somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মেসি ভার্সেস মেশিন’ এবং ডিয়েগো’র কাছে বিনীত অনুরোধ!

১০ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূমিকম্প যেখানে হয় তার থেকে অনেক দূরে থাকে। ঠিক তেমনি ফুটবলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গোলের উৎসস্থল থাকে যেখান থেকে গোল হয় তার অনেক দূরে। ফুটবল খেলার মাঠে একটা দল কে একটা ‘এনার্জি ফিল্ড’ বলা যায় যেখানে ‘এনার্জি ডিস্ট্রিবিউশন’ প্রতি মুহুর্তে পরিবর্তন হচ্ছে। একটা দলের ডিস্ট্রিবিউশনের ‘দূর্বল লাইনে’ আরেকটা দলের ‘শক্তিশালী লাইন’ যে মুহুর্তে আঘাত করে সে মুহুর্তেই গোলের সম্ভাবনা তৈরি হয়! সম্ভাবনা তৈরি হবার পর ‘সম্ভাবনা’ কোন দল আগে বুঝল সেটা নিয়ে কথা! যে দল আগে বুঝবে সে এক মিলিসেকেন্ড এগিয়ে যাবে! খেলার ফল নির্ধারনের জন্য এক মিলি সেকেন্ড ই যথেষ্ট!!

বাংলাদেশে যে আর্জেন্টিনার এত সমর্থক তার উৎস কোথায়? ফিরে যেতে হবে আঠাশ বছর আগে। তখন টিভি মানে বিটিভি।বিটিভি দেখার ম্যাজিক বক্স মানে সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি! (এই টিভি কে গোলবার বানিয়ে ফুটবল খেললেও সম্ভবত নষ্ট হত না!) সেই টিভিতে উৎসব মানে সাপ্তাহিক নাটক, মুভি অব দ্য উইক,আনন্দ মেলা, আবাহনি-মোহামেডান খেলা আর বিশ্বকাপ ফুটবল! উনিশ শ ছিয়াশি সালে আত্নীয়ের বাসায়,এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবের বাসায়, এবং চায়ের দোকানের টিভি’তে চোখ রেখে এই বাংলাদেশের মানুষ দেখল অভাবিত দৃশ্য। পেলের খেলার গল্প শুনে শুনে তারা যেরকম সব অসম্ভব দৃশ্য কল্পনায় এঁকে নিত সেরকম সব অসম্ভব দৃশ্য চোখের সামনে একের পর এক এঁকে চলেছে গাঁট্টাগোট্টা চেহারার ছোটখাট একজন মানুষ! ডিয়েগো ম্যারাডোনা!! বল পায়ে লেগে থাকে আঁঠার মত! পাস দেয় বা গোল দেয় মেশিনের মত একুরেট! পুরা দল কে সে ই খেলায়! বিদ্যুৎ বেগে মানুষের বুকে ছড়িয়ে গেল ডিয়েগো ম্যারাডোনা, আর্জেন্টিনার নীল সাদা পতাকা পত পত করে উড়তে লাগল ফুটবল আকাঙ্ক্ষার পালে! পত্রিকা যত পড়ে মায়া তত বাড়ে! আমাদের দেশের ‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে’ বেড়ে উঠা ছেলেটার শৈশবের সাথে নাকি ম্যারাডোনার শৈশবের কোনই পার্থক্য নাই!!

১৯৮৬ বিশ্বকাপের সময় মন এতই শিশু ছিল যে ম্যারাডোনার খেলার চেয়ে তখন বড় বিস্ময় ছিল ‘ফুটবল টিভির আয়নার কাঁচ ভেঙ্গে ঘরের ভেতর এসে পড়েনা কেন!’ কাজেই ১৯৮৬ তে ম্যারাডোনা যা করেছে তা ‘ইউটিউব-কথা’ হয়েই থাকুক!

১৯৯০ সাল।স্পষ্ট বুঝতে পারছি নব্য উৎপাদিত হরমোন নামক ভয়ঙ্কর দ্রব্য আমার মধ্যে ব্যক্তিত্ব নামক জটিল জিনিষ পয়দা করে আমার জীবনটাকে কুটিল করার ষড়যন্ত্র করছে! বাসায় বেড়াতে আসা লোকজনের মধ্যে সুন্দর কোন মেয়ে থাকলে বেহুদা সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। গলার স্বর অন্যরকম(!) করে নিজের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করি! বিশ্বকাপ শুরু হতেই মনে হল, এবার ম্যারাডোনা দিয়েই গোল করতে হবে! ম্যারাডোনা বিষয়ে সবাই মেয়েদের সামনে যা বলে তার চেয়ে ভিন্ন রকম কিছু আমাকে বলতে পারতেই হবে।

শুরু হল আমার ম্যারাডোনা দর্শন! আপনি যতই গল্প শুনেন আর যতই ইউটিউব দেখেন না কেন ম্যারাডোনার খেলা যদি ‘লাইভ’ না দেখে থাকেন তাইলে বুঝতে পারবেন না এইটা কি জিনিষ ছিল! এমনিতে রগচটা ম্যারাডোনা যে মাঠে একটা ‘শূন্য ডিগ্রী তাপমাত্রার শয়তান খুনে’ হয়ে যেত সেটা কোন দিন আপনি বুঝতে পারবেন না।

প্রতিপক্ষের এনার্জি ফিল্ডের প্রত্যেকটা ন্যানো পরিবর্তন সে ধরতে পারত এবং নিজের দলের শক্তি রেখা কে মুহুর্তের ভগ্নাংশে সৃষ্ট প্রতিপক্ষ দলের দুর্বল রেখার উপর নিক্ষেপ করতে পারত। এই দূর্লভ ক্ষমতা দিয়েই ১৯৯০ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনের সাথে হেরে যাওয়া অতি দুর্বল আর্জেন্টিনা দল কে ম্যারাডোনা ফাইনালে তুলে! (১৯৯০ এর আর্জেন্টিনা দল কোন মানের ছিল সেটা সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাবার জন্য ইউ টিউবে ১৯৯০ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সেকেন্ড রাউন্ড দেখে নিয়েন।)

১৯৯৪ বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনা বাবাজি ডোপ খেয়ে ধরা পড়ল! আর্জেন্টিনাও গেল।

গেল ত গেল এমন ভাবে গেল আর এল না(গো টু গো এমনভাবে গো, আর নেভার কাম!)! বিশ্বকাপ আসে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পুরা ফুটবল বিশ্বে যে ‘নীল-সাদা ঢেউ’ ম্যারাডোনা ছড়িয়ে দিয়েছিল সেটা ভক্তদের চোখে শুধু কান্না হয়ে বয়।

২০১৪ সাল।মহাকালের ইতিবাচক ষড়যন্ত্রে বিশ্বে আরেকটা খেলোয়াড় পরিপক্ক হল যে কিনা জেনেটিক্যালি ফুটবল মাঠের এনার্জি ফিল্ডের সূক্ষাতিসূক্ষ পরিবর্তনগুলো ধরতে পারে! এর আবেগ ঠিক ম্যারাডোনার মত নয়। আরো সংযত! ভুল এনার্জি ফিল্ডে শক্তি খরচ করেইনা বলা চলে। এর নেতৃত্বে সংগঠিত সাধারণ মানের দলটি এভারেস্ট জয়ের টান টান উত্তেজনা নিয়ে ছয়টি ম্যাচ জিতে ফাইনালে চলে গেল। পুরা দল টি এই মুহুর্তে তাদের মোটিভেশনের শীর্ষে আছে এবং তাদের চব্বিশ ও আঠাশ বছর আগের কান্না এবং হাসির দোসর জার্মানি কে চোখ রাঙ্গাচ্ছেই! এতে কোনই সন্দেহ নাই।

‘মেসি ভার্সেস মেশিন!’ শুনতে কেমন লাগে?

আমি হচ্ছি বাংলাদেশের সেই সীমিত ক্রিকেট দর্শকদের একজন যে ব্রাজিল হারলেও কাঁদে, আর্জেন্টিনা হারলেও কাঁদে! দেশে ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনা ভালোবাসার বিরাট প্লাটফর্ম আমার দিলে দুদলের জন্যই ভালোবাসা পয়দা করেছে।



প্রিয় ডিয়েগো, এই মুহুর্তে তুমি যে কঠিন আবেগাক্রান্ত এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। আবগের কারনে তোমার মন এখন শুদ্ধ! কাজেই এখন ই শ্রেষ্ঠ সময়। ‘হাত দিয়ে গোল করে ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল রসিকতা’ করার জন্য ঈশ্বরের কাছে এখুনি ক্ষমা চাও!

কারন?

মহান ঈশ্বর যতটা দয়ালু, ততটাই নিষ্ঠুর তিনি!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×