আততায়ী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপ প্রায় পয়েন্ট ব্ল্যানক রেঞ্জ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথম বুলেটটা ছুড়েছিল, আর তার অব্যর্থ হাতেই ঠিক ৪র্থ বিবাহবার্ষিকীর দিনই নিহত হলেন হাবসবার্গ রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড আর তার স্ত্রী কাউন্টেস সোফি।
সোফি ছিলেন সাধারন কাউন্টেস, তাই হাবসবার্গ রাজপরিবার তাকে আমৃত্যু আর্চডাচেস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি; আস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য অথবা হাংগেরির রাজত্বের ভাবি উত্তরসূরি আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ডকেও মুচলেকা দিতে হয়েছিল এই মর্মে যে সোফির ঘরের সন্তানদের কেউই রাজকীয় উত্তরাধিকারী হতে পারবেন না। বিয়েটাকে অনেকেই তাই হাবসবার্গ রাজবংশের জন্য কুফা ভাবত।
ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড ছিলেন আস্ত একটা গাড়ল, কিন্তু তিনি যে সোফিকে ভীষন ভালবাসতেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ ছিলনা। আর্চডাচেস না হবার কারনে সোফি কখনও ভরা মজলিসে তার পাশে বসতে পারতেন না, কিন্তু অস্ট্র-হাংগেরিয়ান আর্মির ইন্সপেক্টর জেনারেল আর ফিল্ডমার্শাল ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড এর স্ত্রী হিসেবে সোফি স্বামীর সাথে সামরিক অনুষ্ঠানাদিতে একসাথে যেতে পারতেন। সেজন্যই, ২৮ জুন ১৯১৪, বিবাহবার্ষিকীর দিন ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড সস্ত্রীক বসনিয়ান সেনাবাহিনী পরিদর্শনের দিন ধার্য করলেন যেন পাশাপাশি বসে মোটর শোভাযাত্রায় যোগ দিতে পারেন।
বসনিয়া আর হার্জেগোভিনা সবে বছর ছয়েক হল হাবসবার্গদের করায়ত্ত হয়েছে, যারা আদতে সার্বিয়ার সাথে গাঁটছড়া বাধতেই বেশি আগ্রহী ছিল, আর তাই সারাক্ষন হাবসবার্গ কর্মকতাদের হেনস্থা করতে মুখিয়েই থাকত এরা। এই তাতানো পরিস্থিতিতে ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড আসছেন শুনে ছয় স্থানীয় তরুন মিলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল।
২৮ জুন যথাসময়ে আর্চডিউক সস্ত্রীক সারায়েভো পৌছে গেলেন। পথে এক আততায়ী সময়মত পিস্তল বের করার আগেই আর্চডিউকের গাড়ি পেড়িয়ে গেল, আরেকজন সোফিকে দেখে মায়া লাগায় অস্ত্র বের করতে গিয়েও পিছিয়ে এল, তৃতীয়জন একটা হাতবোমা ছুড়ে মারল এবং সেই বোমাটাও ফস্কে গেল একটুর জন্য। পরিস্থিতি আচ করতে পেরে ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড দ্রুত শহর ত্যাগ করতে চাইলেন, কিন্তু তার গাড়ি চালক ভুল পথে মোড় নিতেই দৈবক্রমে আততায়ী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপের সামনে পরে গেলেন।
এমন চরম নাটকীয়তা সম্ভবত বিশ্বযুদ্ধ পর্যায়েই মানায়। যাহোক, এ ঘটনা অথবা দূর্ঘটনা থেকেই কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯