চোখ কুচকে বৃদ্ধা জিগেস করে তার ছেলেকে
-কই যাইতাসিস রে বাবা?
মুখ শক্ত করে ছেলে উত্তর দেয়,
-এই তো মা সামনের গেরামে। আর কয় ক্রোশ পরেই।
- একটু থাইমা গেলে হয় না রে বাপ? মাঘ মাসের শীতে বাতের বেথাটা যন্ত্রনা দিতাছে
-আর তিন চাইর পা চালায় যাই, তারপর থামুম মা
বৃদ্ধা জানে না এই চলার শেষ হবে না। এই তার শেষ চলা, মোড়ল বলেছে ক্ষেতে চাল নেই, বুড়োবুড়িদের খাবার নেই, গত সপ্তাহে পাশের বাড়ীর বুড়োটাকে পাহাড়ে রেখে এসেছে তার ছেলেরা, আজকে তার পালা। বুড়ির একমাত্র ছেলে চায় নি বুড়ি কে রাখতে, কিন্তু বাড়িতে পাচটা ছেলেমেয়ে, বউ পোয়াতি, এই দুর্ভিক্ষের সময়ে বৃদ্ধা মা কে ঘরে পোষার মতো ক্ষমতা নেই তার।
- বাবা রে, তর মনে আছে, ছোট বেলায় তুই ঘর থেইকা দূরে চইলা গেলেও আমার রান্না শুরু হইতেই ফিরা আসতি?
ছেলে চোখের জল মোছে, আজকে পেটে কিছুই পড়েনি
- বাবা রে, আর কতদূর?
- এই তো আরেকটু মা
- ঠান্ডা পড়তাছে, সূর্য কতদূর?
ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলে ছেলে
- এইতো উপরে মা
তারপর নিরন্তর হেটে চলে, মা কে রেখে আসতে হবে পাহাড়ে, যেখান থেকে আর ফিরবে না কেউ। এক পা দু পা করে অন্ধ অশীতিপর বৃদ্ধা মা কে নিয়ে হেটে চলে। পিছে তাকায় না। তাকালে দেখতো, মা চেরী ফুলের ডাল ফুল ছিড়ে খোকার জন্য পথ বানিয়ে রেখেছে, যাতে খোকা সহি সালামতে বাড়িতে ফেরৎ যেতে পারে
উবাসুতে (姥捨て - প্রাচীন জাপানে বৃ্দ্ধ পিতামাতাকে পাহাড়ে রেখে আসা হত, যাতে তাদের তড়িৎ মৃত্যু ঘটে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:১২