somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারুণ সারপ্রাইজ [ অনুবাদ গল্প ]

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অফিস আওয়ারের বাইরে, অফিসের কাজ বাড়িতে করে আমি কিছু টাকা পেলাম। সবমিলিয়ে চার পাউন্ড। প্রথমে ভাবলাম, এলিজার মায়ের কাছে আমাদের যে ঋণ আছে তার খানিকটা শোধ করে দেব। কিন্তু তাকে টাকা পাঠালে, খুব সম্ভবত তা আবার তিনি ফিরিয়ে দেবেন। তাহলে টাকা পাঠানোটাই তো একটা অপচয়। আর আমি একটা পয়সা অপচয় করার মানুষ নই। আবার তিনি যে সত্যি সত্যিই টাকাটা ফেরত পাঠাবেন তাও নিশ্চিত না। যাহোক, আমি টাকার বদলে তাকে দীর্ঘ একটা চিঠি লিখলাম। আমার মনে হয়, তার জন্যে এটাই অনেক বড় মানসিক স্বান্ত্বনা। চার পাউন্ডের ভেতর আমি নিজের জন্য দুই পাউন্ড রেখে দিলাম। এবং সিদ্ধান্ত নিলাম বাকি দুই পাউন্ড এলিজার পেছনে খরচ করার। তার মানে এই না যে, আমি টাকাটা তার হাতে দিয়ে দেব। বরং দারুণ একটা সারপ্রাইজের মাধ্যমে টাকাটা তার পেছনে খরচ করব, এমনটাই ইচ্ছা।

এরকমটা আমি অতীতেও চেষ্টা করেছি। একদিন এলিজা আমার কাছে ছয় শিলিং চাইল। একটা নতুন টি-ট্রে কিনবে, যেটা সেদিন সে দোকানে দেখে এসেছে। আমি ওর কথা শুনে চেয়ারের কাছে গেলাম। বললাম, না লক্ষ্মীটি, আমার মনে হয় এটা করা ঠিক হবে না। আমি ছয় শিলিং ওর ঘাড়ের কাছ থেকে বাড়িয়ে দিলাম। এলিজা জানতে চাইল এই সকাল ন’টার সময় উপরের ঘরে গিয়ে পোশাক খুলতে বাধ্য না করে, কেন আমি তাকে ছয় শিলিং টি-ট্রে'র পেছনে ব্যয় করতে দিচ্ছি না। সুতরাং বলা বাহুল্য, আমার সে চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি।

যাহোক, আমার মাথায় একই সাথে অনেকগুলো বুদ্ধি ঘুরপাক খায়। এইবার ঠিক করলাম, আগে চিন্তা করে দেখব এই মুহুর্তে কোন জিনিসটি ওর সবচেয়ে প্রয়োজন।

সুতরাং রবিবারে চা খেতে খেতে - যেন আমি বিশেষ কিছু বলছি না - এমন একটা ভাব করে বললাম, এলিজা, তুমি কি আমার কিছু কিছু চাও এখন?
হ্যাঁ, আমি এমন একজন চাকর চাই - যে সাড়ে নটার সময় ঘুমাতে যাবে এবং ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠবে। শুধুমাত্র এটুকু যদি করতে পারে তাহলেই হবে।
আমি বললাম, কী বললে ! তোমার কথা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক না। শুধুমাত্র এটুকুই তোমার চাওয়া ! তুমি কি ‘এটুকুই’ বোঝাচ্ছ?
তুমি জানো না আমি কী বোঝাচ্ছি?
আমার মনে হয়, আমি ঠিক ধরতে পেরেছি।
এলিজা বলল, তুমি যদি ঠিক ধরতেই পারো তাহলে আমিও ঠিকই বলেছি।

সেদিন আমরা যখন চার্চে গেলাম, তখনই আবিষ্কার করলাম যে এলিজার এখন একটা নতুন জ্যাকেট দরকার।

পরদিন সকালে আমি একটা কাগজে লিখলাম ‘তোমার নতুন জ্যাকেট কেনার জন্যে, প্রাণপ্রিয় স্বামীর পক্ষ থেকে’। তারপর সেটা ভাঁজ করে তার মধ্যে দুই পাউন্ড গুঁজে দিয়ে ওর পুরোনো জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিলাম। জ্যাকেটটা ওয়ারড্রোবের মধ্যে ঝোলানো ছিল। ওকে কিছু বললাম না। আমার ধারণা ছিল, সে সকালে বাজার করতে যাওয়ার সময় ওটা পরে যাবে। আর বাজারে গিয়ে যখন জ্যাকেটের পকেটে হাত রাখবে তখন নিশ্চয়ই একটা দারুণ সারপ্রাইজ পাবে। আমি শহরের জন্যে বের হবার সময় ওর দিকে তাকালাম। ও জিজ্ঞেস করল, কেন আমি ওর দিকে তাকিয়ে ওভাবে মুচকি মুচকি হাসছি। বললাম, আমার মনে হয় দিনটা শেষ হবার আগে তুমিও ঠিক এমনি হাসবে।

শহর থেকে ফিরে এলিজাকে দেখলাম একদম দরজার সামনে। খুব উৎসাহের সাথে আমাকে বলল, তাড়াতাড়ি এসে দেখে যাও। তোমার জন্যে একটা দারুণ সারপ্রাইজ আছে।

সে আমাকে ড্রয়িং-রুমে টেনে আনল। আমি দেখলাম টেবিলের ঠিক মাঝখানে রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো একটা খুব সুন্দর গাছ, একটা দামি পিরিচের উপর তার বাহারি পাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখে স্বাভাবিক নিয়মেই আমি খুশি হলাম। আমার ধারণা ছিল এলিজা নতুন জ্যাকেট কিনে যে টাকা বেঁচে গেছে তা দিয়ে গাছটা কিনেছে। আর মনে হচ্ছিল এতে সে খুব খুশিও।
আমি বললাম, এলিজা, তুমি নিশ্চয়ই এটা কিনতে খুব বেশি টাকা ব্যয় করনি?
খুব খুশি হয়ে এলিজা বলল , আমি এটার জন্য একটা টাকাও দেইনি।
- ঠিক বুঝতে পারলাম না !
- আচ্ছা শোনো, তুমি নিশ্চয়ই জানো আজ সকালে আমি একটা দারুণ উপহার পেয়েছি।
- হ্যাঁ, সেটা তো জানিই।
- মা তোমাকে আগেই বলেছে? ওহ শোনো, আজকেই মা আমাকে একটা সুন্দর নতুন জ্যাকেট পাঠিয়েছে। তারপর একটা লোক এদিকে এল কিছু সুন্দর চারাগাছ নিয়ে। আর বলল যে তার কোনো টাকার দরকার নেই। যদি তাকে কেউ অপ্রয়োজনীয় পুরোনো কোনো কাপড় দেয়, তাহলেই সে বিনিময়ে চারাগাছ দিয়ে দেবে। তাইতো আমি আমার পুরোনো ছেঁড়া জ্যাকেটটা দিয়ে এই সুন্দর গাছটা নিলাম আর ...

আমার মনে পড়ল যে আজকেই আমি একটা লোককে কিছু গাছ নিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। কয়েক ব্লক সামনেই। আমি বললাম, এলিজা, আমি এক্ষুণি একটু আসছি। আর তারপর দৌড় দিলাম ওই লোকটাকে খোঁজার জন্যে।

লোকটা খুব লম্বা-চওড়া, মুখটা লালচে। সুতরাং তাকে খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হল না। জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, হ্যাঁ। আমিই জ্যাকেটটা কিনেছি। ওটা আমার এই বাক্সের একেবারে তলায় রাখা আছে। আমি ওটা এখনও খুলে দেখিনি। আর এখন বাক্সের তলা থেকে বের করে তা দেখতেও চাই না। আপনি বলছেন যে সেখানে দুই পাউন্ড ছিল। তা হবে। আপনার মত ভদ্রলোক নিশ্চয় আমার মত গরীবের কাছ থেকে টাকা বাগাতে চাইবেন না। সে দুই পাউন্ড যদি ওখানে থেকে থাকে, তাহলে তা এখনো সেখানেই আছে। তার বদলে আমি নিজের পকেট থেকেই আপনাকে দুই পাউন্ড দিয়ে দিচ্ছি। আর আমি জ্যাকেটের পকেট থেকে ওটা নিয়ে নেব। আপনাকে আমার বিশ্বাস হচ্ছে – সৎ মানুষ আমি মুখ দেখলেই খুব চিনতে পারি।

এ কথা বলে লোকটা তার ওয়েস্টকোটের পকেট থেকে আমাকে দুই পাউন্ড দিল। আমি বেশ বিস্ময়ের সাথেই টাকাটা নিলাম। বললাম, আপনি তবুও একবার দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন যে টাকাটা জ্যাকেটের পকেটে আছে কিনা ?
লোকটা বলল, না, না দরকার নেই। ওটা যদি আপনি জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিয়ে থাকেন। তাহলে সেটা থাকবেই। আর তাছাড়া আপনাকে দেখে মিথ্যে কথার লোক বলে মনে হয় না। তা না হলে আমি নিজেই এতক্ষণে চেক করে দেখে নিতাম।

আমি ফিরে আসতেই এলিজা জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার, হুট করে কোথায় গেলে?
প্রসঙ্গ পালটে বললাম, তোমার মা তোমাকে নতুন জ্যাকেট উপহার দিয়েছে। এখন আমাকে একটা নতুন হ্যাট উপহার দিতে দাও। বলেই আমি দুই পাউন্ডের দুটো কয়েন তার হাতে দিলাম।
সে ওগুলোর দিকে তাকাল। বলল, তুমি নিশ্চয়ই দুই ফার্দিং দিয়ে একটা হ্যাট কিনতে পারবে না ! আর তুমি দৌঁড়ে কোথায় গেলে? আর কোথা থেকেই বা এই জ্বলজ্বলে দুই ফার্দিং নিয়ে এলে? একটু সতর্ক না হলে তো দুই পাউন্ডের বদলে যে কেউ এই রকম দুটো ফার্দিং দিয়ে ঠকিয়ে নিতে পারে। তুমি আমাকে ঠকাতে চাইছ নাকি আমার সাথে ফান করছো?

আমি কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পেলাম না। সুতরাং বললাম যে আমি জাস্ট তার সাথে ফান করার চেষ্টা করছিলাম।
‘তোমাকে দেখে কিন্তু মনে হচ্ছে না যে তুমি ফান করছিলে!’
‘ না লক্ষ্মীটি। সত্যিই আমি ফান করছিলাম। আচ্ছা শোনো, হাফ পাউন্ডের ভেতর তুমি যদি একটা নতুন হ্যাট চাও তো জাস্ট মুখ ফুটে বলো।’

সে সম্মতি জানিয়ে আমাকে ধন্যবাদ দিল। আর আমাকে তার নতুন গাছটি পানি দিতে তাকে সাহায্য করতে বলল।
গাছটির দিকে তাকিয়ে এলিজা বলল, কী সুন্দর তাইনা?
আমি বিমর্ষভাবে জবাব দিলাম, হ্যাঁ, দেখতেও খুব দামী।


-----
দারুণ সারপ্রাইজ [ দ্য প্লীজেন্ট সারপ্রাইজ ]
মূল লেখক - ব্যারি পেইন
অনুবাদ – এস এম মামুনুর রহমান [ডি মুন]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৬
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×