আমাকে রাখা হয়েছে লাশখানায়...
আশে-পাশে অনেক লাশ...
সাড়ি সাড়ি অনেক লাশের মাঝে আমি শুয়ে আছি। আমার দেহটা সাদা কাপড়ে মোড়ানো...
অবশ্য এখানে সবাইকেই সাদা কাপড় মুড়ি দিয়েই রাখা হয়েছে...
আমি এখানে কিভাবে আসলাম, সেটা অনেক্ষণ মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম!
কি হয়েছিলো কী জানি আমার!
তবে এখানে কেউ কাউকে নাম ধরে ডাকছে না! মানুষের অদ্ভুত একটা স্বভাব আছে, কেউ মারা গেলে মানুষটার নামের চাইতে লাশ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সবাই...
আমাকেও এখানের একজনে লাশ বলে সম্মোধন করেছে!
অথচ আমার একটা নাম ছিলো, যে নামে একসময় সবাই আমাকে ডাকতো...
ওই নামে একটা ব্যাংক একাউন্টও ছিলো...
ওই নামে কেউ ডাক দিলে একসময় সাড়াও দিতাম...
আমার ডেথ সার্টিফিকেটেও স্পষ্ট করে আমার নাম লেখা আছে...
অথচ সেই নামে কেউই ডাকছে না!
কত ঢাক-ঢোল বাজিয়ে আমার 'নয়ন' নামটা রাখা হয়েছিলো...
কত মানুষ যে এসেছিলো আমার সেই নামের সাক্ষী হতে...
অথচ আজ আমি কিনা সামান্য একটা লাশ নাম নিয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছি!
আমার এত সুন্দর 'নয়ন' নামের বিলুপ্তি ঘটেছে দেখে খারাপও লাগছে...
লাশখানার বাইরে একজন মহিলার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে...
সম্ভবত বয়স প্রায় ষাটোর্ধ হবে। মা জাতীয় কিছু হবেন হয়তো!
মায়ের সবকিছুই মন থেকে আসে...
হোক ভালোবাসা কিংবা দুঃখ সব সমানে সমান...
অনেকটা বাঘে মহিষের লড়াইয়ের মতন...
এই যে মহিলাটা কান্না করছেন, সেখানে কত কঠিন বেদনা, মায়া, না জানি বুকে কত হাহাকার জড়িয়ে আছে এই কান্নায়...
কী যে মায়া করে কাঁদছে মহিলাটা!
বুঝাই যায়, যার জন্য কাঁদছে, তাকে তিনি কতটা ভালোবাসতেন...
হয়তো, আমাদের মাঝেই তার পরিচিত কেউ একজন আছে! কে জানে!
খুব ইচ্ছে হচ্ছে মহিলাটাকে গিয়ে বলি, আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন? যার জন্য কাঁদছেন, সে তো গভীর ঘুমে। আপনার কান্নায় সাড়া দেওয়ারও শক্তি তার আর নাই...
আর কখনও কাঁদবেন না, আপনার কান্নায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আপনার এই মমতাময় কান্নার শব্দে...
লাশখানায় প্রায় ২০-৩০ টা লাশ...
তিন সাড়ির তিন ভাঁজে লাশগুলো রাখা। কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছে না। কেউ কারও নামেও ডাকছে না। সবার পরিচয় একটাই, সবার নাম একটাই...
লাশ...
নম্বরের লাশ...
ডোম এসে বললো, ওই ১৩ নম্বর লাশটা পোষ্টমর্টামের জন্য নিয়ে যেতে বলেছে...
একি এই ১৩ নম্বর তো আমি!
আমার সিরিয়াল নম্বর তাহলে কী ১৩!
তবে কী আমার নতুন নাম ১৩ নম্বর লাশ?
নয়ন বড়ুয়া
জুন, ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৪