somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনজারাস এর হাসি

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে বৃহস্পতিবার হাফ স্কুল। দুপুর বেলা বাসায় ফিরে চমকে উঠল টুলু। বাসায় মেহমান এসেছে। ওয়াহেদ চাচা, চাচী আর তাদের ছোট্ট মেয়ে শেলি। ওয়াহেদ চাচা, চাচী আর শেলি বারান্দার সোফায় বসে লেবুর শরবত খাচ্ছে। বারান্দার সামনের উঠানে চেন শু, দামী হাফ প্যান্ট, হাফ শার্ট পরা এবং সুন্দর করে চুল আঁচড়ানো বড় বড় চোখের একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে। ছেলেটা ইতিমধ্যে টুলু’র ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যাট, সাত চারা খেলার বলের দখল নিয়ে নিয়েছে। সে বল টা উঠানের সামনের দেয়ালে মেরে মেরে খেলছে। ছেলেটা টুলুরই সমবয়েসি। টুলুকে দেখে হাসি হাসি মুখে তাকাল। বলল- আয় খেলি!

টুলুর বুক ঢিপ করে উঠল। নেওয়াজ এর সাথে খেলা কি ঠিক হবে? মেহমান চলে যাবার পরে আম্মা টুলুকে একা ডেকে ভীষণ মন খারাপ করে বলবে না ত- বাবা, তুই ওর সাথে খেললি!! শেলির সাথেই না হয় একটু খেলতি, গল্প করতি!

আগের বার নেওয়াজের সাথে খেলার পর আম্মা যখন এরকম বলেছিল তখন টুলু জিজ্ঞেস করেছিল- নেওয়াজের সাথে খেললে কি হয় মা?

আম্মা অসম্ভব মুখ কাল করে মাথায় আধহাত ঘোমটা টেনে বলেছিল- ও যে অপবিত্র!

নেওয়াজ কেন অপবিত্র কিছুই বুঝেনি টুলু। কমোডের ভেতর যে গু থাকে সেটা অপবিত্র বলে জানত টুলু। নেওয়াজ কি তাহলে গু?? কই সেত টুলুর মতই একটা বাচ্চা ছেলে। নান-ঝু ( নানী) বুঝায় না দেয়া পর্যন্ত কিছুই বোঝেনি টুলু। নান-ঝু যেদিন টুলুকে সব কিছু বুঝিয়ে দিল সেদিন টুলুর বুকের ভেতর টা অসম্ভব কষ্টে ভরে গিয়েছিল। একজন মানুষ কেন কোন দোষ ছাড়া শাস্তি পাবে? একজন মানুষ কে কোন দোষ ছাড়া কেন সবাই অপবিত্র বলবে?

স্কুলের ব্যাগ রেখে ওয়াহেদ চাচা আর চাচী কে কদমবুসি করল টুলু। শেলি’র দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসল। জবাবে শেলি’ও মিষ্টি হাসি দিল। আম্মা দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ উত্তরালী বাতাস ঘরে ঢোকায় ঘোমটা একটু সরে গিয়েছিল। ঘোমটা তাড়াতাড়ি টেনে দিতে দিতে বলল- শেলী ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছে। আর আমার গাধাটা ক্লাস সিক্সে অঙ্ক পরীক্ষায় ফেল করেছে! মায়ের কথা শুনে টুলু ফিক করে হেসে ফেলল। সে মনে করে অঙ্কে সে ফেল করে ঠিকই করেছে। অঙ্কে একটা জিনিষ আছে, নাম হল উপপাদ্য। শুনলেই মনে হয় পাদ দিতে বলতেছে। এসব বালছাল পড়ার কোন মানে হয়! সে শেলি’র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল- বৃত্তি’র টাকা দিয়ে কি করছ?

শেলি মুখ ঝামটা দিল- ঝাহ! তোকে বলব না!!

টুলু র একটু মন খারাপ হল। অঙ্কে ফেল করেছে শুনে শেলি চট করে তাকে বাজে ছেলে ভেবে ফেলল যাকে বয়সে বড় হলেও তুই করে বলা যায়!

টুলু চোখ মুখ শক্ত করে উঠানের দিকে হাঁটা দিল। সে শেলির সাথে কিছুতেই খেলবেনা। সে নেওয়াজের সাথে খেলবে। নেওয়াজ পবিত্র বা অপবিত্র যাই হোক তার সাথে খেলতেই ভাল লাগবে টুলুর। কারন নেওয়াজ টুলুকে কখনোই বাজে ছেলে ভাববে না। তার চেয়ে বড় কথা টুলু শুনেছে নেওয়াজ নাকি স্কুলের সব পরীক্ষাতেই ফেল করে!

দূর সম্পর্কের ভাসুর, জা আর তাদের মেয়ে আর...আর...’অপবিত্র সন্তান’ টার জন্য রান্না বান্না করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন ছাইয়েদা জেবুন্নেসা খানম। রান্না কোন ঘটনা না। অপবিত্র একটা সন্তানের জন্যও ইচ্ছার বিরুদ্ধে রান্না করতে গিয়ে অপরিসীম একটা মানসিক ক্লান্তি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। ফুল চোঙা দিয়ে চুলায় ফু দিতে দিতে সেই অসম্ভব ভারী এবং ক্লান্ত মন নিয়ে তিনি তার ভাসুর আলহাজ্ব ওয়াহেদুজ্জামান দানেশ ভুঁইয়া তক্তপুরি’র কথা চিন্তা করতেছিলেন। এমনিতে কত পরহেজগার মানুষ আলহাজ্ব দানেশ ভুঁইয়া তক্তপুরি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ত পড়েন ই। শেলি বালেগা হলেই যে বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করে দিবেন এবং পড়ালেখায় যতই ভাল হোক, উপযুক্ত পাত্র পেলেই যে বিয়ে দিয়ে দিবেন, তাতেও কোন সন্দেহ নেই। মায়ের নামে তক্তপুরে এতিমখানা ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ এই একটি মাত্র ‘খারাপ কাজ’ তাকে ‘আল্লাহ’র মকবুল বান্দা’ হওয়া থেকে ফারেগ করে ফেলল! এমন ত না যে নেওয়াজ নামক দোজখী হাইওয়ান(!) টা হাজি সাহেবের আপন নূৎফা’র ফরযন্দ!! তাঁর মত একজন আল্লাহওয়ালা লোক কে পর্যন্ত কিভাবে শয়তান বিভ্রান্ত করে ফেলল! শয়তানের প্রবল শক্তিমত্তা মনে মনে অনুভব করে মনে মনে কেঁপে উঠলেন ছাইয়েদা জেবুন্নেসা। তিন বার ‘কুলহু আল্লাহু’ পড়ে বুকে ফুঁ দিলেন।

শয়তানের বিষয় টা প্রথমে বুঝতে পারেন নাই জেবুন্নেসা। স্বামী মাওলানা খায়রুল্লাহ ছাহেব এর সাথে এই ব্যাপারে মশওয়ারা করার পর বুঝতে পেরেছেন। মাওলানা ছাহেব এর বাজারে বই এর দোকান আছে। দোকানের নাম ‘বন্দিশাহী এন্ড ছোবহানিয়া কিতাব ঘর’। বন্দিশাহী এন্ড ছোবহানিয়া কিতাব ঘরে যাবতীয় ধর্মীয় বই এর পাশাপাশি স্কুলের পাঠ্য বই, এস এস সি পরীক্ষার টেস্ট পেপার, বিসিএস গাইড সব পাওয়া যায়। তাছাড়া সাহিত্যের বই ও পাওয়া যায়। কাসেম বিন আবু বক্কর ছাহেবের বই, রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর পাওয়া যায়। তো মাওলানা খায়রুল্লাহ ছাহেব কে একদিন এশা’র নামাজান্তে জেবুন্নেসা জিজ্ঞেস করেছিলেন- আলহাজ্ব দানেশ ভুঁইয়া তক্তপুরি’র মতন এমন আল্লাহওয়ালা লোক কিভাবে এমন গোমরাহী’তে শামিল হন? কি ভেবে ওনি ‘অপবিত্রতার মধ্যে জন্ম এমন দোজখী হাইওয়ান’ কে নিজের সন্তানের মত পেলেপুষে বড় করছেন? ওনাকে আল্লাহ পাক ছেলে সন্তান দেন নাই তাই? ‘গরিব কিন্তু পবিত্র সন্তান’ খুঁজলে কি একটাও পাওয়া যেত না?

খায়রুল্লাহ ছাহেব কচু’র ছরা দিয়ে রান্না করা করইচ্চা কুরা’র রান চিবাতে চিবাতে প্রশান্ত মনে জবাব দিয়েছিলেন- ঈবলিশ শাইত্বান কে আল্লাহ পাক মানুষের রগে রগে হাঁটার ক্ষমতা দিয়েছেন। আল্লাহ র মকবুল বান্দা হবার খুব কাছে পৌছাঁইয়া গিয়াছেন এরকম কাউকে জাহান্নামের কীনারে নিয়ে ফেলতে পারলেই ঈবলিশ শাইত্বানের বদ নফস সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। আল্লাহ’র পাক দরবারে হাজী ছাহেবের জন্য সব সময় দোয়া করি। আল্লাহ যেন ওনাকে হেদায়েত করেন। স্বীয় কুদরত দিয়ে ওনার ‘পবিত্র পরিবার’ কে ‘অপবিত্র দোজখী হাইওয়ান’ থেকে ফারেগ করেন!

‘ওনার পবিত্র পরিবার কে অপবিত্র দোজখী হাইওয়ান থেকে ফারেগ করেন’ এই কথা শুনে মুহুর্তের জন্য জেবুন্নেসা’র মনে প্রবল মাতৃসত্ত্বা জেগে উঠেছিল। তার মনে হয়েছিল- নেওয়াজ ও ত এক মায়ের সন্তান! একজন ‘মা’ হয়ে একজন ‘সন্তান’ এর মৃত্যুকামনা করা কি ঠিক? কিন্তু পর মুহুর্তেই তিনি মন কে শক্ত করে ফেলেছিলেন। অপবিত্রতার মধ্যে যার জন্ম তার জন্য অন্তরে কোন মায়া থাকতে পারেনা। সে ত নোংরা, সে ত কোনদিন ই বেহেশতে প্রবেশ করবেনা। তাকে ঘৃণা না করার মানে হল ওই অপবিত্রতাকেই ঘৃণা না করা। তার ‘পবিত্র সন্তান টুলু’ আর ওই ‘অপবিত্র অবৈধ সন্তান নেওয়াজ’ কি কোনদিন সমান হতে পারে??

দুপুরে খাবার পরে ভাত ঘুম ঘুমিয়েছিলেন জেবুন্নেসা। প্রায় সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে উঠানে এক ভয়াবহ ‘অপবিত্র দৃশ্য’ দেখে তার প্রায় জ্ঞান হারাবার উপক্রম হল!

তার ‘পবিত্র সন্তান টুলু’ এবং ‘ হাজি ছাহেবের অবৈধ অপবিত্র সন্তান নেওয়াজ’ পাড়ার আরো কয়েকটা দামড়া’র সাথে কাদায় গড়াগড়ি করে হাডুডু খেলছে। খেলায় তার পবিত্র সন্তান টুলু ধরা পড়েছে। তাকে সর্বাগ্রে জাপটে ধরে আছে ওই অবৈধ অপবিত্র হাইওয়ান টা!

ছাইয়েদা জেবুন্নেসা খানম তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠানে পড়লেন। তাঁর পবিত্র গর্ভে মাওলানা ছাহেবের পবিত্র ঔরষে জন্ম নেয়া দুষ্ট ফরযন্দের চুলের মুঠি ধরলেন! কিন্তু ছাইয়েদা জেবুন্নেসা খানম বোকা নন। বোকা নন বলেই জানেন ‘বাজারে সতেরটা কাপড়ের দোকানের মালিক হাজি ছাহেবের পোলা( হোক সে বৈধ বা অবৈধ) জাপটে ধরছে এই কারনে নিজের পোলা অপবিত্র হয়ে গেছে’ এই কথা জনসমক্ষে বলা যায়না! কাজেই ‘হারামজাদা পুলা একবার অঙ্ক পরীক্ষায় ফেল করছস, আর এখন ঘরে বসে পড়ালেখা না করে মাঠে ডু ডু মারাচ্ছস!!’ বলে টুলু কে পিটাতে পিটাতে আধমরা করে ফেললেন! পোলাকে নিষ্ঠুর ভাবে পিটানো’র সময় পাশবিক একটা আনন্দ তিনি অনুভব করলেন। তাঁর মনে হল অপবিত্র সন্তান জাপটে ধরায় টুলুর বেহেশতে যাবার পথে যে প্রতিবন্ধকতাটুকু সৃষ্টি হয়েছিল, নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে তিনি সেই প্রতিবন্ধকতাটুকু চিরতরে দূর করে দিলেন। তিনি যা করেছেন, টুলুর মঙ্গলের জন্যই করেছেন।

মার খেতে দেখে পাড়ার অন্য দামড়াগুলো পালালেও নেওয়াজ শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত টুলুকে ছোটাতে চেষ্টা করছিল। এক সময় বিরক্তি এবং ঘৃণা আটকাতে না পেরে ‘সর হাইওয়ান’ বলে এক ঝটকায় টুলুকে টেনে নিয়ে কলের পাড়ে নিয়ে সন্ধ্যাকালে গোছল করিয়ে দিয়েছিলেন জেবুন্নেসা। হাইওয়ান শব্দের অর্থ না জানা নেওয়াজ ফ্যাল ফ্যাল করে নিষ্ঠুর এবং দূর্বোধ্য চাচী আম্মা’র দিকে তাকিয়েছিল। টুলুর সাথে খেলছে খেলুক এই অজুহাতে(!) নেওয়াজ কে এখানে রেখে শুধু শেলি’কে নিয়ে আরেক আত্নীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন ওয়াহেদ চাচা এবং চাচী। তারা ফিরলে তাদের সামনে বুক চাপড়ে কাঁদাকাটি করে ‘ পরীক্ষায় ফেল করার পরেও পড়াশোনায় গাফিলতি করে অধিক বেলা পর্যন্ত ডু ডু খেলাই যে টুলুর পিটানি খাবার কারণ’ এটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেললেন ছাইয়েদা জেবুন্নেসা। চোখের সামনে স্ত্রী’র অনবদ্য অভিনয় দেখে স্বামী মাউলানা খায়রুল্লাহ ছাহেব পর্যন্ত বিস্ময়ে অভিভুত হয়ে গেলেন!

গভীর রাত। প্রচন্ড ক্ষুধা পেটে টুলু একাকী বিছানায় শুয়ে আছে। চাইলে প্রবল অভিমান ভেঙ্গে আউলা ঘরে গিয়ে ভাত বেড়ে খাওয়া যায়। অন্ধকারে আউলা ঘরে গিয়ে হাতড়ে হাতড়ে বাসনে ভাত সালুন বেড়ে অন্ধকারেই চোরের মত খেয়ে চলে আসবে। কেউ বুঝতেও পারবেনা। কিন্তু উঠতে গিয়ে সারা গায়ে প্রবল ব্যাথা টের পেল। তাতেই অভিমানটা দ্বিগুন হয়ে গেল। সেই প্রবলতর অভিমান দিয়ে পেটের ক্ষুধা কে জয় করে ফেলল টুলু। কিন্তু অন্ধকার ঘরে একা একা চৌকির উপর শুয়ে টুলুর মনে হল এই দুনিয়াতে সে বড় একা। এই জগত সংসারে তার কোন মা বাবা ভাই ভইন মামা মামী চাচা চাচী কেউ নাই, কেউ ই তার মত নয়! এই ভয়ঙ্কর সময়ে তার নান-ঝু’র কথা মনে পড়ল। গেলবার বার্ষিক পরীক্ষা শেষে যখন নানাবাড়ি গেল তখন নান ঝু কে একা একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল-

ও নানঝু, মা যে বলে নেওয়াজ অপবিত্র সন্তান, অপবিত্র সন্তান মানে কি? কেন সে অপবিত্র সন্তান?

এগার বছরের বালকের কাছে কোন কথা বলা যায়, কোন কথা বলা যায়না- সেই কান্ডজ্ঞান যেই বয়সে পৌঁছালে সাধারণত রহিত হয় নানঝু সেই বয়সে পৌঁছে গেছেন। কাজেই তিনি টুলুর কাছে অবলীলায় ওয়াহেদ চাচাদের একান্নবর্তী পরিবারের ভাইদের একজন বাড়ির চাকরানী’র সাথে সঙ্গম করে কিভাবে সন্তান উৎপাদন করলেন এবং অপুত্রক ওয়াহেদ ছাহেব এবং তাঁর স্ত্রী মালেকা শরিয়তুন্নেসা কিভাবে সেই অবৈধ সন্তানের মায়ায় পড়ে তাকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি প্রশ্রয় দিয়ে পালন করছেন- সেটা বর্ননা করলেন।

সেদিন সব শুনে টুলুর কান গরম হয়ে গিয়েছিল। এবং ওয়াহেদ চাচার সেই ভাইটাকে তার একটা পাকা বদমাশ মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল এই বদমাশ টার জন্য ই বেচারা নেওয়াজ আজ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়েছিল এই বদমাশ টা এই বদমাশী টা না করলে ত নেওয়াজের জন্মই হতনা! ‘তাহলে এই বদমাশীর কারনে জন্ম নেওয়া নেওয়াজের মনকষ্টের কারণ এই বদমাশিটাই’ এই নির্মম কিন্তু সঙ্ঘাতপূর্ণ সত্য টা টুলুর কচি মন কে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছিল।

আজকেও টুলু’র মনে সেই সঙ্ঘাতপূর্ণ সত্যটাই প্রবল ভাবে আঘাত করল। কিন্তু সেই দিন এবং আজকের দিনের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেইদিন টুলুর মন ছিল শান্ত। পাশে নানঝু ছিল। আজকে টুলুর মন অভিমানে টইটুম্বুর। পাশে কেউ নাই। কাজেই তার মনে হল আপাত দৃষ্টিতে চারপাশের সমাজটাকে যত ভাল মনে হয় আসলে সেটা অনেক অনেক বেশি নিষ্ঠুর। সেটা নেওয়াজের মত সম্পূর্ণ নিস্পাপ একটা শিশুকে অমানবিক কষ্ট দিতে পারে। নির্মম ভাবে তার কানের কাছে সারাক্ষণ বলতে পারে- তুমি ঘৃণিত, তুমি অপবিত্র, তুমি অবৈধ, তুমি জারজ!!

টুলুর প্রবল কান্না আসল এবং গরম অশ্রুর ফোঁটা তার গাল বেয়ে টপ টপ করে বালিশের ওয়াড়ের উপর পড়তে লাগল। টুলু বালিশে মুখ গুঁজে ফিস ফিস করে ডাকল- ইনজারাস, ইনজারাস!!

‘ইনজারাস’ টুলুর মনের কল্পনা। টুলু যখন মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে তখন ইনজারাস কে ডাকে। ইনজারাস শুন্যে ভাসতে ভাসতে টুলুর পাশে এসে উঁচু একটা টুলের উপর বসে। ইনজারাসের মুখ সব সময় হাসি হাসি। তার উজ্জ্বল চেহারার আলো ঘরের দেয়ালে প্রতিফলিত হয় এবং সেই আলোয় টুলু ইনজারাস কে দেখতে পায়। ইনজারাস টুলুর পাশে বসে টুলুর একটা হাত ধরে থাকে। ইনজারাস আসলে টুলুর মনের সমস্ত ভয় মুহুর্তে উবে যায়! ইনজারাস কে টুলুর এত আপন মনে হয় যে ইনজারাস বলে বাস্তবে যে কেউ নাই এটা মেনে নিতে টুলুর বেশ কষ্টই হয়!

কিছুক্ষণের মধ্যেই ইনজারাস টুলুর পাশে এসে বসে। ইনজারাসের শরীরের সুন্দর একটা গন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ইনজারাসের চেহারার আলো দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে সারা ঘর আলোকিত হয়ে উঠে। টুলুর মাথায় হাত বুলায় ইনজারাস। ইনজারাসের অভাবিত স্নেহ টুলুর অভিমানী মনে প্রবল আবেগের একটা ঘনঘটা তৈরি করে। ইনজারাস টুলুর আরো কাছে এসে বসে। তারপর পরম মমতায় তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে-
- সৃষ্টিকর্তার মনে কোন ভেদাভেদ থাকতে পারেনা। তার কাছে টুলু যেমন পবিত্র। নেওয়াজ ও তেমনি পবিত্র।

টুলু অঝোরে কাঁদতে থাকে।

- ইনজারাস, ইনজারাস! নেওয়াজ কে ভালোবাসলে কোন পাপ নেই ত? তার সাথে খেললে কোন পাপ নেই ত? নেওয়াজ ত কোন দোষ করে নাই তাই না ইনজারাস? নেওয়াজ যা, টুলু ও তা- তাইনা ইনজারাস!!

ইনজারাস টুলুর কথা শুনে হাসছে। তার প্রবল হাসির দমকে ভুমিকম্পের মত থর থর করে কাঁপছে টুলুদের দীর্ঘদিনের পুরানো কাল বেড়ার ঘর। ইনজারাস হেসেই যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×