somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিস - পর্ব ৫

১৫ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিস পর্ব- ১
সক্রেটিস পর্ব- ২
সক্রেটিস পর্ব- ৩
সক্রেটিস - পর্ব ৪ (এটাকে প্রেম পর্বও বলা যায়)

শায়মা আপিকে কথা দিয়েছিলাম, আমি সক্রেটিস নিয়ে লিখবো। সেই কথা রাখতেই এই লেখা শুরু করা। লেখার শুরুতে মনে হয়েছিলো সক্রেটিসকে ভেঙ্গে চুরে আমার চেনা জানা এক সক্রেটিসকে দেখাবো। কিন্তু লিখতে বসে দেখি তার ব্যাপকতাকে প্রকাশ করতে গেলে এইরূপ আরো হয়তো কয়েকশ পর্ব লিখতে হবে। আসলে যারা এই প্রথম সক্রেটিসের সাথে পরিচিত হচ্ছেন তারা হয়তো বুঝতেও পারবেন না সক্রেটিস সেই সময়ের এথেন্সসীয় সমাজের সংস্কারে কতখানি কাজ করেছেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি এথেন্সের তরুণদের বিপথে নিচ্ছেন। প্লেটো এই অভিযোগটিকে সক্রেটিসের মুখ দিয়ে কিভাবে খন্ডন করিয়েছেন আজ শুধু এই বিষয়টাকেই দেখি।

গ্রিকজগতের রীতি অনুসারে ধর্ম বিষয়ের মামলার বিচার যে আদালতের এখতিয়ারভুক্ত তার প্রধানের নাম রাষ্ট্রপতি আর্খন (বা আর্খনরাজা)। মেলিতস তার ফরিয়াদ এই আদালতেই পেশ করেন।

সক্রেটিস বলছেন, এখানে আসেন, মেলিতস সাহেব, আমার সওয়ালের জওয়াব দেন। দেশের তরুণদের যতটা সম্ভব উন্নতিবিধানের চেয়ে ভালো কাজ আর কিছুই নাই- আপনি নিশ্চয়ই এ কথায় একমত।

-জ্বি, একমত।

তাহলে আসেন, এই ভদ্রমহোদয়দের (বিচারক) বলেন দেখি- কে তাদের উন্নতি বিধান করে? আপনি যখন এ বিষয়ে এতটা খোঁজখবর রাখেন, তখন নিশ্চয়ই উত্তরটা আপনার জানা।

আপনি বলেছেন কে তরুণদের নষ্ট করেছে- অর্থাৎ আমি যে নষ্ট করেছি- সে সত্যটা আপনি জানতে পেরেছেন। তাই আপনিই আমাকে এই আদালতে সোপর্দ করেছেন, এই ভদ্রমহোদয়দের কাছে বলেন দেখি- কে সে যে তরুণদের উন্নতি বিধান করেছে? ওঁদের বলেন, লোকটা কে? দেখলেন, মেলিতস সাহেব, আপনি কিছুই বলতে পারছেন না, কারণ বলবার মতো কোন কথাই আপনার ঘটে নাই। আপনার কি লজ্জাশরম কিছুই হয় না যে আপনি না জেনে শুনে খামোখা মামলা দায়ের করেছেন? এতেই কি প্রমাণ হয় না আমি যা বললাম তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য? বলেন, মহাত্মাজি, কে আমাদের তরুণসমাজের উন্নতিবিধান করছে?

- আইনকানুন।

আমি সে কথা জিজ্ঞাস করি নাই, মশাই। জিজ্ঞাস করছি, এই আইনকানুন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল আছেন কোন মানুষটি?

-আছেন এই মাননীয় ভদ্রমহোদয়গণ, সক্রেটিস।

আপনি কি বোঝাতে চাইছেন, মেলিতস? এঁরা কি তরুণদেরদের শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে উন্নতির পথে নিতে সক্ষম?

-জ্বি, নিঃসন্দেহে সক্ষম।

সকলেই নাকি মাত্র কেউ কেউ?

-সকলেই।

হেরাবিবির কসম, তা বেশ তো। তরুণসমাজের উন্নতি করার মতো লোকের তো দেখি অভাব নাই, আপনার ফিরিস্তিও বেশ লম্বাই। বলুন তো, এই যাঁরা তিনপাশে বিচার দেখছেন এঁরাও কি উপকারির দলে? এঁরাও কি তরুণসমাজের উন্নতিবিধান করেন, না করেন না?

-এঁরাও করেন।

মন্ত্রীসভার সভ্যরাও কি করেন?

-জ্বী, করেন।

কিন্তু, মেলিতস, জাতীয় সংসদ বিষয়ে তো কিছু বললেন না। সংসদ সদস্যরা কি তরুণসমাজকে নষ্ট করে থাকেন, না তাঁরাও সকলেই তরুণদের উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছেন?

-তাঁরাও তরুণদের উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছেন।

মনে হচ্ছে, হেন এথেন্সবি মনুষ্য নাই যিনি তরুণদের সুন্দর চৌকস মানুষ করে গড়ে তুলছেন না, এক আমি ছাড়া একলা আমিই ওঁদের নষ্ট করছি। এই-ই কি আপনার কহতব্য?

-জ্বি, এই আমার বক্তব্য, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই।

আপনার রায় যদি সাচ্চা হয়, তো আমার মতো দুর্ভাগা আর নাই। বলেন দেখি; এ সত্য কি ঘোড়াজাতির বেলায় খাটে? মানে, বলছিলাম কী, দুনিয়ার সমস্ত মানুষই ঘোড়ার উন্নতির জন্য কাজ করছেন, কেবল একজনই তাদের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। নাকি সত্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত?

অর্থাৎ মাত্র একজন কিংবা গুটিকয়েক লোক- যারা সহিস (ঘোড়ার লালন পালন করে যে, আমাদের দেশে গরুর লালন পালনকারীকে বলি রাখাল।) নামে পরিচিত- ঘোড়ার উন্নতি বিধান করেন আর বাদবাকি সকলেই, ঘোড়ার মালিক আর ঘোড়সাওয়াররাই ঘোড়ার ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ান? ঘোড়াই হোক আর অন্য জাতের প্রাণীই হোক সত্য কি তাই নয়, মেলিতস? সত্য, সত্যই, তাই- আপনি স্বীকার করলেও যা, না করলেও তাই। মাত্র একজন লোক যদি আমাদের তরুণসমাজের নষ্টের কারণ হতেন, আর বাদবাকি সকলেই যদি তাদের উন্নতিবিধানের চেষ্টা করতেন, তো দেশটা আমাদের কত সুখের দেশই না হয়ে উঠতো।

মেলিতস, একটা কথা আপনি সন্দেহের উর্দ্ধে প্রমাণ করে ফেলেছেন। আপনি কোনদিন আমাদের তরুণসমাজের উন্নতি অবনতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন নাই। আপনার নির্বিকার ভাবটা আপনা আপনি দশের চোখে পরিষ্কার ধরা পড়ে গেছে। যে অভিযোগে আপনি আমাকে এই আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন সেই অভিযোগের কারণ সম্পর্কে আপনি যে বিন্দুমাত্রও চিন্তা করেন নাই, সেকথা এতক্ষণে সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।

সক্রেটিস এর সওয়াল জওয়াবের একটি নমুনা মাত্র এখানে উপস্থাপন করা হলো। এর মাধ্যমে পাঠকরা সক্রেটিস কিভাবে তার জ্ঞান অন্বেষণ করতেন বা তখনকার সমাজের জ্ঞানী বলে বিবেচিত লোক বলে খ্যাত লোকদের নাকাল করতেন তার একটা উদাহরণ দেখানো হলো।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×