খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি যে ভবনে থাকতেন সে ভবনের গেটের সামনেই নূরু লন্ড্রি। এ লন্ড্রির মালিক আলাউদ্দিন।খুনের পর পরই তাকে ধরে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও এখন তিনি ভর্তি আছেন হাসপাতালে।জবনী কখন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারবে কিনা তা যন্ত্রণা কাতর আলাউদ্দিনকে দেখে মনে হয়না।
সাংবাদিক দম্পতি খুনের তদন্তে এমন অনেকের জীবনেই নেমে এসেছে অভিশাপ।অন্তত ২০ জন শিকার হয়েছেন এমন নির্যাতনের।খুনের ক্লু উদ্ধার ও দায় স্বীকার করাতে এদের ধরে এনে চালানো হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন।অনেককে গ্রেপ্তার না দেখিয়ে আটক রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। জীবনে চরম দুর্ভাগ্য নেমে আসা মানুষগুলোর মধ্যে আরও রয়েছেন রশিদ লজের নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল, হুমায়ুন কবির, সিকিউরিটি ম্যানেজার আবু তাহের, মুন্সীগঞ্জের ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি আল আমিন, মুরাদ হোসেন, কামরাঙ্গীরচরের গাড়িচালক হানিফ হাওলাদার, তার স্ত্রী রুমা বেগম, ধানমন্ডির গাড়িচালক বশির উদ্দিন, গাজীপুরের ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি মিলন, শামীম, সোনারগাঁয়ের মারুফদী গ্রামের আবদুল হালিম ও নুরুল ইসলাম, কলাবাগানের ব্যবসায়ী তানভীর ও উত্তরার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক তৌসিফ।
এদের মধ্যে পলাশ রুদ্র পালসহ বাসার ৩ নিরাপত্তারক্ষীকে লাশ উদ্ধারের দিন আটক করা হয়।জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন।এরপরও হত্যার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না যাওয়ায় আটকের দু’দিন পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।মঙ্গলবার রশিদ লজের এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, এক দফা ছাড়া পাওয়ার পর পলাশকে আবারও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারা নিয়েছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা সঠিকভাবে জানি না।
ঘটনার পর আলাউদ্দিন ধরে নিয়ে যায় ডিবি। চালানো হয় নির্যাতন। গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।স্বজনদের সহায়তায় তিনি ঢাকা ছেড়েছেন।আলাউদ্দিনের পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, তাকে যেভাবে মারা হয়েছে তাতে তিনি আর কোনদিন স্বাভাবিক হতে পারবেন কিনা সন্দেহ। তিনি জানান, ঢাকায় চিকিৎসা দেয়ার পর পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে তাকে এলাকার একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
ঘটনার ১৬ দিন পর মঙ্গলবার সরজমিন ঘটনাস্থল পশ্চিম রাজাবাজারের রশিদ লজে গেলে দেখা যায় ভবনের ভেতরে পুলিশ পাহারা।একজন এসআই’র নেতৃত্বে সেখানে ৪ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ভেতরে যেতে চাইলে দায়িত্বপালনরত এসআই মাহমুদ বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কাউকে ভেতরে যেতে দেয়া যাবে না।
রেজিস্ট্রার বুকে ঘটনার দু’দিন আগে থেকে দু’দিন পর পর্যন্ত কাদের নাম এন্ট্রি আছে তা দেখতে চাইলে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী বলেন, পুরনো খাতা এখানে নেই।গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন খাতায় নাম এন্ট্রি করা হচ্ছে। ফ্ল্যাটে বসবাসকারী সব সদস্যকেও এ নিয়ম মানতে হচ্ছে।
৮ দিন ধরে ডিবি কার্যালয়ে আটক রয়েছে ধানমন্ডির এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক হানিফ হাওলাদার।গত বুধবার তাকে ধানমন্ডির ২ নং রোড থেকে আটক করা হয়।মঙ্গলবার ডিবি’র একটি সূত্র জানিয়েছে, হানিফের গাড়িতেই খুনিরা সাগর-রুনির ফ্ল্যাটে গিয়েছিল।মিশন শেষ করে তারা আবার হানিফের গাড়িতে করেই পালিয়ে যায়।এ বিষয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।হানিফ এ অভিযোগ স্বীকার করেছে কিনা জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এর বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।’ ৬ দিন ডিবি কার্যালয়ে ঘোরার পর গত রোববার হানিফের স্ত্রী রুমা বেগমকে ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয়।একদিন আটকে রাখার পর মঙ্গলবার তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রুমার দেবর বেলাল হাওলাদার।তবে ছাড়া পাওয়ার পর রুমা কোথায় আছে তা জানা যায়নি।বেলাল বলেন, ভাবীকে অনেক মারধর করা হয়েছে।তিনি এখন অসুস্থ।কিন্তু আমার ভাইকে ছাড়েনি ডিবি।রুমার মোবাইল ফোনটি ডিবি’র লোকেরা নিয়ে গেছে বলে জানান বেলাল।
আরও আসছে ... নরসিংদীর মেয়র লুকমান হত্যাকান্ড ও সাগর রুনি হত্যাকান্ড দুটির তদন্ত কাজই প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখাশুনা করছেন ও ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছেন।