somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেরুজালেম, জর্ডান এবং প্যালেস্টাইল ( ইতিহাসের সরল যাত্রা ) পর্ব- ২

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জেরুজালেম, জর্ডান এবং প্যালেস্টাইল ( ইতিহাসের সরল যাত্রা )


২০ জুলাই,১৯৫১। প্রিন্স নায়েফ বিন আব্দুল্লাহ রিজেন্ট হিসেবে জর্দানের দায়িত্ব নিলেন , যতক্ষন পর্যন্ত না তার ভাই ক্রাউন প্রিন্স তালাল সুস্থ হয়ে দেশে না ফিরে আসে । কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্র থেমে নেই , হাশেমাইট ফ্যামিলির ইরাকী ব্রাঞ্চ চাচ্ছিলো যত দ্রুত সম্ভব প্রিন্স নায়েফকে সিংহসনে বসানো হোক । যাতে ইউনাইটেড হাশেমাইট কিংডমের স্বপ্ন যেন পূরন হতে পারে।
সেইসময় জর্দানের সেনাবাহিনী পরিচালনা করতো বৃটিশ সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন বৃটিশ সেনানায়ক জেনারেল স্যার জন ব্যাগট গ্লাব। স্থানীয়ভাবে আরবরা তাকে ডাকতো গ্লাব পাশা নামে । গ্লাব পাশা এবং জর্দানের সেইসময়কার প্রধানমন্ত্রী, প্রিন্স নায়েফকে রাজা বানানোর বিষয়টিকে সমর্থন করছিলেন না । তাদের মাথায় অন্য একটি প্লান কাজ করছিলো এবং তারা এই দীর্ঘমেয়াদি প্লান নিয়ে এগোনোর চিন্তা ভাবনা শুরু করলেন ।এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা ক্রাউন প্রিন্স তালালকে সুস্থ ঘোষনা করে জর্দানে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করলেন। ক্রাউন প্রিন্সের পুত্র প্রিন্স হুসেনের উপর তাদের নজর ছিলো ,কারন প্রিন্স হুসেন ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত এবং অনেকটা তার দাদা প্রিন্স আবদুল্লাহ মত। কিন্তু তার বয়স ছিলো খুবই অল্প মাত্র ১৫ বছর । ঠিক এই কারনেই তারা ক্রাউন প্রিন্সকে এনে সিংহাসনে বসিয়ে প্রিন্স হুসেন কে তৈরি হবার জন্যে পর্যাপ্ত সময় দিতে চাইলেন আর তাদের এই পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছিলেনে প্রিন্স হুসেনের মা। তিনি ছিলেন সেই সময় আরব দুনিয়ার অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত রমণী এবং ব্যাক্তিত্বসমপন্ন । তারা তিনজন মিলে এই ম্যাকেয়াভিলিয়ান প্লানকে বাস্তবে রুপ দিতে সবরকম কার্য্যক্রম শুরু করলেন।
এইদিকে প্রিন্স নায়েফও বসে রইলেন না , তিনিও এইসব পরিকল্পনার কথা জানতে শুরু করলেন এবং অবশ্যসম্ভাবি ভাবে যেটা হয় , সামরিক ক্যু , তিনি সেটাই করলেন কিন্তু ব্যার্থ হলেন কারন বৃটেন সহ অন্যান আরব দেশ ক্রাউন প্রিন্স তালালের পক্ষে ছিলেন বিশেষ করে সৌদি আরব আর বৃটেন । ফলে এই ক্যু ব্যার্থ হলো এবং সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে ক্রাউন প্রিন্স তালাল ফিরে এলেন জর্দানে , দেশের মাটিতে নেমেই তিনি সোজা চলে গেলেন পার্লামেন্টে শপথ নিতে । ক্রাউন প্রিন্স তালাল হয়ে গেলেন জর্দানেরে দ্বিতীয় রাজা । কিং তালাল
আর প্রিন্স হুসেনকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষনা করা হলো এবং তাকে বৃটেনে হেরাল্ড কলেজে পড়শোনা করতে পাঠিয়ে দেওয়া হোলো । যেন সে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়ে উঠেতে পারে ।



কিন্তু কিং তালালের শাসনকাল ভালো ছিলোনা ।তিনি এক বছরের মত সময় দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন। তার স্বাস্থ্যের ক্রমশ অবনতি ঘটছিলো। চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য অযোগ্য ঘোষনা করলো এবং জর্দানিয়ান পার্লামেন্টেরিয়ানদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি রাষ্ট্রে কাজ পরিচালনা করতে শুরু করলো।

১৯৫২ সালের অগাস্ট মাসে ক্রাউন প্রিন্স হুসেন জেনেভাতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন, সেই জায়গায় তার কাছে একটি অফিসিয়াল চিঠি আসে জর্দানের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে , তাকে “হিজ ম্যাজেস্টি কিং হুসেন” বলে সম্বোধন করে ।
পার্লামেন্টে জর্দানের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে কিং তালালের শারীরিক অক্ষমতার কথা তুলে ধরেন এবং চিকিৎসকদের রিপোর্ট তুলে ধরেন , যেই রিপোর্টে তিনজন জর্দানিজ এবং দুই জন বিদেশি চিকিৎসকের সাক্ষর ছিলো।জর্দানের সংবিধান অনুযায়ী যদি রাজা মানুষিক ভাবে অসুস্থ থাকে এবং রাজ্য চালালতে অক্ষম থাকে তবে পার্লামেন্ট তাকে বহিষ্কার করতে পারে এবং ক্ষমতা ক্রাউন প্রিন্সের হাতে তুলে দিতে পারে ।
ক্রাউন প্রিন্স হুসেন দেশে ফিরলেন একধরনের মিশ্র অনুভুতি নিয়ে । দেশবাসির মধ্যেও মিশ্র অনুভুতি । তারা এখনো কিং আবদুল্লাহ শোক কাটিয়ে উঠতে পারে নি , এর মধ্যে কিং তালালের পদত্যাগ এবং এখন তাদের সামনে ১৭ বছর বয়স্ক একজন নতুন কিং । জর্দানের সংবিধান অনুযায়ী মুসলিম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৮ বছর হওয়া ছাড়া সিংহাসনে বসা যায় না । তাই কিং হুসেনকে বৃটেনে ফিরে যেতে হয় এবং তিনি সেখানে পরবর্তি ক্রুসিয়াল ছয় মাস "স্যাডহাস্ট রয়্যাল মিলিটারী একডেমীতে" কাটান গ্র্যাজুয়েট হতে ।
২ মে ,১৯৫৩ কিং হুসেন ১৮ বছরের হয়ে যান মুসলিম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এবং তিনি দেশে ফিরে আসেন ।
আম্মানের রাজপথের উল্লসিত জনতার করতালির মধ্য দিয়ে তিনি পার্লামেন্টে যান শপথ নিতে । শুরু হয় এক নতুন অধ্যায় । আঠারো বছর বয়স্ক এক তরুণ রাজার নেতৃত্বে এক নতুন পথ চলা ।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০৪
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×