আপডেট ঃ ১৭-০১-২০১২
কামরুল হাসান জনি স্বীকার করেছেন যে ঝুমা তার বিবাহিতা স্ত্রী। আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে জনিকে নোটিশ পাঠানোর পরে সে সেখানখার আইনজীবিদের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তারপর সে স্বীকার করে সব ঘটনা। এখন দেখা যাক সামনে কি হয়। ধন্যবাদ আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
।একজন ঝুমা । একটি চিঠি । এবং একটি সত্য ঘটনা ।
মেয়েটির নাম ঝুমা, মারুফা খানম ঝুমা।তার স্বামী কামরুল হাসান জনি। দুবছর স্বামী সংসার করার পরও পায়নি সে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি। হয়েছে নিগৃহীত, নির্যাতীত আর হারিয়েছে মাতৃত্ব্যের স্বাধ। সবকিছু মুখবুজে সহ্য করার পরও হয়নি শেষরক্ষা - সে এখন একা। আমাদের মতো দেশেই মনে হয় এটা সম্ভব। প্রায় দুবছর শ্বশুর, শ্বাশুরীসহ স্বামী সংসার করার পরও হঠাৎ একটি মেয়েকে শুনতে হয় তার বিয়েই হয়নি। ঝুমার জীবনের কথাগুলো তারই হাতে লেখা একটা চিঠি থেকে আমরা জানব।
চিঠিটা হুবহু এইরকম ঃ-
জনি'র সাথে আমার পরিচয় ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে। আমি তখন অনার্স এ পড়ি এবং সে মেডিকেলে। তারপর ২০০৯ সালের মার্চ মাসে আমরা বিয়ে করি। ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে, রেজিস্ট্রি ছাড়া। সে সময় সে স্টুডেন্ট ছিল তাই রেজিস্ট্রি করার মত কোন টাকা তার কাছে ছিলনা। সে আমাকে বলেছিল তুমি আল্লাহকে বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ঠকাবো না। আমাদের বিয়ে হয় আজিমপুর ছাপড়া মসজিদে।
ঝুমা এবং ঝুমার স্বামী কামরুল হাসান জনি
তারপর আমরা আজিমপুর কলোনিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম আর সে সময় আমি প্রেগনেন্ট হয়ে পরি। তখন থেকেই শুরু হয় আমার উপর অত্যাচার। বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য আমার উপর প্রেসার দিতে থাকে। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে অনেক মারধর করত। এভাবে তিনমাস চলে যায়। সে বলত এই বাচ্চা হলে সে স্বীকার করবেনা। এর মাঝে আমাদের বাসা বদল করতে হয়। কাজলাতে আমার এক ক্লাসমেট এর বাসা ভাড়া নেই। ঐ বাসাতেই জনি'র মা আমাকে প্রথম দেখতে আসে এবং এর পর থেকে নিয়মিত আসতে থাকে। জনি এবং তার মা আমাকে জোর করে নিয়ে যায় চাংখারপুল জেনারেল হসপিটালে এবরসন করাতে। ২০০৯ সালের জুন মাসের ৬ তারিখ হয় আমার এবরসন।
তারপর আবারো আমাদের বাসা বদল করতে হয়। আমরা বাসা ভাড়া নেই তার মেডিকেল এর পাশে হোসেনিদালানে। সেখানেও আমার স্বামী আমার উপর অনেক অত্যাচার করত।
তারপর ২০০৯ সালের রমজান এর ঈদে আমাকে প্রথম জনিদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শুরু হয় আমার উপর নতুন করে অত্যাচার। শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার। বাসায় কোন গেষ্ট আসলে আমাকে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হত। পাশের বাসার কেউ প্রশ্ন করলে বলত তাদের আত্মিয়া। আমাকে যখন মারতো আমি কান্না করলে আমার বাবা, মা এবং কাকা কে ফোন করে শুনানো হত আর বলত মেয়েকে জীবিত চাইলে নিয়ে যা। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৩ তারিখ আমার স্বামী এবং শ্বাশুরী আমাকে এত মারে এত মারে যে আমি অসুস্থ হয়ে পরি। তারা আমাকে সে অবস্থায় বাসা থেকে বের করে দেয়। আমি আমার বাবার বাসায় চলে আসি। তার এক মাস পর সে আমাকে আবার তাদের বাসায় নিয়ে যায়। তখন প্রতি রাতে আমার শ্বাশুরী আমাকে মারধোর করত পিল খাওয়ার জন্য। কোন এক মাসে আমার পিড়িয়ড তিন দিন দেড়ী হওয়ায় তারা আমার উপর অনেক অত্যাচার করে। তারা ভেবেছিল আমি আবারও প্রেগনেন্ট হয়ে গিয়েছি। আমার শ্বাশুরী জনিকে তার বাবাকে (আমার শ্বশুর - প্যারালাইসড) ছুয়ে কসম করতে বাধ্য করে যে বাচ্চা হলে যেন সে স্বীকার না করে।
আমার কাকা তাদের মহল্লার পঞ্ঝায়েতে নালিস করলে আমার শ্বাশুরী নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটা রেখে রেজিষ্ট্র করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরে আর তা করে না। আমি যখন আমার স্বামীকে রেজিষ্ট্র করার কথা বলতাম তখন সে বলত আগে আমি ডাক্তার হই তারপর সব করব। একবার আমি তাদের মার খেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পরলে ট্রিটমেন্ট করার টাকা না দিয়ে বলত ম্যনেজ করতে। আমার পরিক্ষা দিতে যাওয়ার টাকাও দিতনা কিন্তু আমার স্বামীকে টাকা দেওয়া হত অন্য মেয়েদের সাথে মজা করার জন্য।
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে আমি ভীষন অসুস্থ হয়ে পরলে আমাকে আমার বাবার বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকে আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করা হয়না। আমার স্বামী আমাদের বাসায় এসে থাকতো মাঝে মাঝে তাও আবার লুকিয়ে। তার কন্ডিশন ছিল তার বাসায় জানানো যাবেনা। সে বলত নতুন বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে সে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করে না। আমি ফোন দিলে আমাকে বলে তার এক ক্লাসমেট এর সাথে তার সম্পর্ক হয় এবং ঐ মেয়েকে সে বিয়ে করবে। আমাকে নাকি সে বিয়ে করেনি কারন আমাদের বিয়ের কোন ডকুমেন্ট নেই।
আমার স্বামী আমাকে বলে 'তুমি আমার কিছুই করতে পারবে না, আমি তোমাকে চিনি না' - তখন আমার শুধু্ই কান্না পায়। সে বলত ঝুমা আমি তোমার সাথে কখনও বিশ্বাস ঘাতকতা করব না।
পড়লেন তো চিঠিটা- ঝুমার স্বামী যার নামের প্রথমে ডাক্তার তকমাটি লাগিয়েও কি পরিপূর্ণ মানুষ হতে পেরেছে? তার নামের প্রথমে কি মানুষ শব্দটি ব্যবহার করা যায়? কামরুল হাসান জনি যার মেডিকেল আইডি হচ্ছে - 'কে-৬১' ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ফজলে রাব্বি হল।
ঝুমা আজ নিরুপায়। সবাই সবকিছু জানার পরও শুধুমাত্র কাগজি প্রমাণের অভাবে সে হেরে যাচ্ছে। ঝুমার সাথে যা হল তা তার অস্তিত্বের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। জনি ঠিক ঝুমার মতোই আরেকটি মেয়েকে তার লালসার সামগ্রী করতে যাচ্ছে।
আমাদের কি কিছুই করার নেই??? আমরা কি পারিনা ঝুমার মতো মেয়ের পাশে দাড়িয়ে তার অধিকারটুকু আদায় করে দিতে??? আমরা কি পারিনা জনির মতো মানবিকতা বিকৃত একজনের ভালমানষির মুখোষটাকে টেনে খুলে দিতে???
সময় হয়েছে সময়কে বদলে দেবার - আমরাই পারি ঝুমার হয়ে একেকজন জীবন্ত প্রমাণ হয়ে দাড়াতে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ ঝুমার ব্যাপারে ডিটেইল ইনফরমেশন চাইলে মন্তব্যতে লিখুন। এখন ঝুমা আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করছে এবং ঝুমা চায় মিডিয়া তার পাশে থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৫