বহুদিন থেকে গল্পটা লিখব ভেবেছি, না মৌলিক না। আনেক আগে রহস্য পত্রিকায় পরেছিলাম। নামও মনে নেই।শুধু থিমটা মনে আছে। নিজের মত লিখলাম।
------------------------------------------------------------------------------
" সালার কপাল !! " - এ. জি. কর্পরেশনের ফিনাসিয়াল এক্সপার্ট, রামান , জাহাজ এম. ভি. সি-কুইন এর ডেকে দাড়িয়ে নিজের ভাগ্যকে একটা গালি দিল। মিশর থেকে ফিনল্যান্ড তাও জাহাজে করে । কোম্পানির ফিনল্যান্ড ব্রাঞ্চের নতুন CEO হিসাবে তিন দিনের মধ্যে জযেন করতে হবে । ফ্লাইটের টিকেট কনফার্ম ছিল কিন্তু বিধিবাম । আয়রল্যান্ড এর অগ্নিগিরির ধোয়ায় সব ফ্লাইট ক্যানসেল । তাই চল ভেসে ভেসে । আজ অনেক দিন পর খুব দেশের কথা মনে পড়ছে, সেই বাড়ি, পুকুর পাড়, ধানক্ষেত, আর বৃষ্টি । এখন অবস্য কেউ নেই । মিসরে আসার দু বছর পর বাবা মারা গেলেন । তার এক বছর পর মা। একমাত্র বোন বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত । সম্পর্ক বলতে ঈদে কুরবানীতে কার্ড আর মাঝে মাঝে ফোন কল । নিজেকে আজ কাল বড় শিকরহীন মনে হয় । কাজ কাজ করতে করতে জীবনের অনেক বেশি পথ পেরিয়ে গেছে , কিন্তু পথের সাথী খোজা হয়নি । এখন আর সে সুযোগও নেই সময়ও নেই । শুধুই একলা চলা ।
আকাশটা আজ বড় বেশি পরিস্কার । মেঘের ছিটেফোটাও নেই । এরকম নীল বুকের মধ্যে ব্যথা তৈরী করে । শুন্যতার অনুভুতিকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুন । সাগরের বিশালতা যেন ওই অনুভুতির আর এক প্রভাবক । রামান মাথাটা একটু ঝাকি দিল, যেন শুন্যতাকে মাথা থেকে বের করে দিতে চাইছে, আস্তে আস্তে নিজের কেবিনের দিকে রওনা দিল। পথে ক্যাপ্টেন এর সাথে দেখা । তাকে দেখে রামানের মুখে একটা হাসি খেলে গেল। লোকটার মধ্যে কি যেন একটা আছে, বড় আপন মনে হয় । ক্যাপ্টেন ও উত্তরে শুধু হাসলো না রামানকে ধরে নিয়ে গেল নিজের কেবিনে । কিছুক্ষণ গল্প করে তারপর ছাড়লেন । লোকটা সাগর ভালবাসে তাই বেশিদিন জাহাজ ছেড়ে থাকতে পারে না । রামানের মতই নিসঙ্গ পুরুষ তবে অবিবাহিত না । বউ ছেড়ে চলে গেছে ওর সাগর প্রীতির যন্ত্রনায় । এতে অবস্য ক্যাপ্টেনের খুব একটা দুঃক্ষ আছে বলে মনে হয় না । সদানন্দ মানুষ। কেউ কিছু জানতে চাইলে বলে " বউ আর জাহাজ দুটোর মেইন্টেনেন্সই বড় কঠিন, দুটো একসাথে করে উঠতে পারিনিরে ভাই"। লোকটার চারপাশে যেন পজিটিভ এনার্জির একটা বলয় সবসময় ঘিরে থাকে।
বাইরে সূর্য বিদায় নিয়েছে । আকাশে এখনো লাল আভা চড়িয়ে আছে কেমন যেন একটা মন খারাপ করা সন্ধ্যা । রামানের কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে । মনে হচ্ছে কি এক অসুভো সংকেত সুনতে পাচ্ছে । জাহাজে ডিনার টাইম ৮ টায় । যাত্রার শুরুর ডিনার তাই সবাই একসাথে হবে । সব ক্রু এবং যাত্রীরা । প্রায় একশ লোক । এখনো বেশ দেরী আছে । রামান করার মত কিছু খুঁজে না পেয়ে আবার ডেকে এসে বসলো । জাহাজটা মনে হয় বড় বেশি দুলছে, কেমন একটা বমি বমি ভাব লাগছে । কেপ্টেন অবস্য বলেছেন সাগর ভ্রমণের প্রথম দিকটায় এটা খুব স্বাভাবিক যার গাল ভরা নাম "সি-সিকনেস" । রামান ছেড়ে দেয়া সিগারাটের অভাবটা বেশ অনুভব করছে । এখন মনে হয় জোয়ার চলছে । ভুগলে রামান বরাবরই একটু কাচা , ব্যাপারগুলো কখোনেই ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা । ওর কাছে জোওয়ার মানে বড় ঢেউ আর ভাটা মানে ছোট ঢেউ । ভুগোলের নাসিমা ম্যাডাম ম্যাপ আকতে দিয়ে প্রায় বলতেন " রামান তোর সব ম্যপ কেন একরকম হয় ? একটু এদিক ওদিক কলম ঘুরালেউ তো হয় " । সাগরের বাতাসে মনে হয় কিছু আছে বড় নষ্টালজিক করে দিচ্ছে ।
ডিনারের আয়োজন বেশ বড়সর। জাহাজের প্রায় সবাই উপস্থিত । কেপ্টেন সবাইকে অভিবাদন জানালেন তার জাহাজে ভ্রমণের জন্য এবং টুকিটাকি কিছু করনীয় জানিয়ে দিলেন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনের জন্য ।
ডিনার শেষে রামান কেবিনে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। খুব ক্লান্ত লাগছে । চোখ বন্ধ করে মোবাইল ফোনে মিউজিক শুনতে শুনতে কখনযে ঘুমিয়ে পরেছে নিজেও জানে না। আর এও জানেনা তার দিকে কি ভয়ংকর জিনিস ধেয়ে আসছে ।
রামান চমকে উঠল। কোথায় যেন একটা গোলমাল হয়েছে। একটু খেয়াল হতেই বুঝল জাহাজের এলার্ম বাজছে। কেপ্টেন বলেছিলেন এলার্ম শুনলে সব ভুলে আগে লাইফ জ্যাকেট পরবেন যা সব কেবিনেই থাকে। জাহাজটা ভয়ানক দুলছে, রামান লাইফ জ্যাকেট পরে কোনমতে কেবিন থেকে বাইরে এসে দেখে চারিদিকে ধুন্ধুমার কান্ড। জাহাজের কোন নিয়ন্ত্রন আছে বলে মনে হচ্ছেনা। রামানের কেবিনটা জাহাজের পিছন দিকে। রামান তুলনামুলক নিরাপদ মাঝ জাহাজের দিকে যেতে চাইলেও দুপায়ের জন্য স্থির কোন জায়গা পেলনা। হঠাৎ জাহাজটা কেপে উঠল ভয়ানক ভাবে, রামান যে সামান্য নিয়ন্ত্রন ছিল তাও হারিয়ে পিছলে পরল করিডরের উপড় এবং পিছলে জাহাজের পিছনের খোলা অংশের দিকে এগিয়ে যাতে থাকে। রামান নিজের বিপদ বুঝতে পারল হাতে কি যেন আটকালো। রামান দুই হাত দিয়ে ধরলেও সেটা রামানের গতিতো রোধ করলোইনা বরং তার সাথি হয়ে একই পথে রওনা হল। আর কিছুদুর এগুলেই জাহাজের পিছনের রেলিং ওটা যদি রামানের গতিরোধ না করে তাহলে সলীল সমাধি নিস্চিৎ। রামান হঠাৎ বুজল তার পায়ের নিচে শক্ত কিছু নেই ঝুপ করে একটা শব্দ হল তার পর সব অন্ধকার.....।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




