ব্লগে অনেকেই ধর্ষণ/নারীর প্রতি নিপীড়ন প্রতিরোধে পর্দা /হিজাবের কথা বললেই তাকে ব্লগিয় ধর্ষক উপাধি দিয়ে নিন্দা জানাতে কুণ্ঠা বোধ করছেন না। এখানে সবাই কিন্তু ধর্ষণের শাস্তি চাচ্ছে , এটা প্রতিরোধ করতে চাচ্ছেন সেটা পর্দাবাদী হোক কিংবা পর্দা বিরোধী হোক । নারীর পর্দা হীনতা ধর্ষণের হার বেড়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়, এর চেয়েও অনেক বড় কারন আছে, কিন্তু তাই বলে পর্দা বা শালীন পোশাকের গুরুত্ব অস্বীকার করা যৌক্তিক নয়।
ধর্ষণের বা নারীর প্রতি নিপীড়নের কারন
১। পুরুষের অতিরিক্ত লালসা/ মাত্রাতিরিক্ত যৌন আকাংখাঃ
ধর্ষণের জন্য পুরুষের অতিরিক্ত লালসা/ মাত্রাতিরিক্ত যৌন আকাংখাই দায়ী এটা মানতেই হবে। কিন্তু এটা বর্তমানে ভারতে, বাংলাদেশে এতো বেড়ে গেল কেন। সামাজিক বিশ্লেষণ এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এটাই প্রমাণিত হবে যে কথিত পশ্চিমা আধুনিক বস্তুবাদী জড়বাদী ভোগবাদী কালচারই তার পুঁজিবাদী স্বার্থে সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীকে পণ্য হিসেবে এবং ভোগের উপচার হিসেবে তুলে ধরে অসংশোধিত পুরুষের যৌন লালসাকে uncontrolled কিরে তাকে নরপশুতে পরিনত করেছে। পুরুষের এই অবাধ কামনা দূর করতে হবে এই কালচারের অপনোদন আগে দরকার। আমাদের দেশের নরপশুদের ধর্ষকামী মানসিকতা আগের চেয়ে বাড়ার কারন এই ভোগবাদী পুঁজিবাদী সংস্কৃতির বিস্তার বেড়ে গেছে। বলিউড কালচার আর হলিউড কালচার , পুঁজিবাদী ভোগবাদী কালচার যেভাবে নারীকে ভোগের উপচার হিসেবে তুলে ধরে তাতে অনেক বখাটে লোকের মাঝে ধর্ষকামী মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাকে আড়াল করে সমস্যার সমাধান হবে না। আপনি নারীকে সমাজে, সাহিত্তে, বিজ্ঞাপনে, নাটকে, সিনেমায় ভোগের পণ্য হিসেবে তুলে ধরবেন আর বলবেন ধর্ষণ প্রতিরধের কথা তা হবে না।
২। শাস্তি না হওয়া ঃ ধর্ষণের শাস্তি না হওয়া এর হার বৃদ্ধি করে এটা সবাই জানে। আর বাংলাদেশের কথা বলতেই লজ্জা পাচ্ছি। এই বাংলাদেশেই জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে ছাত্রলীগের মানিক যেখানে মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা সেখানে এই দেশের শাসকগোষ্ঠী তাকে উল্টা সরকারী চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করল।
এবার আসুন দেখা যাক ইসলাম ধর্ষণ বা নারীর উপর যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কি কি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে
ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন। সাথে সাথে কার্যকর করতে বলেছে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় উভয়ের কঠোরভাবে পালনীয় হিজাব বা পর্দা এবং সাব্যস্ত ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
১. ধর্ষণ ও উৎপীড়নের শেকড় শুদ্ধ নির্মূল করার পরামর্শ
বড় বড় সকল ধর্ম নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন জঘন্য অপরাধবলে ঘোষণা করে। ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে কি পার্থক্য ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের? পার্থক্যের বিষয়টা হলে ইসলাম শুধুমাত্র নারী মর্যাদার ওয়াজই করেনা বা ধর্ষণ ও উৎপীড়ণকে ঘৃনার সাথে জঘন্য অপরাধ হিসেবে পরিত্যাগ করতেই বলে না। সাথে সাথে সুস্পস্ট নির্দেশনাও দেয় কিভাবে সমাজ থেকে এই অপরাধ সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ধর্ষকামী মানসিকতা আসে অতিরিক্ত যৌন লালসা থেকে, আবার তা আসে নারীকে শুধুই ভোগ্যপণ্য মনে করলে। নারীকে মানবিক ভাবে না দেখে কেবলি লালসা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ভাবলেই যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে ধর্ষণ পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আগে ঠিক করতে হবে।এজন্য ইসলামে মানুষকে সর্বপ্রকার লালসা, লোভ, পরিহার করে সংযমের শিক্ষা দেয়া হয়, কোরআনে বলা হয়েছে, “ওই ব্যক্তিই সফল যে নিজেকে সংশোধিত করতে পেরেছে” ইসলাম একজন মানুষকে(নারী বা পুরুষ) সব রকমের দুনিয়ার মাত্রাতিরত আকর্ষণ (তা অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতার লোভ, অবাধ ভোগবাদ) থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। তাই প্রাথমিকভাবেই ইসলামি শিক্ষায় বা নৈতিকতায় গড়ে একজন নারী/পুরুষ আত্মিক ভাবেই সংশোধিত মানব। তার পক্ষে এসব নারী নিপীড়নে জড়িয়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
২.পুরুষের পর্দা
হিজাব বা পর্দা ইসলামের একটি বিধান। জ্যোতির্ময় কুরআন প্রথম উল্লেখ করেছে পুরুষের পর্দা। তারপরে তা নারীর জন্য।
(হে রাসূল!) মোমেন পুরুষদের বলোঃ তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে। এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাজত তরে। এটা তাদের আরো পবিত্র হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। (তাদের চরিত্র নির্মাণের জন্য) যা কিছুই তারা করে অবশ্য অবশ্যই আল্লাহ সে সব কিছু সম্পর্কেই খবর রাখবেন। (সূরা নূরঃ ৩০)
যে মুহুর্তে একটি পুরুষ একজন নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলো যদি কোনো ধরনের অশ্লিল চিন্তা মাথায় এসে যায় এই ভয়ে সাথে সাথে তার দৃষ্টি নামিয়ে নেবে।
৩. নারীর পর্দা
কুরআন নারীর পর্দা সম্পর্কে এভাবে বরেছেঃ
আর (হে নবী) মোমেন স্ত্রীলোকদের বলুন! তারা যেন নিজেদের চোখ অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের যথাযথ সংরক্ষণ করে। আর যেন প্রদর্শনী না করে তাদের রুপ-সৌন্দর্য ও অলংকারের। তবে এ সবের মধ্যে যা অনিবার্যভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তারা যেন ঝুলিয়ে দেয় তাদের ওড়না তাদের বুকের ওপর। আর তারা প্রকাশ করবে না তাদের রুপ-সৌন্দর্য তাদের স্বামী অথবা তাদের পিতা অথবা তাদের স্বামীদের পিতা (শ্বশুর) অথবা তাদের পুত্র।(সূরা নূরঃ৩১)
নারীর জন্য হিজাবের পরিধি তার সম্পূর্ণ দেহ আর্বত থাকতে হবে ঢিলেঢালা কাপড়ে। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত এবং মুখ মন্ডল খোলা থাকতে পারে যদি তারা চায়, তা না হলে তাও ঢেকে নিতে পারে। অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ মুখমন্ডল ঢাকারও পরামর্শ দেন।
হিজাব উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করে
নারীকে কেন আল্লাহ হিজাব ধারণ করতে বরেছেন কুরআনে তা এভাবে বলা হয়েছে
হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাগণ এবং ঈমান গ্রহণকারী নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন ঝুলিয়ে দেয়া তাদের নিজেদের ওপর তাদের বড় চাগর জাতীয় কিছু (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাদের পরিচিতির জন্য ন্যুনতম (পোষাক) তাহলে তারা আর উৎপীড়িত হবে না। আর আল্লাহ তো আছেনই ক্ষমা দানকারী দয়াময়। (সূরা আহযাবঃ ৫৯)
কুরআন বলে, নারীকে এই কারণে হিজাব পড়তে বলা হয়েছে যেন তারা রুচিশিলা মহিলা হিসাবে পরিচিত হয়। এটা তাদেরকে উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করবে।
4. ধর্ষকের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদন্ড
ইসলাম নরপশুদের সতর্ক করে দিয়েছে যে তারা যদি ধর্ষণ করে তাহলে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। ধর্ষণের জন্য এই কঠোর শাস্তির বিধান হচ্ছে ইসলামের চতুর্থ রক্ষাকবচ।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী একজন পুরুষ যদি কোনো নারী ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার শাস্তি প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১২