somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্য সমালোচনা (পর্ব - ২)

২৯ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের লেখার ভূমিকা এখানেও প্রযোজ্য।

১ম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

১ম পর্বের পর. . . . . . .

রনীন্দ্রনাথের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটি হলো মনে যা আসতো তিনি তাই লিখতেন। আগের লেখার সাথে পরের লেখার মিল রাখার কোন যৌক্তিকতা উনি খুজে দেখতেন না। তাই কিছুদিন পূর্বে উনি যেখানে লিখেছেন, মরণ রে তুঁহু মম শ্যামসমান, কিছুদিন পর সেই সুর পাল্টে, তার শ্যামের ঘাড়ে লাথি মেরে তিনি বলে উঠলেন মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাচিবারে চাই। এই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায় এবং তিনি বুঝতে পারেন বড় কবি হলে যা খুশি তাই লেখা যায়। তাই একের পর এক পরস্পরবিরোধী লেখা লিখতে শুরু করলেন যাকে তার ভক্তরা উভমুখী দৃষ্টিভঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। তার পরস্পরবিরোধী ভাবধারার লেখার উদাহরণ দিলে আমার এই লেখা মহাকাব্য হয়ে যাবে তাই কেবল দু একটি উদাহরণ টেনে দিচ্ছি যা সাধারণ পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন।
রাহুর প্রেম কবিতায় কবির প্রেমের মাত্রা অধিক ছিল বলে তিনি কিছুতেই তার প্রেমকে ছাড়তে চাইছিলেন না, তাই লিখেছেন
রোগের মতন বাধিব তোমায় দারুণ আলিঙ্গনে
মোর যাতনায় হইবি অধীর আমারি অনলে দহিবে শরীর
নিশিদিন শুধু আমি ছাড়া আর কিছু না রহিবে মনে।
অথবা
পূর্বজনমের অভিশাপ-সম
রব আমি কাছে কাছে ,
ভাবী জনমের অদৃষ্টের মতো
বেড়াইব পাছে পাছে ।
কিন্তু তার এই প্রেম পাল্টে যায় কিছুদিন পর যখন তার জীবনে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে, তখন তিনি লিখেন
........... তারপর যদি তুমি ভুলো
মনে করাব না আমি শপথ তোমার
আসা যাওয়া দু’দিকেই খোলা রবে দ্বার
যাবার সময় হলে যেও সহজেই আবার আসিতে হয় এসো
সংশয় যদি রয় তাহে ক্ষতি নেই তবু ভালো বাস যদি বেসো।
এখান থেকে রবীন্দ্র পাঠকেরা উদ্বুদ্ধ হয় এবং বুঝে নেয় যে প্রেমের ক্ষেত্রে চিরন্তন বলে কিছু নেই। এটা পরিবর্তনযোগ্য।
গীতাঞ্জলী কাব্যে রবীন্দ্রনাথ তার পুরস্কার লাভের আশায় নিজেকে খুব সাহসী এবং প্রভুর প্রতি নির্ভরশীল হিসেবে প্রমান করতে চেয়ে লিখেন
বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয়
অথচ পুরস্কারটা পেয়ে গেলেই তিনি তার ভীতু এবং আসল রূপ তুলে ধরেন, তিনি লিখেন
ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,.
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।

রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লেখক ছিলেন। না, তার সেই নিষ্ঠুরতা লেখার বিষয়বস্তুতে ছিলো না। ছিল পাঠকের প্রতি তার আচরণে। পাঠকের ধৈর্য কিংবা পাঠ করার সীমাবদ্ধতার প্রতি তার কোন নজর ছিল না, এমনকি পাঠকের আর্থিক সংগতির কথাও কোনদিন চিন্তা করেননি তিনি। তাই তার উপন্যাসের দৈর্ঘ্য, কবিতার দৈর্ঘ্য আর রচনার পরিমান সবগুলোই সাধারণ পাঠকের সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জনৈক পাঠকের মতে, রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন বলে তার লেখালেখি করার জন্য কাগজ কলমের অভাব হয় নি। তাই তিনি সারাজীবন শুধু লিখেই গেছেন। পাঠকের এত পরিমান অর্থ আছে কিনা যা দিয়ে তার সমস্ত লেখা কিনে পড়তে পারবে সে চিন্তা তিনি একবারও করেন নি। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এক উঠতি লেখক আক্ষেপ করে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ আমাদের আগে জন্মগ্রহন করায় এত পরিমান লেখা লিখতে পেরেছেন, আমাদের সময়ে এত পরিমান লিখতে পারতেন না। কারণ এখন আমরা যাই লিখতে যাই, গিয়ে দেখি রবীন্দ্রনাথ আগেই তা লিখে বসে আছেন। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথের আগে জন্মগ্রহণ করতাম তবে রবীন্দ্রনাথ এই সমস্যায় পড়তেন। এই হিসেবে রবীন্দ্রনাথ যথেষ্ট ভাগ্যবান লেখক একথা স্বীকার করতেই হবে।
তার সমস্ত লেখা মুটামুটি একই ভাবধারার ছিল প্রেম কিংবা আনন্দ বিষাদ। তার লেখায় কোন বিদ্রোহ নেই, বিজ্ঞান ভাবনা নেই, সন্যাস কিংবা বৈরাগ্য নেই। তিনি শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের মত বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন নি, হিমু হয়ে খালি পায়ে রাস্তায় রাতের বেলা হাটতে পারেন নি, ফেলুদার মত গোয়েন্দাগিরি করতে পারেন নি। মোট কথা চরিত্রের যে বৈচিত্র তা তিনি খুব কম আনতে পেরেছেন তার লেখায়। এ কারণে এত লেখা লিখেও তিনি একটা অনুগল্প লিখতে পারেন নি, লিখতে পারেন নি কোন রম্য রচনা, কোন গোয়েন্দা সিরিজ, ভূতের গল্প, রূপকথা। হাজার হাজার গান লিখেছেন কিন্তু একটা পপ কিংবা ব্যান্ড সংগীত লিখতে পারেন নি। রবীন্দ্রনাথের গানের একটা নিজস্ব ধারা আছে বলে রবীন্দ্রভক্তরা বলেন রবীন্দ্রসংগীত হলো রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট একটা সুরের ধারা যা রবি ঠাকুর নিজে লিখে নিজে সুর করে অনেক ক্ষেত্রে গেয়ে গেছেন। কিন্তু সমালোচকরাও তাকে ছেড়ে দেন নি। অনেকেই এই অভিযোগ করেছেন যে আসলে রবীন্দ্রনাথ এই ধারার বাইরে কোন সুর জানতেন না বা গাইতে পারতেন না। এটা ছিল তার সীমাবদ্ধতা। রবীন্দ্রনাথের একই ধারার গান শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এক শ্রোতা বলে ফেলেছিলেন, তিনি এত লিখলেন, কই একটা নজরুলগীতি, লালনগীতি তো লিখতে পারলেন না। সাধারণ পাঠক নিশ্চয়ই একে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন।

চলবে. . . ...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×