somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(রি ) । শব্দ দূষন । দায়ী আমরা নিজেরাই ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শব্দ দূষন বা শব্দ সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে বা শুনতে আমাদের ভালো না লাগলেও আমাদের বলতে হবে, শুনতে হবে। ভালোবাসা ও ভালোলাগা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করতে হবে শব্দ দূষনের, শব্দ সন্ত্রাসের। কারন আমাদের শোনার যন্ত্রটিকে তো ঠিক রাখতে হবে। আমার আবাসস্থল ও বিশ্ববিদ্যালয় ধানমন্ডিতে অবস্থিত হওয়ার সুবাদে আমার বেশীরভাগ সময় এখানেই ব্যয় করতে হয়। ধানমন্ডির প্রায় সবকটা রোডে এক বা একাধিক সতর্কবাণী দেওয়া আছে যে ”হর্ণ বাজনো নিষেধ”। কিন্তু এ সতর্কবাণী নিয়ে কারো কোন ধরনের মাথাব্যাথা নেই। এখানে চলে হর্ণ বাজানোর প্রতিযোগিতা। এমন মনে হয় যে হর্ণ বাজানো অলিম্পিকের একটি ইভেন্ট এবং ধানমন্ডি হচ্ছে এই ইভেন্টের অন্যতম প্রধান ভেন্যু। যার যখন ইচ্ছা, যত জোরে ইচ্ছা হর্ণ বাজিয়ে চলছে।
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় একাধিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর কারনে সাত মসজিদ রোড এখন একটি অন্যতম যানজটযুক্ত ও ব্যস্ত রাস্তা হয়ে দাড়িয়েছে। এখানে কেউ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তোয়াক্কা না করেই আপনমনে হর্ণ বাজিয়ে চলে। কিন্তু কেউ এটা মনে রাখেনা যে অপ্রয়োজনীয় হর্ণ বাজানোর কারনে অন্য আরোও দশটা মানুষের সাথে সাথে তার নিজের শ্রবণযন্ত্রেরও বারোটা বেজে যাচ্ছে।

এ তো গেল গাড়ির হর্ণ বাজানোর কথা। এর পাশাপাশি শব্দ দূষনের জন্য আরোও যারা দায়ী তারা হচ্ছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ইট ভাঙ্গার মেশিনসহ যাবতিয় শব্দ দূষন। রাস্তায় দাড়িয়ে যে গরীব লোকটি আখের রস বিক্রি করছে বা যে লোকটি লটারীর টিকিট বিক্রি করছে সেও শব্দ দূষনের সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। এবং তার সাথে বিভিন্ন ধরনের অপ্রয়োজনীয় মাইকিং প্রতিদিন আমাদের শ্রবণ অনুভূুতিকে অসহনীয় করে তুলছে।
আর যদি মিউজিক প্লেয়ারের কথা বলি তাহলে বলে শেষ করা যাবেনা। আজকাল বিয়ে ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানগুলোতে লাইভ কনসার্ট না হলে অনুষ্ঠানের পূর্ণতা আসেনা। এর সঙ্গে নতুনত্ব আনতে যুগের হাওয়ায় তাল মেলাতে যোগ হয়েছে ডিজে পার্টি। কিন্তু আমরা কেউ কি ভেবে দেখেছি আমার বাড়ীতে লাইভ কনসার্ট করার জন্য আগামীকাল একটি ছাত্রের পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। আমার বাড়ীতে ডিজে পাটি করার জন্য হতে পারে কারো ঘুম হারাম, আবার কারো’বা বেচে থাকাটাই হারাম হয়ে যেতে পারে।

আজ যদি আমি শব্দের দূষন ঘটাই তবে আমি শব্দ সন্ত্রাাসী। আমার এই কৃতকর্মের ফল ভোগ করছে বর্তমান প্রজন্ম, আর বধির ও মানসিক বিকারগ্রস্থ আগামী প্রজন্মের জন্য দায়দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। আমি একটু নিরপেক্ষভাবে, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখি কত বড় সর্বনাশ করছি আমি এ জাতির। আমার হাতে অস্থ্র নেই তবুও আমি সন্ত্রসী, আমি কাউকে আঘাত না করেও আমি অপরাধী। আমি শব্দ সন্ত্রাসী।
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (হু) এর মতে, ঢাকায় যেকোন ব্যস্ত রাস্তায় শব্দের তীব্রতা হচ্ছে ৬০ ডেসিবেল থেকে ৮০ ডেসিবেল, লাউডস্পীকারের কারনে শব্দের তীব্রতা ৯০ ডেসিবেল থেকে ১০০ ডেসিবেল, কলকারখানায় শব্দের তীব্রতা ৮০ ডেসিবেল থেকে ৯০ ডেসিবেল, হোটেল, রেস্তোরা বা সিনেমা হলে শব্দের তীব্রতা ৭৫ ডেসিবেল থেকে ৯০ ডেসিবেল, কোন অনুষ্ঠান বা উৎসবে শব্দের তীব্রতা ৮৫ ডেসিবেল থেকে ৯০ ডেসিবেল, স্কুটার বা মোটরসাইকেল এর শব্দের তীব্রতা ৮৭ ডেসিবেল থেকে ৯২ ডেসিবেল এবং ট্রাক ও বাসের শব্দের তীব্রতা ৯২ ডেসিবেল থেকে ৯৪ ডেসিবেল।
কিন্তু আমাদের কাক্সিক্ষত শব্দের তীব্রতা বা সহনীয় শব্দের মাত্রা যা আমাদের ক্ষতির কারন হবেনা এমন শব্দর তীব্রতা হচ্ছে শোবার ঘরে ২৫ ডেসিবেল, ড্রয়িং অথবা ডাইনিং রুমে ৪০ ডেসিবেল, অফিসে ৩৫ থেকে ৪০ ডেসিবেল, ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শ্রেণীকক্ষে, লাইব্রেরীতে ৩৫ থেকে ৪০ ডেসিবেল, হাসপাতালে ২০ থেকে ৪০ ডেসিবেল। শব্দের তীব্রতা এর চেয়ে বেশী হয়ে গেলে শব্দ আর শব্দ থাকেনা তা দূষিত শব্দে পরিণত হয়। সাধারনত ৬০ ডেসিবেল শব্দের তীব্রতায় আমরা সাময়িকভাবে বধির ও ১০০ ডেসিবেল শব্দের তীব্রতায় আমরা স্থায়ী বধির হয়ে যেতে পারি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে শব্দের তীব্রতা মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় দিনের বেলা ৮৩ ডেসিবেল এবং রাতে ৭৯ ডেসিবেল, আজিমপুর গার্লস কলেজ এলাকায় দিনের বেলা ৮০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৭৪ ডেসিবেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিনের বেলা ৮২ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৭৪ ডেসিবেল, শাহীন স্কুল এলাকায় দিনের বেলা ৮৩ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৭৪ ডেসিবেল, ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ স্কুল এলাকায় দিনের বেলা ৮০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৭৫ ডেসিবেল, তেজগাঁও গার্লস কলেজ এলাকায় দিনের বেলা ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৬৭ ডেসিবেল, শিশু হাসপাতাল এলাকায় দিনের বেলা ৭২ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৬৯ ডেসিবেল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দিনের বেলা ৮০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৬৯ ডেসিবেল, মিডফোর্ট হাসপাতাল এলাকায় দিনের বেলা ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৭৩ ডেসিবেল।

উচ্চমাত্রায় শব্দ দূষনের ফলে রাজধানীর মানুষগুলো আজ আক্রান্ত। আমরা অসহায় অসহনীয় শব্দের কাছে। যেকোন মুল্যে এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন এই যে ঘড়রংব ঈড়হঃৎড়ষ জঁষবং,২০০৪ এর যথাযত প্রয়োগ করুন এবং হাইড্রোলিক হর্ণকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করুন তার সাথে সাথে বাসার ছাদে অপ্রয়োজনীয় শব্দের লাইভ কনসাট বন্ধ ঘোষনা করুন। এগুলো শুভস্য শীঘ্রম।
আসুন আমরা শব্দ দূষন সম্পর্কে সচেতন হই এবং নিজেকে শব্দ সন্ত্রাসী হওয়া থেকে বিরত রাখি। এটাই সর্বোত্তম পন্থা।

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×