somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সলতে-০১

২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"বেয়াইন আপনি বেয়াইর কাছে শোন?”-বয়স্ক দুইজন নারীর কথোপকথনের এক বিশেষ মুহুর্তের আলোচনার প্রসঙ্গে।ছেলেমেয়ে,নাতি-নাতনী আছে।এ সময় স্বামী-স্ত্রী এক খাটে ঘুমানো যায়!দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি কাল আগে থেকেই স্বামীর খাটে ঘুমাতে পারেনা।স্বামী রিটায়ার্ড।এক খাটে ঘুমাবে।খুনশুটি করবে।বিপদে আপদে সেবা শুশ্রূষা করবে -সে ভাগ্য অপর্নার নেই।এক বছর মারাত্মক অসুস্থ অপর্না।এর আগে স্বামীর সেবা শুশ্রূষা করতে পেরেছে।এখন আর তা পারে না।নিজেরটাই সবকিছু নিজে করতে পারেনা।ছেলেরা পুতের বৌয়েরা সাহায্য করে।অষুধ নিজে বুঝে খেতে পারে না।দীর্ঘ এক বছর মারাত্মক অসুস্থতা শেষে এখন অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন।
বিয়ের পর সেই যে সংসারের ঘানি টেনে বেরাচ্ছেন অপর্না তার মুক্তি অসুস্থতার মাধ্যমে হয়েছে।৭০ বছরে এসে কাজের মুক্তি হয়েছে বটে কিন্তু সবকিছু থেকে কী মুক্তি পাওয়া যায়!অষুধ খেতে চাইলে শুনতে হয়-তোমারটা তুমি খেয়ে নিতে পারোনা।মানসিক ভারসাম্য হারালে যা হয়- পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাভাবে ওয়াশরুমের কাজ সারতে পারেনা,পানির বোতলে মুখ না লাগায়ে খেতে পারেনা,ভাত খেতে বসলে মাঝে বেশি ভাত হয়ে গেলে তা উঠায়ে দিতে গেলে কথা শুনতে হয়,দাঁত মাজা ব্রাশ নিজেরটা উল্টায়ে যায়,নিজের থালা নিজে ধুতে পারেনা,ওয়াশরুমে গেলে স্যন্ডেল পরতে মনে থাকেনা-দরজা আটকাতে মনে থাকেনা ইত্যাদি।স্বামী তাকে সহযোগিতা করবে কী! আরো বলে লক্ষীছাড়ি,আপদা...।অসুস্থ হওয়া আগে এমন খারাপ কথা বলতো-কখনো কখনো গায়ে হাত তুলতো।এর জন্য ছেলেদের কাছে বলতো ,”তোর বাবা আমাকে ...করেছে,আমি আর বাঁচতে চাইনা,আমি গলায় দড়ি দেবো”।ছেলে মেয়েরা বুঝায়ে শুনায়ে রাখতো।বাবা শিক্ষিত তাই তাঁকে কিছু বলতে পারতোনা তারা।এই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এর ফলে একসময় মুখ বুজে কাতরায়ে কাতরায়ে কাজ করে যেত।তাঁর শরীর ভালোনা বল্লে-উল্টো বলতো না আমার কিছু হয়নি।
ডাঃ দেখাতে বেশ কিছুদিন ছেলের কাছে আছে।তাতে সে চিন্তা করে বাড়ি গেলে তাকে ঘরে উঠতে দেবে কীনা?ছেলেকে বলে,”আমাকে একটু বাড়ি এগিয়ে দিয়ে আসবি?”কেন-জিজ্ঞেস করলে বলে-“তোর বাবা আমাকে লক্ষীছাড়ী,আপদা বলে, ভয় করে”।এ যেন নিজ ঘরে পরবাস।নারীদের এ কী নির্মম পরিনতি!যে গৃহিনীর নিজস্ব আয় নেই তার পরিনতি মনে হয় খুবই বিপদজনক।তার অসুখ হলে তাকিয়ে থাকতে হয় কখন ডাঃ দেখাবে ...আরো কতোকিছুর জন্য অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হয়।
সংসারে ভালোটা ছেলেকে খাওয়ায়,ভালোটা ছেলেকে পরায় ছেলের কামাই খাওয়ার জন্য।মেয়ের জন্য বিয়েরতা গুছায়,কোথায় কার কাছে বিয়ে দেবে।বিয়েটা যদি ভালো এক জায়গায় হয় তবে সবাই খুশি।আর মনের সাথে না মিললে বোঝায়-মানিয়ে নিতে হবে,চেস্টা করতে হবে...ইত্যাদি।শুরু হয় মানিয়ে নেবার পালা।মানিয়ে নিতে নিতে কখন যে মানসিক রোগী হয়ে যায় তা সে জানেনা।শুরু হয় প্রিয়জনের অবহেলা।
অপর্নাও বিয়ের শুরু থেকে স্বামীর সাথে সাথে শ্বশুর,শাশুড়ি,দেবরদের যত্ন-আত্ত্বি করে এসেছে।এরপর ছেলে মেয়ে মানুষ করাতে গেছে দেহ মনের সারাংশ।শীতের ভোর রাত্রে ধান সিদ্ধ,সকালে তা রোদে দেয়া-শুকানো,শুকালে বিকেলে ঢেঁকিতে ধান ভানা,তা রান্না করা,বর্ষাকালের জন্য তা গোলা ভরে রাখা এটা ছিলো নৈমিত্তিক কাজ।ভোর ০৭টার মধ্যে ডাল ভাত রান্না করা,তা টিফিন ক্যারিয়ারে দুপুরের জন্য গুছায়ে দেয়া।তিনবেলা রান্না করতে হতো-কেননা তিনবেলা গরম খাওয়াতে হবে।মাটির ঘর লেপ দিয়ে রাখতো তিন চার দিন পর পর,যেন কেঁচো না মাটি ক্ষুরে ওঠে।কাপড়-চোপড় সবসময় সবার রাখতো ধবধবে।থালা গ্লাস থাকতো ঝকঝকে,শ্যলো টিউবয়েলের জলের আয়রনে দাগ ফেলতে পারতোনা তার থালাবাসনে।কোথাও বেরানো,ঘুরতে যেতে পারতোনা রান্নাবান্নার বিকল্প লোক ছিলোনা।পুজোআচ্ছায় সবাইকে খুশি রাখতে যা করার তাই করেছে,শহরে পুজোর সময় ঘুরতে যাওয়া সব সময় হয়ে উঠতে না তার।ঘরে বিনোদনের জন্য ছিলোনা টিভি রেডিও।যে সময় ঘরে টিভি এসেছিলো তখনো তার প্রতি ছিলোনা কোন ইন্টারেস্ট।অনেকে বুড়ো হলে টিভিতে সিরিয়াল দ্যাখে সিনেমা দেখার নেশা হয়-তা কখনো হয়নি তার।ছিলো পানের,চায়ের নেশা তাও রোগে পরে কেটে গেছে।এখন তিনবেলা ক্ষুধা পেলে খেতে দিলে হলো।আর ওষুধ হাতে তুলে দিলে হলো।কাজের মায়া কেটে গেছে প্রায়।তারপরও বাড়ি থেকে ছেলেদের বাসায় গেলে বাড়ির বৌমা ঠাকুর ঘর সারতে পারলো কিনা তারও চিন্তা করে।ছোট নাতি কী করে,তার স্বামী কেমন আছে-কী করে জানতে চায়।
সলতের মতো নিজেকে জ্বালিয়ে সবাইকে আলোকিত করে নিশ্বেস করাতেই এমন নারীদের স্বার্থকতা।
বিদ্রঃব্যবহৃত ছবিটি নেট থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৫৪
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×