somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিনেতা

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদিন বোটক্লাব থেকে ফিরছিলাম। ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যা মানে রাত ৮টা হবে হয়ত! শহুরে যানজটের কর্মকোলাহল থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই এক প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস নিলাম। তবে দিনের শহরের তুলনায় রাতের শহরটাকে কেন যেনো আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়। অন্যরকম ভালোলাগে আরকি!

বিশেষ করে বাহারি আলোকছটাকে আমি খুব উপভোগ করি। তবে বর্ণালি আলোকছটা ভালোলাগলেও ভালোলাগে না অপরিমিতমাত্রার হর্ন। আমার ধারণা এ দেশের যানচালকেরা হর্নের মাত্রাজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞাত নয়; কিংবা সচেতন নয় হর্নের ভয়াবহ কুফল সম্পর্কেও। এদেশে লাইসেন্স প্রাপ্তির ব্যাপারটা এখন কে—না জানে বলুন? মোদ্দাকথা, বাঙালি মানেই আইন মানার চেয়ে না মানার প্রবণতাই বেশি।

সে যাইহোক। দীর্ঘ জার্নির ধকলে আমাদের অনেকেরই তন্দ্রা ভাব চলে এসেছিল। কেবল আমাদের সঙ্গী—সাথিদের মধ্যে নাবহান আলভি মুক্তই ছিল সবার চেয়ে ছোটো। সবার ছোটো হলে কী হবে? টিমের মধ্যে সে—ই ছিল সবচেয়ে চঞ্চল, বুদ্ধিদীপ্ত আর কর্মঠপ্রাণ। নানা খুনসুটির মধ্য দিয়েই আমরা বাসার দিকে ফিরছিলাম। এটা কেন? ওটা কেন? ওটা ওরকম কেন? এটা কী? ওটা এরকম হলো কেন? এরকম কত—শত প্রশ্ন! কখনো কখনো খুব বিরক্ত লাগত কিন্তু কখনোই উষ্মা প্রকাশ করিনি। করিনি একারণে যে—তার আগ্রহের জায়গাটাকে আমি সাপোর্ট করি, ভালোবাসি। শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে এটা খুবই জরুরি। তাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে; আবার গল্পে কৌতূহলও সৃষ্টি করতে হবে। কৌতূহল সৃষ্টি হলে তারা নিজ থেকেই সক্রিয় হয়ে অংশগ্রহণ করে। পঠনপাঠনেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। তার মনে হলো পড়ার প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।

মুক্তর বহুমাত্রিক প্রশ্নে অন্যরাও খুব মজা পেত। আমিই একাধারে গল্প বলে যাচ্ছিলাম। গল্প শুনতে শুনতে কখন যে সে ঘুমিয়ে গেল কেউ টেরই পেলাম না! যখন টের পেলাম, তখন দেখলাম গাড়ি বাসার একেবারে কাছে চলে এসেছে। গাড়ি থেকে নেমে বাধ্য হয়েই তাকে কোলে নিলাম। একেবারেই গা ছেড়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছিল অন্যদিনের তুলনায় যেনো ওজন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে!

মুক্তর ওজন আঠারো কি উনিশ কেজি হবে! তিন তলার সিঁড়ি পর্যন্ত উঠতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। কেননা, সমস্ত দিনই আমরা হই—হুল্লোর করে কাটিয়েছি। সুতরাং সেদিক থেকে চিন্তা করলে শারীরিক স্টেমিনা অনেকটাই কমে এসেছিল।

যাইহোক, তাকে সরাসরি বেডরুমে নিয়ে গেলাম। বিছানায় শুইয়ে নকশিকাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস নিতেই ছেলেটি হেসে উঠল। কিউটকণ্ঠে বললো— আমি তো ঘুমাইনি, আব্বু! তোমাদের বোকা বানিয়েছি!

আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিস্মিতকণ্ঠে বললাম—মানে কী? মুক্তর সমস্ত চোখেমুখে তখন হাসির বন্যা। অনেকটা মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের মতোই ব্যাপার! পাঁচ বছরের ছেলেটা দেহ—মনে পৃথিবীর সেরা অভিনেতার মতো ভাব এনে বলল— আমি যদি ঘুমের ভাব না ধরতাম, তবে কি আমায় কোলে করে তিন তলায় আনতে?

পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই তো এক—একজন অভিনেতা! কেউ খুদে, কেউবা বৃহৎ, কেউ দক্ষ কেউ বা অদক্ষ! তবে দক্ষদের প্রাপ্তিযোগই বেশি।

কী একটা বলতে গিয়েও আমি থেমে যাই। ওর নিখুঁত অভিনয়ের প্রতি মুগ্ধ হয়ে পরক্ষণে আমরাও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি।

২১শে ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ
মুনশিপাড়া, মধ্যম হালিশহর, চট্টগ্রাম
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:০২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×