্মের উপর দিয়ে বাইসাইকেল নিয়ে অতিক্রম করতেই মাঝপথে আটকে দেয়। বিস্তর জিঙ্গাসা করার পর - আমি শিক্ষিত হচ্ছি, বাবা সরকারী চাকুরি জীবি, কেন তারা এসব শেখায়নি ইত্যাদি অপমানটা আজও মাথায় আছে। তবুও সেই লোকটিকে শ্রদ্ধাকরি অনন্ত আইনটা শিখেছিলাম তার থেকে।
ঘটনা # ৩
আমরা সকলেই জানি যে মানুষ সমাগত স্থল সহ বেশ কিছু স্থানে ধুমপান নিষিদ্ধি এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। কিন্তু স্টেশনে বা লোক সমাগত স্থানগুলিতেই সেগুলি সবথেকে বেশী এবং আমাদের শিক্ষিত সমাজের দ্বারা এ অপরাধ সংগঠিত হয়।
যা হউক- স্টেশনের কথা না হয় বাদই দিলাম। বাচ্চাদের ট্রেনে তুলে দিয়ে নেমে আসছি ট্রেন থেকে, ২০-২৫বছরের একজন সে বগিতে উঠলেন হাতে সদ্য জ্বালানো সিগারেট। উঠেই সোজা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানদিয়ে নির্বিঘ্নে ধোয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। ট্রেনের এটেনডেস সেখানে দাঁড়িয়ে, তারও ভাবখানা এমন যে আমি সরলেই সেও একটা জ্বালাবে। ট্রেনের নিচে অপেক্ষা করছেন আরেক জন সেও সদ্য সিগারেট ধরিয়েছেন, তারমধ্যে অনন্ত ট্রেনের মধ্যে ধরানোর প্রবণতাটা নেই দেখে ভালো লাগল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১৭