হে যুদ্ধশিশু,
তুমি জেনে নিও
তোমার জন্য আমার কলমে কোনো কালি নেই।
পিচঢালা রাস্তার উপর জমাট রক্তপিণ্ডের মতো
তোমাদের বাড়ির ভগ্নাবশেষের নিচে পাথর চাপা
সম্ভাবনার মতো
তোমার বাবার থেঁতলে যাওয়া হৃদয়ের নির্বাপিত স্বপ্নের মতো
কিংবা তোমার মায়ের ধর্ষিত উদাস অনুজ্জ্বল চোখের অশ্রুর মতো
কোনো কিছু লিখবার ভাষা আমার জানা নেই।
আমি আজ শুধু জেনেছি-
মানুষই মানুষের কাছে সবচেয়ে অনিরাপদ।
ভালোবাসা মমতা এসব বিলুপ্ত হয়ে গেছে বস্তুবাদী বীর্যপাতে।
আমি তাই নিজেকে আর মানুষ বলে পরিচয় দেই না।
হে যুদ্ধশিশু,
তুমি হয়তো প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে বাধ্য হবে
কারণ তোমার হাতকে আজ আমরাই নির্দিষ্ট
করে দিচ্ছি অস্ত্রের দানবীয় ব্যবহারের দিকে।
তোমাকে ভবিষ্যত সন্ত্রাসী হিসেবে নির্মাণ করছি
কেননা শান্তির নামে তোমাকেই বলি দেয়া হবে পরবর্তী প্রয়োজনে।
আমার বা আমাদের এতে কোনো বিকার নেই
আমরা ভালো আছি নিরাপদ নাতিশীতোষ্ণ ঘরে।
তোমার পাকস্থলির দূরাবস্থা জানার দায় আমাদের নেই।
হে যুদ্ধশিশু,
তুমি জেনে নিও
তোমার জন্য আমাদের চোখের কোণে কোনো অশ্রুবিন্দু নেই।
শুধু তোমার পরিবারের বীভৎস ছবি বিক্রি করে
দু পয়সা কামাতেই আমাদের যা আগ্রহ।
তুমি এবং তোমাকে নিয়ে কাব্য রচনা করে বাহবা
পেতেই আমাদের নির্মল আনন্দ।
তোমার জন্য আমাদের মনে কোনো করুণা নেই;
ভালোবাসা তো নয়ই।
আমরা অপেক্ষা করছি তোমার সহোদরের বুকের দিকে তাক করে থাকা
রাইফেলের শব্দের জন্য;
একটি সুতীক্ষ্ণ আর্তনাদের জন্য।
আমাদের দামী ক্যামেরাগুলোতে তোমার বন্ধুর ছিন্ন মাথার ছবি
জমিয়ে রাখব বলেই- আজ তোমাদের দিকে দৃষ্টি ফেরানো।
আমি শুনতে চাই না -
তোমার স্কুলঘর কে বা কারা গুড়িয়ে দিলো বোমার আঘাতে;
আমার স্কুলগামী ছেলেমেয়ে দুটোর মুখে চুমু দিয়েই আমি আজ পরিতৃপ্ত।
তোমার দুঃখে আমি দুঃখিত নই;
কেননা একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমি এবং আমরা হারিয়েছি
প্রয়োজনীয় মানবিক বোধ।
জেনেছি, মানুষই মানুষের কাছে সবচেয়ে অনিরাপদ;
আর ভালোবাসা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বস্তুবাদী বীর্যপাতে।
হে যুদ্ধশিশু,
তোমার সম্ভাবনা আর তোমার স্বজনদেরকে হত্যা করতে পেরে
আমরা ভীষণভাবে আনন্দিত।
তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা হলো শান্তির নামে দ্বিতীয়বার হত্যা করবার জন্যে।
কিংবা একটা ছবি, একটা উপন্যাস কিংবা গল্প লেখার প্রয়োজনে।
বিশ্বাস করো;
তোমার জন্য আমার বা আমাদের মনে কোনো করুণা নেই;
ভালোবাসা তো নয়ই।
আর এই শেষবার তোমাকে বলি
তোমার জন্য আমার কলমেও কোনো কালি নেই।
গতকাল ব্যাংকের চেক-বইতে সাক্ষর করতে গিয়ে শেষ
হয়ে গেছে আমার কলমের অতি মূল্যবান কালির শেষবিন্দু।
---
লেখাটি সাহিত্য শিল্পের ত্রৈমাসিক প্রতিকথা'র ৩য় সংখ্যায় (গাজা নিয়ে বিশেষ সংখ্যা) পূর্বে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫