এর মানে কি ? এটা একটা ভেগ কথা।জনগণকে ধোঁকা দিতেই এই বাক্য ব্যবহার হয়।
খুনিশনাক্ত, হত্যাকারীরা মেঘের গলাচেপে ধরেছিল, খুনিশনাক্ত, হত্যাকারীরা মেঘের গলাচেপে ধরেছিল।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এবং খুনিদের সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। এই নির্মম জোড়া খুনের ঘটনায় গতকাল রবিবার বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান। তবে এজাহারে আসামি ও খুনের কারণ অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা বেঁধে দেয়া সময়ের ৩৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
মেঘের গলা চেপে ধরেছিল খুনিরা : পুলিশ ও নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খুনিরা সাগর ও রুনিকে হত্যা করার সময় তাদের একমাত্র পুত্র মাহিন সরওয়ার মেঘের গলা চেপে ধরেছিল। গতকাল থেকে তার গলায় ব্যথা অনুভূত হওয়ায় তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে সে বিষয়টি প্রকাশ করে দেয়। মেঘ জানায়, সে খুনিদের একজনকে চিনেছে। আগেও ঐ খুনিকে মেঘ দেখেছে। তবে পিতা-মাতার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মেঘ কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তার স্বাভাবিক হতে আরো কয়েকদিন লাগতে পারে। সে বর্তমানে ইন্দিরা রোডে নানীর বাসায় রয়েছে।
সাগরের ভগ্নিপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান চৌধুরী জানান, গতকাল বিকাল পাঁচটার দিকে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র রোমান বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করে। এই হত্যা মামলার ব্যাপারে সাগরের মা ও বোনসহ আত্মীয়-স্বজনের সম্মতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
‘খুনি গ্রেফতার না হলে আন্দোলন’
সাগর ও রুনির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেখানে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগর ও রুনির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতকদের গ্রেফতারের দাবি জানান। নইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে নেতৃবৃন্দ সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেন।
ঘটনাস্থলে তদন্ত দল
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, সাংবাদিক সাগর ও রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আর কোন তথ্য বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহরুফ হাসান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি, উত্তর) মাহাবুবুর রহমান ও তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন গতকাল পশ্চিম রাজাবাজারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সাক্ষী সাগর ও রুনির পুত্র মেঘ। তার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু সময় কাটান। রুনির মা ও ভাই-বোনদের সঙ্গেও হত্যাকাণ্ডের নানাদিক নিয়ে তারা আলোচনা করেন।
গাড়ি চালককে জিজ্ঞাসাবাদ
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খুনিরা মেহেরুন রুনির সঙ্গে একই গাড়িতে ওই দিন সন্ধ্যার পর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় আসে। এ কারণে এপার্টমেন্টের দারোয়ানের কাছে রক্ষিত রেজিস্টারে নাম-ঠিকানা লেখা হয়নি। ঐ গাড়ির চালককে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ সব তথ্য জানা যায়। হত্যাকাণ্ডের সময় মেঘ পিতা-মাতার রুমে ছিল। ঐ সময় মেঘ চিত্কার করলে এক খুনি তার গলা চেপে ধরে। হঠাত্ স্তব্ধ হয়ে যায় তার চিত্কার। নিরব দর্শকের মতো সে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখে। সাগরের বাসার নিচের তলার বাসিন্দা নুরুননবী গোঙ্গানি ও লাফালাফির শব্দ শুনে দারোয়ানকে জানিয়েছিলেন। তখন ভোর সাড়ে ৫টা বলে তিনি জানান। হত্যাকাণ্ড রাত ৩টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে সম্পন্ন করে খুনিরা ফজরের আজানের পর বের হয়ে যায় বলে জানা গেছে।
খুনিদের হাতে ১০ লাখ টাকা !
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাগর ২০০৮ এর জুন থেকে ২০১০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত জার্মান বেতার ডয়চে ভেলেতে চাকরি করেন। ২০১০ সালের শেষ দিকে দেশে ফিরে আসেন। ঐ সময় তার আয়ের ১০ লাখ টাকা একটি ব্যাংকে রাখেন। প্রতি মাসে ওই ব্যাংক থেকে ৯ হাজার টাকা পেতেন। দেশে ফিরে চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত সাগর এই টাকা দিয়ে কোন রকমে চলতেন। কিন্তু ছয় মাস আগে রুনির চাপের মুখে সাগর ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে রুনির হাতে দিয়ে দেন। এই ১০ লাখ টাকা খুনিদের হাতে রয়েছে বলে পারিবারিক সূত্র দাবি করেছে।
তদন্তকারী সূত্র জানায়, সাগর জার্মান যাওয়ার সময় রুনির এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। এই ঘনিষ্ঠতা পরবর্তীতে সাগর ও রুনির জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। এটা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কারণ। খুনিদের গ্রেফতারে ডিবি, থানা পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। রুনির মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে খুনিকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, দ্রুত সাংবাদিক সাগর ও রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার এবং রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।সূত্র ইত্তেফাক।