somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জার্মানির প্রাচীন এক নগরী- কন্সটাঞ্জ

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন এক প্রস্তর যুগের ঘটনা যখন অঞ্চলটিতে প্রথম মানুষের পা পড়েছিল সভ্যতা গড়ার লক্ষ্যে। প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাস যখন ক্ষমতায় ঠিক সেসময়টায় এ অঞ্চলের দক্ষিণে বাস করত প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইউরোপিয়ানরা। এদের হটিয়ে রোমানরা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করল ৪০ খৃষ্টাব্দের দিকে। রাইন নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চলটির পূর্বনাম যদিও ছিল 'ড্রুসোম্যাগাস' তবে রোমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর সম্রাট কন্সটানশিয়াস ক্লোরাসের নামানুসারে তা হয়ে গেল 'কন্সটান্সিয়া'। কেউ কেউ বলে থাকে এই নাম এসেছে ক্লোরাসের নাতি সম্রাট দ্বিতীয় কন্সটান্সিয়াসের নাম থেকে যিনি এই অঞ্চলে প্রথম আসেন ৩৫৪ খৃষ্টাব্দে।
সুইজারল্যান্ডের সীমানা ঘেষে থাকা জার্মানীর একমাত্র শহর যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন বোমার আঘাত আসে নাই। প্রাগৈতিহাসিক নানা চিহ্ন বহনকারী ঐতিহাসিক এই শহরের কেন্দ্র দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে মধ্যযুগের গোড়ার দিকের গীর্জা, চিত্রিত রেনেসাঁ ভিলাস, সুন্দর ডিজাইন ও শিল্পকলা। সৌন্দর্য্যের সেই দিক থেকে অবশ্যই এই শহরের স্থাপত্য এবং নাটুকে সৌন্দর্য উপভোগ করার মতই ব্যাপার।

ইউরোপের হৃদপিন্ডে অবস্থিত বিখ্যাত রাইন নদী যার এক প্রান্তে অষ্ট্রিয়া হয়ে ছুঁয়ে এসেছে সুইজারল্যান্ড আর দুই ভাগ হয়ে দক্ষিণ দিক হতে জার্মানিতে ঢুকে চলে গেছে একেবারে উত্তর প্রান্তোবধি। কন্সটাঞ্জে রাইন নদী আর কন্সটাঞ্জ লেক মিলিত হয়েছে। লেকের ওপার আর এপার মিলে এই শহর দুটি ভাগে বিভক্ত। এর এক ভাগের সাথে সুইজারল্যান্ডের সীমানা। সত্তুর আশির দশকের দিকে এই লেকের পানি কলকারখানার বর্জ্যে দুষিত হয়ে অত্র অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র বিশেষ করে মাছের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের ফলে সেই অবস্থা আর নাই। লোকের মুখে শুনেছি এই লেকের পানি এতই স্বচ্ছ যে তা পান করা যায়। স্বচ্ছ পানি আমি নিজ চোখেও দেখেছি। এই লেকের পানিই প্রায় ১২২ কিলোমিটার লাইন বেয়ে চলে গেছে স্টুটগার্টে এবং সেখানকার প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ তাতে জীবনধারণ করে।

মূল শহরের সাথে লেকের যে অংশটি আছে তার তীরে রয়েছে ৯ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১৮ টন ওজনের বিশাল কনক্রিটের এক নারীমূর্তি যা দুই হাতে দুইজন পুরুষের মূর্তি নিয়ে শ্লথ গতিতে নিয়ত ঘূর্ণায়মান। এই নারীর নাম লা বেলে ইম্পেরিয়া আর যে দুইজন পুরুষের মূর্তি তাঁর হাতে তাঁরা হলেন ওই সময়ের পোপ মার্টিন ভি আর তৎকালীন রাজা সিগিসমুন্ড। কথিত আছে, ১৪৮৫ সালে ইতালীতে জন্মগ্রহণকারী এই সুন্দরী ইম্পেরিয়ার রুপযৌবনে মুগ্ধ ছিলেন পোপ ও রাজা উভয়ে এবং তাঁদের উপর ইম্পেরিয়ার প্রভাব ছিল সীমাহীন।

শহরের এক প্রান্তে ঘন বনজঙ্গলে ঘেরা সুবিশাল এলাকা জুড়ে আছে এ অঞ্চলের গর্ব স্বনামধন্য কন্সটাঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় দশ হাজার ছাত্র নিয়ে সুনামের সাথে এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বিস্তারে অত্র অঞ্চলে ভূমিকা রেখে আসছে সেই ১৯৬৬ সাল থেকে। ইউরোপের সর্ববৃহৎ লাইব্রেরী এই ভার্সিটিতেই। এখানে প্রায় দুই মিলিয়ন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী যারা সামনে জার্মানিতে পড়তে আগ্রহী তারা এখানে চেষ্টা করতে পারে। এখানে ভর্তি প্রক্রিয়া অন্য অনেক নামী বিশ্ববিদ্যালয় হতে অপেক্ষাকৃত সহজ। আর সবই ইন্টানেটের মাধ্যামে সম্পন্ন করা যায়। তবে এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জানা প্রয়োজন যে এই সিটিতে টাকা ব্লক করে রাখতে হয় আর এক বছরের ভিসা পাওয়া যায় মাত্র। বছর বছর টাকা রেখে তা হালনাগাদ করে নিতে হয়।

ঝকঝকে তকতকে রাস্তার এই শহরে ছেলে বুড়ো প্রায় সবাই সাইকেলে যাতায়াত করে। গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। হইচই নেই, কোলাহল নেই, যানপজটের তো প্রশ্নই আসে না। অল্পবিস্তর গাড়ী যাই চলুক না কেন এখন পর্যন্ত এখানে কোন হর্ণের শব্দ কানে আসে নাই। শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে আপেল গাছ। আমি অযাচিত ভাবে গাছ থেকে পেরে খেয়েছি তা। পরে শুনেছি ওসব প্রাইভেট তাই সাবধান হয়েছি। এই শহরে সর্বমোট মানুষ প্রায় পঁচাশি হাজার। উন্নত জীবনমান, উচ্চ মুল্যবোধ আর নিরাপদ জীবনধারা এই শহরের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। এখানে কোন অপরাধমূলক ঘটনা নিকট অতীতে ঘটতে দেখা যায় নাই।

এক পাশে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম কন্সটাঞ্জ লেক অপর পাশে সুবিশাল রাইন নদী। এর সাথে সৌন্দর্য্যের অন্যতম অলংকার যুক্ত হয়েছে দূর হতে দেখা আল্পস পর্বতমালা। এমন অপরুপ ছোট্ট শহরে যেদিকেই নয়ন মেলে তাকানো যায় নির্মল সুশীতল স্পর্শে হৃদয়াঙ্গন নেচে উঠে।
লেখাঃ জাহিদ কবীর হিমন।

সেই কন্সটাঞ্জেই গিয়েছিলাম গতকাল। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে তোলা কিছু ছবি শেয়ার করছি। ক্যাপশন দিতে না পারার জন্য দুঃখিত। তবে সবগুলো ছবিই কন্সটাঞ্জে এবং সুইজারল্যান্ডের সামান্য ভিতর থেকে তোলা।

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×