somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেডিকেলে ভর্তিপরীক্ষা

১৪ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"""""""বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তিপরীক্ষা সম্পর্কে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে আর ভর্তিপরীক্ষা নয়, এসএসসি-এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ’র ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এই সিদ্ধান্তটি আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাই। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।




প্রথমত, মেডিকেলে ভর্তির বিষয়টি ঘিরে এইচএসসি পরীক্ষার আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে হয়। শিক্ষার্থীরা ভর্তিপরীক্ষার জন্যই এইচএসসি’র পরও একদন্ড স্বস্তি পায় না। তাদের আবার সেই দৌড়ঝাঁপের মধ্যেই থাকতে হয়। অভিভাবকদের টেনশন বাড়ে। তাই তাদের জন্যও নতুন সিদ্ধান্তটি স্বস্তির কারণ হবে।

দ্বিতীয়ত, এ মুহূর্তে মনে হতে পারে ভর্তিপরীক্ষা বাতিল হলে বৈষম্য তৈরি হবে। আসলে বিপরীতটাই হবে। এখন এসএসসি ও এইচএসসি মিলে একজন শিক্ষার্থী মোট ৭৯ ঘন্টা পরীক্ষা দেয়। সেই পরীক্ষার ফলাফলের মূল্যায়ন না করে, পরে মাত্র এক ঘন্টার পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করা কি ঠিক? সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাতিল হলেই কিন্তু বৈষম্য থাকবে না।

তৃতীয়ত, আমাদের ছেলেমেয়েরা এ দেশের এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্টের ভিত্তিতে উন্নত দেশেও পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশে আমাদের পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের মূল্যায়ন হবে না কেন?

চতুর্থত, গত বছর মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫১ হাজার শিক্ষার্থী। এরা সবাই কিন্তু মেডিকেলে পড়ছে। কেউ তাদের স্বপ্ন থেকে দূরে নয়। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে? পাবলিক মেডিকেল কলেজগুলোতে যারা সুযোগ পায়নি তারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা দিয়ে ওই কলেজগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এখন কথা হল, ডাক্তার হতে ইচ্ছুকদের সবাই যদি মেডিকেলে পড়তে পারে তাহলে ভর্তিপরীক্ষার যৌক্তিকতা কোথায়? প্রয়োজনীয়তা কী?

প্রশ্ন উঠেছে যে, কোচিং-ব্যবসা বন্ধ করতে পারছে না বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কথা বলার মধ্যে সরকার ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে, এটাও অনেকে বলেছেন। যুক্তি হচ্ছে যে, মাথাব্যথার জন্য কি মাথা কেটে ফেলতে হবে? বিষয়টি তা নয়। হাইকোর্টের রুলিংয়ের ফলে কোচিং-ব্যবসা কিন্তু এখন অবৈধই হয়ে আছে। তাই কোচিং-ব্যবসা সরকার বন্ধ করছে না তা বলা যায় না। তবে মেডিকেলে ভর্তিপরীক্ষা না থাকলে ভর্তি নিয়ে বাণিজ্যটা বন্ধ হয়ে যাবে। আর শিক্ষার্থীদের হয়রানিও বন্ধ হবে। তাদের আর মেডিকেলে ভর্তির জন্য রাতদিন কাঠখড় পোড়াতে হবে না।

অনেকে এই কারণে আপত্তি করছেন যে দরিদ্র পরিবার এবং মফস্বল থেকে আসা অনেক ছেলেমেয়ে এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট না করেও ভর্তিপরীক্ষায় ভালো করে মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছে।

আমি মনে করি, যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে গেলে প্রথমে তো একটু হোঁচট খেতেই হবে। এ ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রটিও তো আছে। ভালো রেজাল্ট করা অনেক শিক্ষার্থী মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে কয়েক মাস কোচিং করে ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেয়। তার যখন স্বপ্নভঙ্গ হয়, তখন? এই যে তাকে কয়েক মাস শ্রম- অর্থ-সময় অপচয় করতে হল, এর মূল্য কে দেবে? এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো করার জন্য তাকে যে খাটুনি খাটতে হয়েছে, সেটার মূল্যও তো সে পেল না। আমার-আপনার জানাশোনা এমন কত শিক্ষার্থী আছে যারা গোল্ডেন জিপিএ পেয়েও মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষায় ভালো করেনি। তাদের ব্যাপারে কী বলব আমরা?

এসএসসি-এইচএসসিতে নানা কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারে না। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনও গ্রাম-শহরের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়ে গেছে এটা ঠিক। কিন্তু চার বছরে যে শিক্ষার্থী ভালো করতে পারেনি, সে এক ঘন্টার একটি পরীক্ষায় নিজের সব মেধার পরিচয় দেবে এমন ভাবারও কোনও কারণ নেই।

সিদ্ধান্তটি কিন্তু খুব তাড়াহুড়ো করে নেয়া হয়নি। গত বছরও এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এবার সেটা নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েও অনেক হৈচৈ হয়েছে। আদৌ সেটা ক্ষতিকর হয়নি। আমার মনে হয় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তও দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

শিক্ষার্থীদেরও এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। গত বছর পত্রিকার পাতায় দেখলাম, গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া এক মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এমন ঘটনাই বরং আর দেখতে চাই না।

ভর্তিপরীক্ষা সময় ও অর্থের অনেক অপচয় করে। সরকারকে এ আয়োজনের জন্য যে অর্থ খরচ করতে হয়, সে টাকা ফরমের মূল্য থেকে সরকার আদায় করে নেয়। পরীক্ষা না থাকলে অভিভাবকদেরও এ অর্থ খরচ করতে হত না।

আবার মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিং করাতে অনেকেই ছেলেমেয়েদের পেছনে এত টাকা খরচ করতে পারেন না। বিশেষ করে মেয়েদের অভিভাবকরা। মেয়েদের মা-বাবারা তো মেয়েদের পেছনে টাকা খরচ করতে অনেক হিসাব করেন। জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তি হলে মেয়েরা বরং অনেক বেশি সুযোগ পাবে।

আসলে মেডিকেলে ভর্তিপরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবক-সরকার সবার শ্রম-অর্থ-সময়ের অপচয় না করে, বরং পাবলিক পরীক্ষাগুলোর পেছনে সেটা দেওয়া উচিত। আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য পুরোটা মনযোগ ঢেলে দিতে হবে। একসময় মেডিকেল কলেজগুলোতে সিট-সংকটের কারণে ভর্তিপরীক্ষার ব্যবস্থাটা চালু করা হয়েছিল। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমরা কেন করব? আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা উন্নত বিশ্বের মানের নয় এটা ঠিক। আর সে জন্যই তো স্কুল-কলেজের শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

এ মুহূর্তে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তটি নানা দিক থেকেই অবিবেচকের মতো মনে হতে পারে। একটু গভীরভাবে ভাবলে দীর্ঘমেয়াদে এটা সুফলদায়কই হবে। """"""""
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×