somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালিদের ইয়ারমুখ যুদ্ধ (কিস্তিঃ তিন)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিস্তিঃ১
http://www.somewhereinblog.net/blog/delHkhan/30109019

কিস্তিঃ২
http://www.somewhereinblog.net/blog/delHkhan/30109091


ম্যানিয়াহ কি হেরাক্লিয়াসের মেয়ে ছিলেন নাকি নাতি, তা নিয়ে ঐতিহাসিক ডাউট আছে। মুসলিম আর্মি তখন একই সময়ে সিরিয়ান ফ্রন্টে হেরাক্লিয়াসের বাইজান্টাইন আর্মির বিরুদ্ধে আর পার্সিয়ান ফ্রন্টে ইয়াজদেগার্ডের পার্সিয়ান আর্মির রিরুদ্ধে লড়ছিল। তাই মুসলিম আর্মির বিরুদ্ধে অল আউট কাউন্টার এটাকটা লঞ্চ করার আগে হেরাক্লিয়াস একটা ইন্টারেস্টিং স্ট্রেটেজিক চাল চাললেন; তিনি পার্সিয়ান সম্রাট ৩য় ইয়াজদেগার্ডের সাথে ম্যানিয়াহর বিয়ে দিয়ে দিলেন। রাজনৈতিক এই বিয়ের উদ্দেশ্যই ছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে বাইজান্টাইন কাউন্টার এটাকের সময় পার্সিয়ান এলায়েন্স শতভাগ নিশ্চিত করা।

হেরাক্লিয়াসের স্ট্রেটেজিক প্ল্যান ছিল সিরিয়ান ফ্রন্টে যখন বাইজান্টাইনরা হামলে পরবে তখন একই সময়ে পার্সিয়ান ফ্রন্টেও ইয়াজদেগার্ড আক্রমন চালাবে যেন মুসলিম আর্মি একইসাথে দুই ফ্রন্টে লড়তে বাধ্য হয়; আর সিরিয়ান ফ্রন্টকে রি ইনফোর্স করার জন্য পার্সিয়ান ফ্রন্ট থেকে কোন ফোর্স যেন পুল করতে না পারে। স্ট্রেটেজিক এই ডেভেলপমেন্টটা খলিফা উমরের গোচরে আনার পরামর্শ দিয়ে খালিদ ট্যাক্টিক্যাল ব্যাটেলফিল্ডের ডেভেলপমেন্টের দিকে নজর দিলেন। গোয়েন্দা প্রধানদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাজানো ওয়ারগেম টেবিলের দিকে তাকিয়ে খালিদ-উবায়দা সহ সব মুসলিম কমান্ডারদের কপালের দুশ্চিন্তার রেখা গভীরতর হয়ে উঠল।

৬৩৬ সালের জুনের মাঝামাঝি বাইজান্টাইন আর্মি এন্টিওখ আর উত্তর সিরিয়ার ছাউনি ছেড়ে বেরিয়ে এল। প্রথম টার্গেট সম্প্রতি আবু উবায়দা আর খালিদের মুসলিম আর্মির কব্জায় চলে যাওয়া এমেসা উদ্ধার করা। প্রথমেই হেরাক্লিয়াসের ছেলে প্রিন্স কন্সট্যানটাইন-৩ ক্যাসারির পথে রওয়ানা দিলেন ক্যাসারির বাইজান্টাইন গ্যারিসনকে রিইনফোর্স করতে, যেন ক্যাসারি অবরোধ করে রাখা ইয়াজিদের মুসলিম আর্মিকে এমেসা অভিযানের সময় পর্যন্ত এনগেজ করে রাখা যায়।

জেনারেল কানাতীরের মিশন ছিল এমেসা বাইপাস করে উপকূল ধরে দ্রুত বৈরুত হয়ে দামেস্ক দখল করে দামেস্ক থেকে এমেসা যাবার লাইন অব কমুনিকেশন কাট অফ করা; আর এমেসায় ঘাঁটি গেঁড়ে বসা উবাইদা-খালিদের মুসলিম আর্মিটাকে আইসোলেট করে ফেলা, যেন পেছন থেকে কোন রসদ বা রিইনফোর্সমেন্ট মুসলিম আর্মির কাছে পৌছাতে না পারে, আর আক্রান্ত হবার পর একজন মুসলিম সেনাও পিছু হটে কিংবা জীবিত পালিয়ে যেতে না পারে।

প্রিন্স জাবালাহর মিশন ছিল এলেপ্পো থেকে সোজা এমেসার দিকে এগিয়ে গিয়ে উত্তর দিক থেকে মুসলিম আর্মিকে ফ্রন্ট থেকে এনগেজ করা। আর জেনারেল দাইরজানের মিশন ছিল জাবালাহ যখন মুসলিমদের সামনে থেকে এনগেজড রাখবে তখন পশ্চিম দিক থেকে ফ্ল্যাঙ্কিং মুভ করে এগিয়ে এসে মুসলিমদের বাম ফ্ল্যাঙ্কে আক্রমন করা। জেনারেল গ্রেগরির মিশন ছিল মেসোপটেমিয়া হয়ে উত্তর পূর্ব দিক থেকে এগিয়ে এসে মুসলিম আর্মির ডান ফ্ল্যাঙ্কে হামলে পরা। ফিল্ড কমান্ডার জেনারেল ভাহান তার অপারেশনাল রিজার্ভের সাথে জাবালাহর আর্মির পেছনেই থাকবেন।

প্রথমেই খালিদ মুসলিম আর্মির ডেপ্লয়মেন্টের দিকে সবার দৃস্টি আকর্ষন করলেন। আমর বিন আসের আর্মি প্যালেস্টাইনে, সুরাবিলের আর্মি জর্ডানে আর ইয়াজিদ ক্যাসারি অবরোধ করে আছে। এমেসা পেছন দিয়ে কাট অফ হবার পর তিন দিক থেকে আক্রান্ত হলে বেলিজারেন্ট রেশিওতে এতোবেশি ফারাক তৈরি হবে যে কোনভাবেই পরাজয় এড়ান সম্ভব না। খালিদ সানজুর নাম শুনেছিলেন কিনা সে ব্যাপারে কোন ঐতিহাসিক বক্তব্য পাওয়া যায় না। তবে তিনি কাকতালীয়ভাবে ঠিক সানজুর মত করেই ভাবলেন; অভিজ্ঞ যোদ্ধা খালিদ ভাল করেই জানতেন কোন যুদ্ধ লড়তে হয় আর কোন যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে হয়।

এমেসার ওয়ারগেমিং কনফারেন্সের সব অফিসার আর এমেসা থেকে বহুদূর এলেপ্পোতে বসা হেরাক্লিয়াসকে অবাক করে দিয়ে খালিদ বিন ওয়ালিদ, দ্য সাইফুল্লাহ সব মুসলিম আর্মিকে অনতিবিলম্বে এমেসা থেকে পিছিয়ে দামেস্ক পেরিয়ে আরো দক্ষিনে গোলান হাইটের কাছাকাছি জাবিয়াতে কনসেন্ট্রেট করার যুগান্তকারী নির্দেশ দিলেন। এতে প্রায় একই সময়ে চার স্থানে বিচ্ছিন্ন মুসলিম আর্মিগুলো একত্র হবার সুযোগ পাবে আর খলিফা উমরের জন্যও রিইনফোর্স পাঠানো আরো সহজ হবে। তাছাড়া জাবিয়ার প্রান্তর খালিদের দুর্ধর্ষ অশ্বারোহী বাহিনীর কাভ্যুলরি চার্জের জন্য আদর্শ টেরেইন।

নতুন সিদ্ধান্তটি নিয়ে দ্রুততম অশ্বে সওয়ার হয়ে রাজদূতেরা ছুটে চলল খলিফা উমর, আমর, সুরাবিল আর ইয়াজিদের উদ্দেশ্যে। যেহেতু মুসলিম আর্মি এমেসা ছেড়ে পিছু হটছে তাই আবু উবায়দা এমেসার জনগনের কাছ থেকে নেয়া সমুদয় জিজিয়া কর ফেরত প্রদানের নির্দেশ দিলেন। যুদ্ধের এই অবস্থায় খলিফা উমর তার প্রথম স্ট্রেটেজিক চালটা চাললেন। পার্সিয়ান ফ্রন্ট ঠান্ডা রাখতে তিনি পার্সিয়ান সম্রাট ইয়াজদেগার্ডের দরবারে নেগোশিয়েটর পাঠালেন যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়ে।

এমেসা থেকে মুসলিম ফোর্সের জাবিয়াতে ট্যাক্টিক্যাল রিডেপ্লয়মেন্টের সিদ্ধান্তের কারনে হেরাক্লিয়াসের গোটা ক্যাম্পেইন প্ল্যান বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেল। (শত্রুর প্রেশারে পিছিয়ে আসাকে আমরা বলব রিট্রিট। আর নিজের সুবিধার জন্য পিছিয়ে আসাকে বলব ট্যাক্টিক্যাল রিডেপ্লয়মেন্ট।) ইয়ারমুখ যুদ্ধক্ষেত্রে খালিদের মেনুভার আর কভ্যুলরি ট্যাক্টিক্স বাদেই, স্রেফ এই ট্যাক্টিক্যাল রিডেপ্লয়মেন্টের ট্রাম্পকার্ড ডিসিশনের কারনেই খালিদকে সমর ইতিহাসে আলাদা করে স্মরন করা হয়।

ব্যাটেলফিল্ড এমেসা থেকে জাবিয়া শিফট করায় বিচ্ছিন্নভাবে মুসলিম আর্মিকে ধ্বংস করার হেরাক্লিয়াসের বড় সাধের প্ল্যানটাই ভেস্তে গেল। যাহোক, অনিচ্ছা সত্বেও হেরাক্লিয়াস তার কন্টিজেন্সি ভাবতে শুরু করলেন।

এমেসা থেকে জাবিয়া মানে হেরাক্লিয়াসের ৫টা আর্মিকে এবার দ্বিগুন দূরত্ব মার্চ করতে হবে। অথচ যাবার জন্য মবিলিটি করিডোর একটাই; এমেসা-দামেস্ক-জাবিয়া রোড। অর্থাত ৫টা আর্মিকে একটার পেছনে একটা মার্চ করতে হবে, যার মানে সময় বেশি লাগবে।

সময় বেশি লাগা মানে ক্যম্পেইনের ডিউরেশন বেড়ে যাওয়া। আর সময় বেড়ে যাওয়া মানেই লজিস্টিক ব্যয় বেড়ে যাওয়া। আবার জাবিয়ার নিকটবর্তী একমাত্র লজিস্টিক বেইজ হল দামেস্ক। অথচ সদ্যই মুসলিমদের সিরিয়ান ক্যাম্পেইন এর ধকল কাটিয়ে উঠে দামেস্ক এখনো বিশাল ৫টা আর্মিকে সাপোর্ট করার মত অবস্থায় নেই। তারমানে ক্যাম্পেইনটা শুরুই হবে লজিস্টিক ড্রব্যাক নিয়ে।

সর্বোপরি অনুর্বর মরু শহর মক্কা-মদিনা দখলের কোন ইচ্ছেই হেরাক্লিয়াসের নেই। কিন্তু লেভান্ট পুনর্দখলের স্বার্থে মুসলিম আর্মিকে হারানো ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। অগত্যা হেরাক্লিয়াস তার আর্মিগুলোর এডভান্স অব্যহত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন।

মুসলিম ফোর্সেস জাবিয়াতে কন্সেন্ট্রেট করার পর দেখা গেল যে ইয়াজিদ ক্যাসারি অবরোধ ছেড়ে চলে আসার পর দামেস্ক অক্ষের পাশাপাশি ক্যাসারি হতে আরেকটা বাইজান্টাইন এভেনিউ অব এপ্রোচ খুলে গেল। মানে এখনো দুই দিক থেকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েই গেল। তাই খালিদ ফের ট্যাক্টিক্যাল রিডেপ্লয়মেন্টের নির্দেশ দিলেন; এবার গন্তব্য জাবিয়া থেকে ইয়ারমুখ।

ওদিকে খলিফা উমরের এনভয় সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে পার্সিয়ান সম্রাট ইয়াজদেগার্ডের রাজদরবারে পৌছে গেল।

(ক্রমশ...)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×