সুত্র লিখেছে, মঞ্জুরুল হক নান্দাইল উপজেলার কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। থাকেন কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকার একটি বাসায়। কিন্তু তার এ নামটি ঢাকা পড়ে গেছে আরেকটি নামের আড়ালে। বিদ্যালয়ে এমনকি আশপাশের এলাকায় তিনি পরিচিত ‘জিন স্যার’ নামে। জিন স্যার হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি নিজেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ব্যবসায়ে উন্নতি, চাকরি লাভ, প্রেম-বিয়েসহ যে কোন মুশকিল আসানে তিনি তদবির করেন। তার তদবিরের ফলে জিনরা অলৌকিক কেরামতির মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে মুশকিল আসান করে দেন। এমন প্রলোভনের ফাঁদ পেতে ভণ্ডামির মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিন স্যারের কাছে আসা লোকদের মধ্যে অধিকাংশই আসেন প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্যকলহসহ নানা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক গোপন বিষয়ের সমাধানের আশায়। সেক্ষেত্রে কোন কাজ না হলেও প্রতারিত লোকজন মানসম্মানের ভয়ে কারও কাছে এসব বিষয়ে মুখ খোলেন না। আর এ সুযোগ নিয়েই জিন স্যার তার জিন-ব্যবসাকে সমপ্রসারিত করে চলেছেন নতুন নতুন লোকজনের মাঝে।
‘আমার বাসায় সব সময়ই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লোকজন আসেন। বাসায় একটি নিভৃত কক্ষ আছে যেখানে গভীর রাতে আসন পেতে ওনাদের (জিন) ডাকি। তখন ওনারা এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় আমি ওনাদের কাছে যার যে সমস্যা সে সমস্যার তদবির করি। মাঝেমধ্যে ওনারা তাবিজ-কবজ-ওষুধ দেন। তদবিরে সবারই কাজ হয়। আসনের জন্য ১ হাজার ২৫০ টাকা লাগে। এ টাকা দিয়ে তদবির শুরুর পর কাজের ধরন বুঝে লোকজন খুশি হয়ে টাকা-পয়সা দেন।’ এসব কথা বলেই জিন স্যার মঞ্জুরুল হক সমস্যা নিয়ে আসা লোকজনকে তার কাজের ধরন সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি তখন আরও জানান, তার কাছে গেলে প্রেম, বিয়ে, চাকরি, ব্যবসায় সাফল্য থেকে শুরু করে এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান পাওয়া যায় না। এমনকি তার কাছ থেকে ডাক্তার এবং উকিলরা তাবিজ-কবজ নিলে তাদের রোগী আর মোয়াক্কেলের সংখ্যাও বেড়ে যায়। জিনের সহায়তায় এমনই অলৌকিক কেরামতি দিয়ে সবাইকেই সাফল্যের পথ দেখিয়ে দিতে পারেন তিনি। তাই তার কাছে বিপদগ্রস্ত মানুষ সাহায্যের জন্য আসেন। অনেকেই তার জিন সাধনা সম্পর্কে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে অশরীরী অদৃশ্য জিনের হাতে প্রহৃত হয়েছেন। পরে আবার বিশ্বাস স্থাপন করে তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি জানান, এমন এক তাবিজ আছে, যেটি কাঙ্ক্ষিত কোন সুন্দরি মেয়ের বাড়ির কোণে পুঁতে রাখলে আপনা আপনি মেয়েটি ছেলের কাছে চলে আসবে। কোন মেয়ে বাবা-মার অজান্তে কারও হাত ধরে চলে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনাও কোন ব্যাপার নয়- এই জিন স্যারের জন্যে। তিনি এক নিঃশ্বাসে বিভিন্ন এলাকার মানুষদের নাম করে ফিরিস্তি দিতে থাকেন কারা কি কি উপকার পেয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, এসব কৌশলের মাধ্যমে খুব সহজেই ওই ব্যক্তি তার কাছে আসা লোকজনকে বশ করে নেন। আসনের বসার নামে ১ হাজার ২৫০ টাকা আদায় করার পর সমস্যার জটিলতা, গুরুত্ব ও গভীরতা অনুযায়ী ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নিয়ে থাকেন। আর সব টাকাই তিনি জিনের খরচের কথা বলে নেন। কারও কাছে তাৎক্ষণিক পুরো টাকা না থাকলে বাকিতে বা কিছু অগ্রিম নিয়ে তদবির শুরুর কথা বলে নির্ধারিত তারিখে বাকি টাকা দিয়ে যেতে বলেন।
প্রতারিত এক ব্যক্তি জানান, তার স্ত্রী দুই সন্তানসহ রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিল। স্ত্রী-সন্তানকে ফিরিয়ে আনার জন্য জিন স্যারের কাছে গিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ না হলেও ওই টাকা আর ফেরত পাননি তিনি। সমপ্রতি কিশোরগঞ্জ শহরের গৌরাঙ্গবাজারের এক ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্কশপ কর্মচারী একটি কাজের জন্য জিন স্যারকে টাকা দিয়েছিলেন। কোন কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে না পাওয়ায় জিন স্যারকে তিনি লাঞ্ছিত করেন বলেও জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ বছর ধরে জিন ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অনেক নিরীহ মানুষের কাছ থেকে ওই ব্যক্তি মোটা অঙ্কের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন।
৫২ বছর বয়সী জিন স্যার মঞ্জুরুল হক জানান, তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া এলাকায়। চাকরির সূত্রে এর আগে নান্দাইলে অবস্থান করলেও কয়েক বছর ধরে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় থাকেন। তিনি বাসার মালিককে এককালীন ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। ফলে মাসিক ভাড়া দিতে হয় না। আর বাসা ছেড়ে দেয়ার সময় পুরো ৪ লাখ টাকাই তিনি ফেরত পাবেন।
কপিপেস্ট সূত্র: মানবজমিন
Click This Link