somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭৪ সালে আওয়ামীলীগ আমলে রক্ষীবাহিনীর বর্বরতার নমুনা

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমার সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করলো। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল- মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলবো। আমি কি তা পারি? আমি যে বাপ। কিন্তু অত্যাচার কতক্ষণ আর সহ্য করা যায়। সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে ছেলের মাথা কেটে দিয়েছি।"

১৯৭৪ সালে আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামীলীগ সৃষ্ট রক্ষীবাহিনীর বর্বরতার নমুনা দিতে গিয়ে আহমদ মুসার "ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামীলীগ" থেকে নেয়া আব্দুল আলীর সাক্ষাৎকার (পৃঃ ৬৭-৬৮)

বাজিতপুরের কিশোরগঞ্জের কোরাটিয়া গ্রামের আর একটি ঘটনা। কৃষক আব্দুল আলীর ছেলে রশীদকে কিভাবে খুন করা হয় সেটা আবদুল আলীর মুখ থেকেই শুনুন: আমার সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল, মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলবো, আমি কি তা পারি! আমি যে বাপ। কিন্তু অকথ্য নির্যাতন কতক্ষণ আর সহ্য করা যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে ছেলের মাথা কেটে দিয়েছি। রশীদ নাকি রাজনীতি করত, আমি জানতাম না। একদিন মাতু আর শাহজাহান এসে ধরে নিয়ে গেল। আওয়ামী লীগ অফিসে সারারাত ওরা ওকে বেদম মার মারল। সকালে বলল এক হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। রশীদ স্বীকার করে এল এক হাজার টাকা দেবার কথা। আমার কাছে টাকা চাইল। কিন্তু আমি দিন আনি দিন খাই, মজুর মানুষ। হঠাৎ তিন দিনের মধ্যে এক হাজার টাকা কোত্থেকে দেব? বললাম, তুই বরং পালিয়ে সিলেট চলে যা। রশীদ সিলেট চলে গেল। কিন্তু ১০-১২ দিন পর ফিরে এসে বলল, বাবা মন মানে না তোমাদের ফেলে থাকতে। সিলেট থেকে ফেরার পরই কঠিন অসুখে পড়ল। টাইফয়েড। অসুখ সারার পর একদিন তার মাকে বলল মা আজ ভাত খাব। তার মা শৈলমাছ দিয়ে তরকারী রান্না করল। এমন সময় আওয়ামী লীগের পান্ডারা রক্ষীবাহিনীসহ বাড়ি ঘেরাও করল। অসুস্থ মানুষ। কোনো রকমে বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে দৌড় দিলো। বাবা আমার জানত না সেখানেও ঘাপটি মেরে বসে আছে আজরাইল। পাষন্ডরা দৌড়ে এসে ধরল তাকে। রশীদ সিরাজের পা ধরে বলল, সিরাজ ভাই, বিমারী মানুষ আমায় ছেড়ে দেন। ছাড়ল না। তারপর বাপ-বেটা দুজনকেই বেঁধে মার শুরু করল। কত হাতে পায়ে ধরলাম। এরপর মাতু গুলি করল রশীদকে। ঢলে পড়ল রশীদ। আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম। মরার পর একজন বলল, চল ওর কল্লাটা নিয়ে যাই ফুটবল খেলব। মাতু বলল হ্যাঁ। তাই নেব। তবে ওর কল্লা আমরা কাটব না। তার বাবা কেটে দেবে। বলেই আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল কেটে দিতে। আমার মুখে রা নেই। বলে কি পাষন্ডগুলো? চুপ করে আছি দেখে বেদম পেটাতে শুরু করল। বুড়ো মানুষ কতক্ষণ আর সহ্য হয়। সিরাজ এসে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল, এক্ষুনি কাট, নইলে তোকেও গুলি করব। বুঝতে পারলাম, না কাটলে ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। শেষে কুঠার দিয়ে কেটে দিলাম মাথা। নিয়ে সউল্লাসে চলে গেল তারা। আল্লায় কি সহ্য করব? (সূত্র: ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ: আহমেদ মুসা)।

‘মুজিববাদীদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সন্ত্রাসের রাজনীতি, প্রকাশ্য হত্যা, গুপ্ত হত্যা, গুন্ডামি এগুলো ছিল খুবই সাধারণ ব্যাপার। রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পগুলো ছিল হত্যাযজ্ঞের আখড়া। যশোরের কালীগঞ্জ থেকে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প উঠে গেলে সেখানে গণকবর আবিষ্কৃত হয়-যেখানে ৬০টি কঙ্কাল পাওয়া যায়। টঙ্গী থানার সামনে মেশিনগান স্থাপন করে শ্রমিক কলোনীর উপর নির্বিচারে গুলী চালানো হলো। শতাধিক নিহত হলেন। হাজার হাজার শ্রমিক বিশ মাইল হেঁটে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হল এবং তারা তিনদিন তিনরাত পল্টন ময়দানের উন্মুক্ত আকাশের নিচে অবস্থান করতে বাধ্য হল।' (বাম রাজনীতি : সংকট ও সমস্যা' -হায়দার আকবার খান রনো)

রক্ষীবাহিনী গত জানুয়ারীতে এক ময়মনসিংহ জেলাতেই অন্তত এক হাজার ৫শ' কিশোরকে হত্যা করেছে। এদের অনেকেই সিরাজ সিকদারের পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (ইবিসিপি)-এর সদস্য ছিল। অন্যদের মার্কসবাদী ও লেনিনবাদী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। এমনকি অনেক বাঙ্গালী যুবক যারা রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় ছিল না, তারাও এই সন্ত্রাসের অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন... বস্তুত বাংলাদেশে বীভৎসতা ও নিষ্ঠুরতার অভাব নেই।”(ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ : আহমেদ মুসা, পৃষ্ঠা-১৩৬)


লেখা---
Osman Ahmed Sakib
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:২৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×