somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসল নাম,টাইটেল নাম,বন্ধু নাম

২৪ শে মে, ২০০৮ রাত ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মা,আক্কু মামা তো দুবাই চলে গেল।"
"আক্কু মামা টা কে?"
"ওহহো,সরি,হাসান।"
"তো হাসান বল,আক্কু মামা বললে কেমনে চিনব?"
"কি করব,অভ্যাস হয়ে গেছে তো,ঐ ব্যাটা নিজেও মনে হয় ওর আসল নাম ভুলে গেছে।"

এটাই ব্যাপার। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। কোন এক দৈব দুর্বিপাকে কোন এক বেচারার ঘাড়ে একটা নাম চাপিয়ে দেয়া হল,বাকি জীবন ঐ নাম সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে থাকবে,কখনো কখনো বন্ধুমহল ঐ ভূতো নামটাই চেনে,আসল নামটা হারিয়েই যায়। নইলে এত সুন্দর হাসান নামটা কেন "আক্কু মামা" নামের আড়ালে হারিয়ে গেল,আর কবেই বা হারালো,সেটা স্বয়ং আক্কুও বলতে পারবে না।

তো হয়ে আসছে এরকম,হচ্ছে,আর হবেও। অল্প বয়সে দাঁড়ি উঠে গিয়েছিল বলে এক বন্ধুর নাম দিয়েছিলাম দাঁড়িয়াল ভাই,সেই নাম বাকি স্কুল জীবনেও আর তার পিছু ছাড়ল না। ছোটখাট শান্ত হাসিখুশি স্বভাবের রনির নাম হয়ে গিয়েছিল সুইটি,এখনো হাজারো রনির মাঝে চিহ্ণিত করতে সুইটি নামটাই যথেষ্ট। চশমাওয়ালা শাওনের নিকনেম কানা,কতজনই তো চশমা পরে কিন্তু এই বেচারার কানা নামটা আর ঘুচলো না। মাঝে মাঝে ২-১ জন ভাগ্যক্রমে ভাল নাম পেয়ে যেত,তখন
হৃত্বিক রোশানের ক্রেজ চলছে,সুন্দর চেহারার হামজা পেয়ে গেল হৃত্বিক নামটা,তার ভাব আর দেখে কে! তবে বেশিরভাগেরই কপাল এত ভাল
না,শিক্ষকদের তো না-ই। বেতের বাড়ির শোধ নেবার জন্যই কিনা,মনের সব বিদ্বেষের মাধুরী মিশিয়েই নামগুলি দেয়া হত। আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র অথচ 'জেমস'কে চেনে না,হতেই পারে না। না,গায়ক জেমস না,ইসলামিয়াতের শিক্ষক জেমস,লম্বা দাড়িওয়ালা দুমদাম কিলানেওয়ালা জামশেদ স্যারকে দেখলেই বুঝা যেত জেমস নামটা কত বড় আয়রনি:) এই তো,বছর দুয়েক আগে,বুয়েটের বাসে যাচ্ছি,আইডিয়াল স্কুলের সামনে দিয়ে যাবার সময় এক বড় ভাই হঠাৎ বলে উঠল ঐ দেখ মুরগী যায়। তাকিয়ে দেখি আরে এতো সেই মুরগী,মাসুদ স্যার। কঁক কঁক করেই কথা বলতেন মনে হয়,ছোটখাট মানুষটার জন্য নামটা ভালই মানায়। 'বাটপাড়' বললেই এখনো শুকনো পাতলা রফিক স্যারের চেহারাটা ভেসে ওঠে,নামটা বেমানান তাও বলি না,তবে দাড়িওয়ালা লম্বু সালাম স্যারের নাম কিভাবে "বোগাস বু" হয়ে গেল,উদ্ধার করতে পারিনি এখনো। তবে এটা ঠিক,তার আসল নাম কম ছেলেরই মনে আছে।লম্বা করে দেখতে অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারের নাম আজীবন 'বগা' বলেই জানতাম,আর বাশার স্যারের সহকারী হিসাবে যে নতুন পিটি শিক্ষক এসেছিলেন,তার আসল নাম আমিও ভুলে গেছি,'বিসি' (বাশারের চামচা:)) নামটাই শুধু আমার মনে আছে,কেউ কেউ 'সুজা' বলেও ডাকত,যদিও সেটা তার নাম না,সোজা কে একটু উচ্চারণদোষে সুজা বলতেন বলেই বেচারার কপালে এই দুর্ভোগ। সোহরাব আলী হয়ে গিয়েছিলেন 'চোরাবালি',কাদের স্যার হয়েছিলেন 'কাদুমাঝি',আর নতুন এসেই বেত্রাঘাতের জন্য কুখ্যাতি পাওয়া নুরুল হক হলেন 'রিকশাওয়ালা',সেটা তার বেত্রাঘাতের বিরক্তি বা ডাণ্ডিভাঙ্গা চশমা,যেকোনটার কারণেই হতে পারে। এর মাঝেও যে প্রচণ্ড মেজাজী শফিক স্যার কিভাবে শ্রদ্ধাভরে 'টাইগার' নামটা পেয়ে গিয়েছিলেন,সেটাই এক রহস্য,যেখানে বকর স্যারকেও ছেলেরা আড়ালে 'বকরি' বলে ডাকত। কালাম স্যারকে একদিন একটু জোরে 'কালু' বলে ডেকে একজন তো একবার টিসি খাওয়া থেকে কোনরকমে বেঁচে গেল।

কলেজের শিক্ষকরাও এই নামের আগ্রাসন থেকে ছাড় পাননি। ফাদার বকুলকে বকুলাপ্পু,ফাদার বেনজামিন কে বেনজু,আর জহরলাল স্যার হলেন 'লালী',তখন আবার মীনা কার্টুনে 'লালী' নামের একটা গরু বেশ হিট করেছে:) জুনিয়র শিক্ষকদের বিড়ম্বনা আরো বেশি,তিতাস রোজারিও একদিন ক্লাসে ঢুকেই দেখেন বো্র্ডে বেশ বড় করে লেখা- 'তিতা বাঁশ'।হেসে বোর্ডটা মুছে বললেন,এই বয়সে আমরাও করতাম। তাতে সামনে তিতাবাঁশ ডাকা বন্ধ হলেও,আড়ালে নামটা রয়েই গেল। পরিসংখ্যানের খান মোঃ শরীফের ডাকনাম ছিল 'খা-মোষ',সেটা তিনি জানতেন না এমন বলা যাবে না,তার বাসার দরজাতেও কে জানি লিখে
রেখেছিল,তবে এই নিয়ে বিশেষ আগাতেন না,কে জানে প্রতিবাদ করলে আবারো কি ভয়ংকর নাম আসে! সবাই এতটা সহনশীল না,কাজেই স্ট্যানলি ফিউজ যেদিন ক্লাসে ঢুকে দেখলো যে বোর্ডে ১টা বড়সড় বাল্ব এঁকে সেটাকে কেটে দিয়ে নিচে লেখা 'ফিউজ',সোজা বকুলাপ্পুকে ডেকে আনলো,কাজের কাজ যা হল,ফিউজ নামটাই স্থায়ী হয়ে গেল।:)

ভার্সিটিতে এসে নামের আরো বৈচিত্র্য দেখলাম,বাহারের সাথে ভয়ংকরত্বেও এগিয়ে। কেমিস্ট্রির এক স্যারের নাকি ৪টা বউ(শোনা কথা অবশ্য),সবাই ডাকে লুইস,একি নামের আরো কয়েকজন শিক্ষক আছেন,কাজেই আলাদা করতে টাইটেলটা লাগে। অনবরত ঘামেন বলে এক স্যারের নাম ছিল ঘামা,সেই নাম বিবর্তিত হয়ে এখন হয়ে গেছে 'গামা'। 'পাগলা' বললেই সিভিল ডিপার্টমেন্টের অনেক ছাত্রই একজন মাত্র শিক্ষককেই বুঝে থাকে,একিভাবে চরম বদমেজাজী এক শিক্ষকের 'বিডিআর' নামটা এতই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে যুগ যুগ ধরে যে এখন অনেকে তাঁর সত্যি নামটাই জানে না।'বদু' নামটাও জনৈক শিক্ষকের ভয়াবহ প্রশ্নের ফল,আসল নামটা বললাম না,ভুক্তভোগীরা বুঝে নেবে। 'কোপা শামসু' কে কেউ না চিনে পারেই না,আর সেদিনই ১টা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম এক শিক্ষকের প্রশ্নে,ফ্লুইড মেকানিক্স কে পড়িয়েছিলেন তার জবাবে আমার খালি মাথায় ঘুরছে ক্লাস নিতেন 'নানা',কিন্তু সেটা কি আর বলা যায়?:(

বৈচিত্র্য বন্ধুমহলের নামেও আছে,ফার্স্ট বয় আদনান যেমন আজীবনের জন্যই 'আদু ভাই' নামটা জুটিয়ে নিয়েছে,আর চরম পড়ুয়া স্বপনের নামের সাথে লেগে গেছে 'রোবট' টাইটেল। একি ক্লাসে ২টা সনেট থাকায় একজন হয়ে গেল 'গুরু সনেট',আর মোটাসোটাটা হয়ে গেল 'তবলা সনেট।' তাবলীগি রিয়ালের নাম ছিল 'ডিসকো মোল্লা',আজকাল দাড়ি কামিয়ে সেই নামটাই সার্থক করছে সে। ৬ ফুট লম্বা মাহফুজকে আমরা এখন 'টম' বলেই ডাকি,উৎপল তার আসল নামের বদলে 'নূরা পাগলা' নামেই বেশি পরিচিত। তিন-তিনটা রাসেলকে আলাদা করতেও টাইটেল লাগে,কোই বাত নেহি,এক রাসেল হয়ে গেল 'গবু',একজন কান্দু মিয়া,আরেকজনের চুল পাকা বলে সে হয়ে গেল 'বিপি' (এটার পুরাটা বললাম না,বুদ্ধিমানেরা অনুমান করে নিন)।এক বন্ধুর ডাক নাম 'দুলা মিয়া',কারণ সবার আগে তার প্রেম হয়েছিল, এরপর তো কতজন প্রেম করে বিয়েও করে ফেলল কিন্তু সে আজীবন 'দুলা'-ই রয়ে গেল। চুল কম মাথায় একজনের,নাম হয়ে গেল টাক্কু,অচিরেই নামটা সার্থক হবে,এমন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি আজকাল। মেকানিক্যালের 'পৈতা'র আসল নামটাই জেনেছি শেষ বছরে এসে,আর মুহাহাহা হাসিতে ক্যাফে কাঁপানো 'পশু'-র আসল নাম কি,সেটা মনে হয় বন্ধুবান্ধবরাও মনে করতে বেশ সময়ই নেবে। ক্যাফেতে ক্রিকেট খেলার সময় প্রতিপক্ষ ডিপার্টমেন্টের চর্বিওয়ালা এক ছেলের নাম দেয়া হল 'দুলদুল',শুনতে পাচ্ছি নিজের ডিপার্টমেন্টেও তার দুলদুল নাম স্থায়ী হয়ে গেছে। ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে করা শৌখিন ফিল্মে এক জুনিয়রকে পর্দায় দেখে এক বন্ধু অডিটরিয়াম ভরা দর্শকের সামনে চিৎকার করে উঠল--"মালিকায়ে হামিরাহ্",আর যায় কোথায়,নামটা তৎক্ষণাৎ টপচার্টে উঠে গেল,নামের মালকিন যদিও তাতে বিশেষ আনন্দ পায়নি।

এখন মাঝে মাঝেই ভাবি,আহা কি সব দিন গেছে! নামগুলো কত আনন্দের সাক্ষী,কত দিনের স্মৃতি,কে বলে নামের কোন দাম নেই? আবার যখন অনেক বছর পরে বন্ধুদের সাথে দেখা হবে,এরকম অদ্ভুত ডাকনাম দিয়েই কি ডাকবো? কেন জানি মনে হয়,ডাকবো,আর ডাকলে,সাড়া না দিয়ে যাবে কোথায়। হয়তো রাস্তায়,ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে এক মুহূর্তের জন্য কেউ ডেকে উঠবে,এই ব্যাং,কই যাস? এখনকার মতই দাঁতগুলো বের করে বলবো,কাজ আছে মামা,ক্যাফেতে বস,এখনি আইতাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৮ রাত ২:২৯
৫০টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×