বিজ্ঞাপনের ভাষাটা মুটামুটি এরকম-
একদল সদ্য কৈশোরে পা দেয়া বালক। তারা নানান রকম শারীরিক কসরত করেও লম্বা হতে পারছেনা। কিন্তু একটা বালক দেখা গেল তরতর করে বেড়ে উঠেছে। সবাই সমস্বরে চিৎকার করে বলছে- তুই এত তাড়াতাড়ি বেড়ে গেলি কি করে? সুইমিং পুলে দাঁড়ানো এক বালক প্রবল ঈর্ষান্বিত চিৎকার করে বেড়ে উঠা বালক কে জিজ্ঞেস করছে- কি খাবার খা...স রে তুও ই ই ই?
বেড়ে উঠা বালক তখন গর্বের সাথে ঘোষনা করে- আই ইম এ কোমপ্লান বোই!
বিজ্ঞাপন টা যতবার দেখি কেমন যেন খটকা লাগে।– জেনেটিক কারন ব্যতিরেকে কমপ্লান নামক দুধ খেলে একটা বাচ্চা লম্বা হয়ে যাবে- এই মিথ্যে তথ্য পরিবেশনের জন্য খটকা লাগে তা নয়। কারন বিজ্ঞাপনের উদ্যেশ্য পণ্যের প্রচার, সত্যের প্রচার নয়। খটকার কারন ভিন্ন।
যে লক্ষ লক্ষ বাচ্চারা এই বিজ্ঞাপন দেখছে তাদের মাথায় কি এটা ঢুকে যাচ্ছেনা যে-লম্বা হওয়া টা একটা অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার! স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে কিছু বালক লম্বা হবে। কিছু বালক খাটো হবে। শারীরিক কসরত করে বা পুষ্টিকর খাবার খেয়ে সেটার খুব সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে। কারন- যেকোন প্রানীর টোটাল অর্গানিজম টা জেনেটিক প্রোগ্রাম অনুযায়ী বেড়ে উঠে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোর পরস্পরের মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। কাজেই কোন খাবার খাইয়ে কাউকে জেনেটিক কোড নির্ধারিত এই প্রোগ্রাম থেকে বের করে এনে অস্বাভাবিক লম্বা বা খাটো বানিয়ে দেয়া সম্ভব না। তাহলে যে বাচ্চারা খাটো থাকছে তারা কি এই বিজ্ঞাপন দেখে ভাবছে না- ইস লম্বা না হওয়ায় ঠকে গেলাম!
উঠতি বয়স টাই হচ্ছে শারীরিক বৈশিষ্টের কারনে হীণমন্যতা বা উচ্চমন্যতা তৈরি হবার বয়স। বয়োসন্ধিকালে বা উঠতি যৌবনে মানুষের মন থাকে যৌন আকর্ষণ কেন্দ্রিক। যৌবন উদগমের সাথে সাথে মানুষের মনে এই ভাবনা উদয় হওয়া স্বাভাবিক- সে বিপরীত লিঙ্গ কে কতটুকু আকৃষ্ট করতে সক্ষম। বালকদের মধ্যে যারা স্বাস্থ্যবান যাদের তাড়াতাড়ি দাড়ি গোঁফ গজায় তারা গৌরব বোধ করে। তুলনায় যাদের স্বাস্থ্য ক্ষীণ এবং দাড়ি গোঁফ উঠতে দেরি হয় তারা হীণমন্যতায় ভুগে। বলাবাহুল্য, এসবের সাথে মানুষের সত্যিকারের যৌন স্বাস্থ্যের সম্পর্ক কতটুকু সেটা সেই বয়সে যাচাই করার কোন উপায় থাকেনা( আমি যে সমাজে বড় হয়েছি সেই সমাজের প্রেক্ষিতে বলছি) এবং এই হীণমন্যতা তার সামগ্রিক জীবনে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা দূর করার জন্য বয়োঃসন্ধিকালে বালক বালিকা উভয় কে বিজ্ঞান সন্মত যৌন শিক্ষা প্রদান করা অতীব জরুরী।
এখন উঠতি বয়েসী বালক দের যদি ক্ষনে ক্ষনে এটা মনে করিয়ে দেয়া হয় লম্বা হওয়া টা অতি জরুরী বিষয় তাহলে যারা লম্বা নয় তাদের মনে এটাকে কেন্দ্র করে গেঁড়ে বসতে পারে হীনমন্যতার শিকড়। আবার যারা লম্বা চওড়া আছে তাদের এই বিজ্ঞাপন দেখে মনে হতে পারে বেঁটেদের তুলনায় তারা সুপিরিওর। এই বিজ্ঞাপন কিশোরদের মনস্তত্ত্বে সত্যিকারের কতটুকু এবং কি প্রভাব ফেলছে সেটা নিয়ে আমার মনে হয় অনুসন্ধান করা উচিৎ।