অনেক দিন পরে ব্লগে ফিরলাম । দৌহিত্রের কম্পিউটারটি কাজ করছিল না। আর ঢাকাবাসীরা লোড শেডিং পরিস্থিতি তো জানেনই । এর মধ্যে মাঝে মধে দু-এক ঝলক পড়েছি। তবে নিয়মিত নয় । তর্কের বদলে গালাগালিতে পরিবেশ কিছুটা ভারী হয়ে এসেছিল মাঝখানে ।তবে যে ব্যাপারটা একেবারেই ভালো লাগছে না তা হলো, ব্লগটি এমনভাবে পক্ষ-বিপক্ষে বিভক্ত হয়েছে যে একপক্ষ অপরপক্ষের লেখা পড়ছে না । এটা খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা ।
যাই হোক জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এই ব্লগে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটা বাদে বাকি গুলো , বিশেষত জামায়াতের সমর্থকদের লেখা গুলো মারাত্মক রকমের একপেশে । বিশেষ করে ইতিহাস প্রসঙ্গে খোলাখুলি আলোচনার সৎসাহস তাদের মধ্যে দেখিনি ।সবচাইতে অদ্ভুত কাজটি তারা করেন , আক্রান্ত হওয়া মাত্র আক্রমণকারীকে আওয়ামী লীগার হিসেবে চিহ্নিত করেন । এতে মূল প্রসঙ্গ ঢাকা পড়ে যায় । আওয়ামী লীগ যদি জামাতের প্রকৃত শত্রু হতো তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো ।
আমার স্পষ্ট মনে আছে জামাত হালাল হবার পরে এক সাংবাদিক সম্বেলনে সদ্য কারামুক্ত আব্বাস আলী খান বলেছিলেন ,'' আওয়ামী লীগ আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্্বন্দি, এবং কমিউনিস্টরা আমাদের শত্রু'' । কথাটার অর্থ অনেক অনেক গভীর । পলিটিক্যাল ইসলামের যে দোহাই জামাতের তাত্তি্বকরা দিয়ে থাকেন , কথাটির সাথে তার বিরোধীতা প্রকট । কারণ ইসলামী বিপ্লব বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব যদি থেকেও থাকে , তার লক্ষ্য হবার কথা পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ, কমিউনিস্টদের সঙ্গে সে দিক থেকে তাদের সুসম্পর্কই থাকার কথা । আল্লামা ইকবাল যেমন বলেছিলেন কমিউনিজম+আল্লাহ= ইসলাম ।যারা এম.এন.রায়ের ''ইসলামের ঐতিহাসিক ভুমিকা'' বইটি পড়েছেন তারা বিষয়টি আরও ভালো বুঝবেন ।কিন্তু আমার জানা ইতিহাসে জামাতের কোন ভুমিকা দেখতে পাই? বরাবরই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্লজ্জ দালালি এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদের খতমের চেষ্টা । 14 ডিসেম্বরের শহীদদের রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে ।
আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝি, বুজের্ায়া বিপ্লব ধর্মবিরোধী অবস্থান সত্ত্বেও কিছুকাল পরে রাজনীতিতে অভিনব কায়দায় ধর্মকে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক আন্দোলনকে দিকভ্রান্ত করা। এই কৌশল ব্যর্থ হলে , বিশেষত: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আন্তজর্াতিক পুঁজিপতিরা কমিউনিস্ট ঠাঙানোর উদ্দেশ্যে ধমর্ীয় মৌলবাদীদের তৈরী করেন । উদ্দেশ্যের এবং কর্মপন্থার দিক থেকে এরা নাৎসীদের সমগোত্রীয় । জামাতকে তাই ইসলামী মৌলবাদী বলতে আমার আপত্তি আছে । আমার মতে তাদেরকে ধর্ম-ব্যবসায়ী ফ্যাসিস্ট বলাই শ্রেয় ।
আমার বিশ্লেষণে যে জায়গায় আমার মতে একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে, আমি অর্থদাতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে হাইলাইট করে সংগঠণের চরিত্র নির্নয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে অর্থদাতার টোপে বিভ্রান্ত ধমর্ান্ধ কমর্ীদের ''বিশ্বাস''কে এবং তার উৎস অনুসন্ধানের দিকটিকে অনুল্লেখিত রাখছি । এটা আসলে আমার রাজনৈতিক বিশ্বাসের উপর রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের প্রভাবের কুফল ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে জামাতের রাজনৈতিক ভুমিকা কি? তাদের মনে কোন গূঢ় পরিকল্পনা আছে তা তো আর আমি জানি না । যা জানি তা হলো তথ্য-অভিজ্ঞতা থেকে যা বোঝা যায় । আমি দেখতে পাচ্ছি তারা আওয়ামী লীগ-বি.এন.পি.র সঙ্গে মিলিত ভাবে গণধর্ষণে সামিল । একেকবার ক্ষমতার একেকটি খুটির সাথে চামচামি সুলভ মাখামাখি ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০