somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

# প্রাণ খুলে কথা বলার স্বাধীনতা #

২০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

# ১৭/০৮/২৪ তারিখে বেনাপোল এক্সপ্রেসে বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। কেবিনে বোরিং হয়ে যাচ্ছিলাম আর বয়সের ব্যাবধানের আধিক্যের কারনে উপস্থিত অন্য ২জনার সাথে আড্ডাবাজি আলাপের অবস্থাও ছিল না, সাথে বউ আছে তার সাথে আড্ডাবাজি সাংসারিক দ্বণ্ড করতে করতে আসব সে সুযোগও ছিল না কেননা সেটা শোভা পায় না। অন্য দু’জন বর্তমানে মোবাইল আসক্তির ফলে তারা মোবাইলে ডুবে ছিল কিন্তু আমার মোবাইলে ডুবে থাকলে মাথা ব্যাথা করে ও প্রডণ্ড বিরক্ত লাগে। তাই রাজবাড়ী স্টেশন পার হওয়ার পর বাহিরে এসে গেটের সামেনর জায়গটাটাতে দাঁড়ালাম সেখানে উপস্থিত হলেন আমারই মত আরো ২জন, সাথে যোগ হল এটেনডেন্স, হালকা আলাপ চারিতায় বেশ জমে উঠল। সবাই যার যার এলাকার অবস্থান মন খুলে বলে যাচ্ছে। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, কোন দল কেমন এসব এলোপাতারি আলোচনা, বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদে আছে কারা কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠল আড্ডা। কারো মধ্যে কোন উগ্রতা নেই, ভয়ের কোন ছাপ নেই, কথা বলতে গিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে হেচ্ছ না। সবাই কথা বলছে প্রাণ খুলে, কথা বলতে বলতে কোন ফাঁকে ভাঙা স্টেশন পার হয়ে চলে এসেছি বুঝতেই পারি নাই।

# ২০১৬এর শেষের দিকে। ঢাকা থেকে ঈশ্বরদি যাচ্ছিলাম, প্রথম শ্রেণীর বগিতে, সেখানেও আমার বয়সী কিছু লোক সম্ভবত টিচার তারা ৩জন আলাপ করে চলেছে নিজেদের মধ্যে, আড্ডা দিয়ে সময় পার করছে। তাদের এলাকার স্কুল কলেজের অবস্থা নিয়ে। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি, তারা ভদ্রতা ও অন্যের যাতে বিরক্ত না হয় সেটি বজায় রেখেই আলাপ করে যাচ্ছে। সম্ভবত এম মনসুর আলী স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ সামনের ২/৩সিট আগে থেকে একজন তেড়ে আসল, এই আপনারা কি নিয়ে আলোচনা করছেন। এখানে বসে বসে সরকারের বদনাম করছেন কেন? বাড়ি কোথায় আপাদের, কোথায় যাবেন। উপস্থিতি তিনজই বলল তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে তাদের এলাকা নিয়ে, আপনি কেন বাধা দিচ্ছেন আর এখানে সরকারের বিষয় আসছে কেন। এবার শুরু হল খিস্তি খেউর, নিজেকে পরিচয় দিল নোয়াপারা যুবলীগের কোন এক নেতা হিসেবে, তার বিশাল বড় ব্যাবসা আছে, তোরা তো রাজাকার, তোদের পাকিস্থানে পাঠিয়ে দিতে হবে, নানান কথা। যারা আলাপ করছিল তারা নিতান্তই ভদ্রলোক, চুপচাপ রইলেন। একজন অনুরোধ করল ভাই আপনি আপনার সিটে যান, আমরা নিজেরা নিজেদের আলাপ করছি, এবার তার হুমকি আরো বেড়ে গেল। ট্রেন থেকে ফেলে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল তার গলার উচ্চ আওয়াজে, এটেনডেন্স এসে পরিস্থিতি শান্ত করতে তাকে অনুরোধ করে তার সিটে নিয়ে গেল, সেখানে গিয়েও খটখট করতে থাকল।

# ২০১৩সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী, কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাচ্ছি, ৩জনার সিট কিন্তু সেখানে আমি সহ ৪জন হলাম, ৪জন বসা যায় তাই কিছু না বলে বসে পরলাম আমার আসনে, ২জন যুবক ছেলে যাদের টিকেট নেই, অন্যজন অন্য গাড়ির গার্ড তারও টিকেট নেই। তারা ২১শে ফ্রেব্রুয়ারী নিয়ে আলাপ করছে, আমি শুনছি, এক সময় বলল আংকেল আপনি চুপচাপ কিছু বলছেন না, আপনি কী খুশি হতে পারছেন না, আমি আলাপে না জড়াতে বলে উঠলাম, আমার এসব নিয়ে সিকনেস নেই তেমন একটা, কামলা খাটি এটা নিয়েই আমার চিন্তা। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল আপনার তো এদেশে থাকার অধিকার নেই, আপনি পাকিস্থান চলে যান, আমি বললাম কেন? তাদের উত্তর আপনি তো রাজাকার, আমি কিছু বললাম না, মাথা নিচু করে থাকলাম কেননা তত সময়ে বুঝে গেছি তারা হয়তো রাজনৈতিক চাটার দল বা পালিত কুত্তা। তারা গার্ডকে দেখিয়ে বলল এসব লোকও কেবিনে যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা বকবক করে যাচ্ছে, আমি চুপচাপ, গাড়ি চলে আসল আখাউরা, এবার ট্রেনের টিকেটের যাত্রী উঠল, তাদের সিট ছেড়ে দিতে বলল, একজন উঠে গেলেও অন্যজন বলল, আংকেল একটু মেনেজ করে যাই, ৪জন অনায়াসে যাওয়া যায় আর এক কষ্ট করে ৫জন যেতে পারি, কিন্তু যে দু’জন উঠলেন তারা সকারী কর্মকর্তা তাই তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য করল, গার্ড সাহেব অনুরোধ করলেন ভাই চলেন যাই, আল্লাতার বানি শুনিয়ে বসে থাকলেন নিলজ্জের মত। গার্ডও মোটামুটি বয়ষ্ক তাই তারা মেনে নিলেন।

তিনটি ঘটনা সামান্য উদাহরণ মাত্র। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা রাস্তায় জার্নিতে কোরাণ পড়েন, ধর্মীয় বই পড়বেন এটা নিয়েও ভয় পেতে শুরু করেছিল। যা হউক আল্লাহ আবার অনন্ত কথাবলার স্বাধীনতা দিয়েছে, প্রাণ খুলে আড্ডা দেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে, ব্যাপক লুটতরাজের ফলে অর্থনীতি ভেঙে গেছে সেটা গোছাতে সময় লাগবে, কষ্ট হবে জনগনেরও, সে কষ্ট মেনে নিতেও সমস্যা নেই, প্রাণ খুলে কথা বলার স্বাধীনতা তো অনন্ত পেয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সরু চিকেন নেক করিডর সমস্যা এবং সমাধান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭



সরু চিকেন নেক করিডরের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্তের ব্যাপারে ভাবছে ভারত

ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের রেল সংযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাকীত্ব: আত্মার ঘুণপোকা ও আধুনিক সমাজের অদৃশ্য মহামারী

লিখেছেন মি. বিকেল, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫



‘একাকীত্ব’ সাধারণ বিষয় নয়। একা থাকা মানে অজস্র চিন্তার স্রোত মাথায় প্রবাহিত হওয়া। একা থাকা মানে নিজের সাথে থাকা। নিজের চিন্তা ও স্মৃতির সাথে একাকীত্ব আমাদের বেশি করে পরিচয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×