# ১৭/০৮/২৪ তারিখে বেনাপোল এক্সপ্রেসে বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। কেবিনে বোরিং হয়ে যাচ্ছিলাম আর বয়সের ব্যাবধানের আধিক্যের কারনে উপস্থিত অন্য ২জনার সাথে আড্ডাবাজি আলাপের অবস্থাও ছিল না, সাথে বউ আছে তার সাথে আড্ডাবাজি সাংসারিক দ্বণ্ড করতে করতে আসব সে সুযোগও ছিল না কেননা সেটা শোভা পায় না। অন্য দু’জন বর্তমানে মোবাইল আসক্তির ফলে তারা মোবাইলে ডুবে ছিল কিন্তু আমার মোবাইলে ডুবে থাকলে মাথা ব্যাথা করে ও প্রডণ্ড বিরক্ত লাগে। তাই রাজবাড়ী স্টেশন পার হওয়ার পর বাহিরে এসে গেটের সামেনর জায়গটাটাতে দাঁড়ালাম সেখানে উপস্থিত হলেন আমারই মত আরো ২জন, সাথে যোগ হল এটেনডেন্স, হালকা আলাপ চারিতায় বেশ জমে উঠল। সবাই যার যার এলাকার অবস্থান মন খুলে বলে যাচ্ছে। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, কোন দল কেমন এসব এলোপাতারি আলোচনা, বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদে আছে কারা কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠল আড্ডা। কারো মধ্যে কোন উগ্রতা নেই, ভয়ের কোন ছাপ নেই, কথা বলতে গিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে হেচ্ছ না। সবাই কথা বলছে প্রাণ খুলে, কথা বলতে বলতে কোন ফাঁকে ভাঙা স্টেশন পার হয়ে চলে এসেছি বুঝতেই পারি নাই।
# ২০১৬এর শেষের দিকে। ঢাকা থেকে ঈশ্বরদি যাচ্ছিলাম, প্রথম শ্রেণীর বগিতে, সেখানেও আমার বয়সী কিছু লোক সম্ভবত টিচার তারা ৩জন আলাপ করে চলেছে নিজেদের মধ্যে, আড্ডা দিয়ে সময় পার করছে। তাদের এলাকার স্কুল কলেজের অবস্থা নিয়ে। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি, তারা ভদ্রতা ও অন্যের যাতে বিরক্ত না হয় সেটি বজায় রেখেই আলাপ করে যাচ্ছে। সম্ভবত এম মনসুর আলী স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ সামনের ২/৩সিট আগে থেকে একজন তেড়ে আসল, এই আপনারা কি নিয়ে আলোচনা করছেন। এখানে বসে বসে সরকারের বদনাম করছেন কেন? বাড়ি কোথায় আপাদের, কোথায় যাবেন। উপস্থিতি তিনজই বলল তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে তাদের এলাকা নিয়ে, আপনি কেন বাধা দিচ্ছেন আর এখানে সরকারের বিষয় আসছে কেন। এবার শুরু হল খিস্তি খেউর, নিজেকে পরিচয় দিল নোয়াপারা যুবলীগের কোন এক নেতা হিসেবে, তার বিশাল বড় ব্যাবসা আছে, তোরা তো রাজাকার, তোদের পাকিস্থানে পাঠিয়ে দিতে হবে, নানান কথা। যারা আলাপ করছিল তারা নিতান্তই ভদ্রলোক, চুপচাপ রইলেন। একজন অনুরোধ করল ভাই আপনি আপনার সিটে যান, আমরা নিজেরা নিজেদের আলাপ করছি, এবার তার হুমকি আরো বেড়ে গেল। ট্রেন থেকে ফেলে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল তার গলার উচ্চ আওয়াজে, এটেনডেন্স এসে পরিস্থিতি শান্ত করতে তাকে অনুরোধ করে তার সিটে নিয়ে গেল, সেখানে গিয়েও খটখট করতে থাকল।
# ২০১৩সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী, কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাচ্ছি, ৩জনার সিট কিন্তু সেখানে আমি সহ ৪জন হলাম, ৪জন বসা যায় তাই কিছু না বলে বসে পরলাম আমার আসনে, ২জন যুবক ছেলে যাদের টিকেট নেই, অন্যজন অন্য গাড়ির গার্ড তারও টিকেট নেই। তারা ২১শে ফ্রেব্রুয়ারী নিয়ে আলাপ করছে, আমি শুনছি, এক সময় বলল আংকেল আপনি চুপচাপ কিছু বলছেন না, আপনি কী খুশি হতে পারছেন না, আমি আলাপে না জড়াতে বলে উঠলাম, আমার এসব নিয়ে সিকনেস নেই তেমন একটা, কামলা খাটি এটা নিয়েই আমার চিন্তা। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল আপনার তো এদেশে থাকার অধিকার নেই, আপনি পাকিস্থান চলে যান, আমি বললাম কেন? তাদের উত্তর আপনি তো রাজাকার, আমি কিছু বললাম না, মাথা নিচু করে থাকলাম কেননা তত সময়ে বুঝে গেছি তারা হয়তো রাজনৈতিক চাটার দল বা পালিত কুত্তা। তারা গার্ডকে দেখিয়ে বলল এসব লোকও কেবিনে যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা বকবক করে যাচ্ছে, আমি চুপচাপ, গাড়ি চলে আসল আখাউরা, এবার ট্রেনের টিকেটের যাত্রী উঠল, তাদের সিট ছেড়ে দিতে বলল, একজন উঠে গেলেও অন্যজন বলল, আংকেল একটু মেনেজ করে যাই, ৪জন অনায়াসে যাওয়া যায় আর এক কষ্ট করে ৫জন যেতে পারি, কিন্তু যে দু’জন উঠলেন তারা সকারী কর্মকর্তা তাই তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য করল, গার্ড সাহেব অনুরোধ করলেন ভাই চলেন যাই, আল্লাতার বানি শুনিয়ে বসে থাকলেন নিলজ্জের মত। গার্ডও মোটামুটি বয়ষ্ক তাই তারা মেনে নিলেন।
তিনটি ঘটনা সামান্য উদাহরণ মাত্র। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা রাস্তায় জার্নিতে কোরাণ পড়েন, ধর্মীয় বই পড়বেন এটা নিয়েও ভয় পেতে শুরু করেছিল। যা হউক আল্লাহ আবার অনন্ত কথাবলার স্বাধীনতা দিয়েছে, প্রাণ খুলে আড্ডা দেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে, ব্যাপক লুটতরাজের ফলে অর্থনীতি ভেঙে গেছে সেটা গোছাতে সময় লাগবে, কষ্ট হবে জনগনেরও, সে কষ্ট মেনে নিতেও সমস্যা নেই, প্রাণ খুলে কথা বলার স্বাধীনতা তো অনন্ত পেয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮