ভারতের রাজনীতিতে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাব কেমন, তা নিয়ে আলোচনা সবসময়ই চলে। অনেকের মতে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে মনু সংহিতার প্রভাব প্রকট।
যাহোক, এই বিষয়গুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে গোচরীভূত হল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীগণের মধ্যে সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে অব্রাহ্মণের সংখ্যা কিন্তু বেশি! এখন পর্যন্ত পনেরোজন ব্যক্তি বিভিন্ন মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন, যাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন ব্রাহ্মণ। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, মোরারজি দেশাই, রাজীব গান্ধী, নরসিমহা রাও, অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন ব্রাহ্মণ। এদের মধ্যে অন্য ধর্মে বিয়ে করায় ইন্দিরা গান্ধী, এবং অহিন্দু ঔরসে জন্মলাভ করায় রাজীব গান্ধীকে ধ্রুপদী বিচারে ব্রাহ্মণ নাও ধরা যেতে পারে।
যাহোক, এরা ছাড়া বাকিদের মধ্যে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের দুইজন- এইচ ডি দেবগৌড় ও নরেন্দ্র মোদী। এরা ঠিক দলিত না হলেও অনগ্রসর সম্প্রদায় থেকে উদ্ভূত। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ছিলেন কায়স্থ, দুই দফা ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা গুলজারিলাল নন্দ ছিলেন ক্ষত্রিয়। এছাড়া চৌধুরী চরণ সিং, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, চন্দ্র শেখর, ইন্দর কুমার গুজরাল ছিলেন রাজপুত, জাঠ ও পাঞ্জাবী ক্ষত্রিয়। শিখ ধর্মাবলম্বী মনমোহন সিং একমাত্র অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী।
অদ্যাবধি যারা ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন বেশ প্রভাবশালী। এই জন্য সরকারে তাঁদের যথোপযুক্ত স্থান দিতে বিভিন্ন সময়ে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ চালু করা হয়েছিলো। এই পদে আসীন হওয়া বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন অব্রাহ্মণ কিন্তু অগ্রসর সম্প্রদায়ের, লাল কৃষ্ণ আদভানী ছিলেন ব্রাহ্মণ। চৌধুরী দেবী লাল, যশবন্ত রাও চ্বহান ক্ষত্রিয় বর্ণের ছিলেন। অন্যদিকে জগজ্জীবন রাম ছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের।
সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে ভারত হিন্দু বর্ণের রীতি মোতাবেক শাসনকার্যে ক্ষত্রিয়দের নিয়োজিত করেছে বেশি। এই বর্ণ থেকেই বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। তবে কোন অব্রাহ্মণ প্রধানমন্ত্রী নিজেদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। একমাত্র অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য এর অন্যথা ঘটেছে...।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭