১
২০১৮ সালের ঘটনা। কম সময়ে কীভাবে পার্সপোর্ট বানানো যায়, তার খোঁজ করলাম নানান জায়গায়...
শেষমেষ মেজো দিদির জামাই, ইকরামুল নামে একজনকে ঠিক করলেন...
উনাকে সব বলা হলো। সব শুনে বললেন, কোন সমস্যা নাই, পাঁচ দিনেই পার্সপোর্ট আপনার হাতে...
৭ম দিনেই আপনি ইন্ডিয়া...
বললাম, ৬ষ্ঠ দিনে ইন্ডিয়া কী সমস্যা?
বললেন, ভিসার জন্য এপ্লাই করবেন না? নাকি ভিসা না করেই ইন্ডিয়া চলে যাবেন?
(মনে মনে) আরেহ, এরকমই তো কাউকে খুঁজছিলাম, যাঁর থাকবে এইসব ব্যাপারে হিউজ নলেজ...
২
২য় দিন থেকে পার্সপোর্টের চেয়ে বেশী চিন্তা ইকরামুল ভাইকে নিয়ে। তার সাথে একসপ্তাহ থেকে আমার জটিল এক অভিজ্ঞতা হলো।
প্রথম দিন দেখলাম, তিনি হাঁটতে পছন্দ করেন, এবং হাঁটা নিয়ে লম্বা একটা লেকচার দিলেন...
মনে মনে খুশিও হলাম। যাক মনে হয় অল্প টাকাতেই আমার পার্সপোর্টের কাজ হয়ে যাবে...
নাস্তা করতে কোন হোটেলে ঢুকলে নাস্তার এক পর্যায়ে ড্রামের পানি খেয়েই তৃষ্ণা মেটাতেন...
কিন্তু ২য়দিন থেকে তার কাজের ধরণ দেখলাম অন্যরকম...
আমার কাজের সাথে যুক্ত হলেই সকাল ১১ টা বাজলেই নাস্তার জন্য হোটেলে ঢুকে যেতেন...
দুপুরে লাঞ্চের সময় হলে, ভাতের হোটেলে ঢুকে যেতেন এবং শুরুতেই ওয়েটারকে বলতেন, আগে একটা ১ লিটারি ঠান্ডা পানির বোতল দাও...
আমি তাকিয়ে দেখতাম...
আর উনার চেহারা এমন, "উহুফ বাইরে খুব গরম" টাইপ অবস্থা করে রাখতেন...
সবচাইতে যে প্যাড়াই ছিলাম, সেটা ছিলো রিক্সা...
পাঁচ মিনিটের রাস্তায় রিক্সা ছাড়া চলতে পারতেন না...
উনার নাকি পায়ে সমস্যা। উনি নাকি অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট করেছেন, সেই এক্সিডেন্টে সবাই মারা গেলেও, তিনি বেঁচে গেলেন পায়ের সমস্যা নিয়ে...
দূরের কোন জায়গায় যেতে হলে, হুটহাট সিএনজি ভাড়া করে ফেলতেন...
আমার কাজের বাহানায়, নিজের কাজও সেড়ে নিতেন...
আর বলতেন, এগুলো সব আপনারই কাজের স্বাক্ষর।
একটা কাগজ দেখিয়ে বললেন, দেখেন, আপনার পার্সপোর্টের ফরমের কাগজ...
নাম দেখে বললাম, এখানে তো সুমাইয়া আক্তার লেখা...
উনি যেনো আকাশ থেকে পড়ার ভাব ধরে, হায় হায়! এই আমি কার কাগজ নিয়ে আসলাম!
দেখা যেতো সিএনজির ভাড়া আসতো ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা...
সে এক মহামুসিবতে ছিলাম...
৩
শেষ পর্যন্ত উনাকে দিয়ে কিছুই হয়নি। উল্টো তাঁর টেনশনে আমার ঘুম হারাম...
যেদিন পার্সপোর্টের কাগজ জমা দেয়ার কথা, সেদিন দুপুরে পার্সপোর্ট অফিসে গিয়ে শুনলাম, প্রায় দালাল সকালে গ্রেফতার। কিছু পলাতক। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ইকরামুল ভাইও গ্রেফতার...
আজ চারবছর পর ইকরামুল ভাইয়ের সাথে রাস্তায় দেখা।
বললাম, ভাই কবে আসলেন?
ভাবখানা এমন, উনি আমেরিকা থেকে আসছেন।
- আসছি ভাই এক সপ্তাহ হলো...
- এত বছর লাগলো? এত বছর তো থাকার কথা না!
- বিভিন্ন ব্যবসার ফাইল লীগ হয়েছিলো ভাই, এগুলো মেকাপ করতে পারিনি বলেই আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন...
যাওয়ার আগে একটা দুই লিটারি ঠান্ডা মিনারেল ওয়াটারের বোতল নিয়ে বললেন, ভাই গরম তো বেশি, তাই ইফতারির সময় নিলাম, কিছু মনে কইরেন না ভাই...
নয়ন বড়ুয়া
১০ ই এপ্রিল, ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০২