26 মার্চেই কিছু একটা লিখবো ভাবছিলাম, শরিরটা অনুমতি দিল না । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরবতর্ী প্রজন্মের বিভা্রন্তি এবং পরবতর্ী 35 বছরে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িতদের একটা বিরাট অংশের সর্বাত্মক অধ:পতন সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস সম্পর্কে একধরনের নাস্তি তৈরী হচ্ছে, যেটা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত শত্রুদের জায়গা করে দিচ্ছে । বেশকিছু এই ধরনের পোস্ট এবং তাদেরকে ঘিরে তর্ক-বিতর্ক গুলো খেয়াল করছিলাম । একপক্ষ , যে দিকে আছেন ''মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী'' বলে পরিচিতরা, সেদিকের মূল সমস্যা হচ্ছে ধমর্ান্ধতা জনিত দার্শনিক বিভ্রান্তি আর যেটার প্রভাব সবচাইতে বেশী, পারিপার্শিকতাকে ছাপিয়ে যুক্তির লড়াই চালাবার অক্ষমতা ; অন্যপক্ষে ''মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তি''র (কারো কারো সকলের নয় ) ধমর্ান্ধতার সমস্যা না থাকলেও যুক্তির লড়াই চালাবার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে । তর্কের টেবিলে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা বড় ধরনের অযোগ্যতা বৈকি । ব্যাক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে এই জাতীয় ঘাটতির প্রথম ধাপ ।
আমার আগের একটা পোস্ট ''ইতিহাসে ব্যক্তির ভুমিকা এবং শেখ মুজিব '' এ যে শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, তারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করে নি । করেছে দরিদ্র কৃষক । রাজাকারদের মধ্যে দরিদ্র কৃষকদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য, আর আল বদর বাহিনিতে শুণ্য । শান্তি কমিটিতে ছিলো ব্যতিক্রমহীন ভাবে জোতদার মহাজন শ্রেণীর অংশগ্রহণ । ট্রেড ইউনিয়ন গুলিতে তখনও কমিউনিস্ট পার্টির একচেটিয়া । সুতরাং সমগ্র মেহনতি মানুষের সক্রিয় সমর্থন ছিল মুক্তিযুদ্ধে । সংশয় যা দেখার দেখেছি মধ্যবিত্তের মধ্যেই । অনেকেই বিকল্প চিন্তা করছিলেন , ভয়ে ছিলেন । মুক্তিবাহিনিতে যাতে ছাত্র ইউনিয়ন আর কমিউনিস্ট পার্টির কেউ যোগ না দিতে পারে সে জন্য আওয়ামী লীগ আলাদা নজরদারির ব্যবস্থা করেছিল । শ্রমজীবি মানুষের অংশগ্রহণই তাদের প্রধঅণ ভয়ের কারণ ছিল । কিন্তু ততদিনে প্রচুর বামপন্থী মুক্তিবাহিনিতে যোগ দেওয়ায় পরবতর্ীতে মুজিব বাহিনি গঠন করা হয় । শ্রমজীবি মানুষের মুক্তিযুদ্ধে ব্যপক অংশগ্রহণ এবং চিহ্নিত-প্রমাণিত গণশত্রুদের শান্তি কমিটিতে যোগদান থেকে কি প্রমাণিত হয় ? মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বে যারা ছিলেন, এই চেতনা ধারনের যোগ্যতা , ভদ্রভাবে বলতে গেলে প্রস্তুতি তাদের ছিল না । পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করার পরে তাই দেখা যায় তৃণমূল পযর্ায়ে সেই পুরোন জোতদার-মহাজনদের প্রত্যাবর্তন , মতাসীন আওয়ামী লীগের খুঁটি হয়ে ওঠেন তারা বছর খানেকের মধ্যেই । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাই আওয়ামী লীগের জন্য বিপজ্জনক ছিল । শেখ মুজিব এই কারণে সেই সময় একধরণের পপুলিস্ট স্টান্টিং এর আশ্রয় নেন । সাধারণ ক্ষমাকে মুজিবের মহত্ব বলে প্রমাণের চেষ্টা নির্লজ্জ দালালি ছাড়া আর কিছু নয় ।
মুক্তিযুদ্ধ তাই অসমাপ্ত । আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ বলি না । মুক্তিযুদ্ধ বলি । কেন বলি ? কারণ বাংলাদেশের সরকারি নাম এখনও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । যারা সংবিধানে কাটাছেড়া করে 'মুক্তিযুদ্ধ'কে 'স্বাধীনতা যুদ্ধ' করেছেন তারা অর্ধশিক্ষাজনিত কারণে বাংলাদেশের অফিশিয়াল নামটি বদলাতে ভুলে গেছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০০৬ ভোর ৬:০৬