somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজ , বিজ্ঞান ও জাত্যাভিমানের অসুখ : দায় কেবলই বাঙ্গালি ঐ দর্শকদের ?

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি লিখেছিলেন , " জগত জুড়িয়া এক জাতি আছে , সে জাতির নাম মানুষ জাতি" ।
কিন্তু কে শুনে কবির কথা । আচার-আচরন আর চেহারার মিল কিংবা ধর্মের মিল দেখে অনেক পন্ডিত মানুষ নানা জাতি গড়ে তুলেছেন । আবার সবসময় যে বলেকয়ে জাতি তৈরি হয়েছে এমনটাও নয় ।
এক এক জাতি জাত্যাভিমানের জিগির তোলেন আর সমাজতাত্বিকরা দু ভাগে হয়ে যান- কেউ পক্ষে , কেউ তার বিপক্ষে !

ওল্ড টেস্টামেন্টের পাতা খুলুন । দেখবেন লেখা রয়েছে মানুষে মানুষে যে ফারাক তা সহজাত,বংশগত ও অপরিবর্তনীয় ।
শুধু ওল্ড টেস্টামেন্ট কেন , ইসলাম ব্যাতিত প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থেই একই সুর ধ্বনিত হয়েছে । জন্মসুত্রে কেউ অভিজাত তো কেউ অধস্তন । অধস্তনেরা "Cursed be cannan; a servant of servants shall he be unto his brethren."
গ্রিকেরা একসময় মনে করতো ওদের বাদ দিয়ে পৃথিবীর বাকি সবাই বর্বরদের দলে ।
হেরোডেটাস বলে গিয়েছেন পার্সিয়ান লোকেরা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে মানুষ গন্য করতোনা ।
দার্শনিক এরিস্টটলের নাম তো শুনেছেন । তিনি বলেছেন জন্মসুত্রেই পৃথিবীর কিছু মানুষ স্বাধিন আর বাকি সবাই ক্রীতদাস ।
ষোড়শ শতাব্দিতে নিগ্রোদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচার করতে গিয়ে মার্কিনিরাও একই কথা উচ্চারন করে ।
উনবিংশ শতকে পৃথিবী যখন সামন্ত থেকে ধনতন্ত্রে যাওয়ার পথে শিল্পবিপ্লবে শামিল , তখন বস্ত্র ও বয়নের জন্য পুনরায় দরকার পড়ছিল দাসপ্রথার । প্রয়োজন হয়েছিল কালো চামড়ার মানুষদের নিকৃষ্টতর বলে ঘোষনা দেবার । আর তাই দরকার পড়েছিল বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যার । ডারউইনের বিবর্তনবাদের সাথে মিলিয়ে যেই অপবিজ্ঞানের নাম "সোস্যাল ডারউইনিজম" !
ডারউইনের "survival of the fittest" কথার সাথে মিলিয়ে বলা হলো 'Inferior' কালো মানুষগুলোকে 'Superior' সাদা মানুষদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে ।
বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে মানুষ নিধনের এই প্রচেস্টা আমরা হাল আমলে গুজরাট গণহত্যায়ও দেখেছি । যেখানে নরেন্দ্র মোদী ঐ গনহত্যাকে আখ্যা দিয়েছিলেন 'নিউটনের সুত্র' হিসেবে !
জনাব ম্যাডিসন গ্রান্ট ছিলেন একজন পাঁড় সোস্যাল ডারউইনিস্ট । ১৯১৬ সালে তিনি লিখে ফেলেন "The nursing of the great race" নামে একটি বই ।
বইটি একসময় আমেরিকার বেস্ট সেলার হয়ে উঠে ।
বইটির মুল কথা ছিলো, বিদেশীদের সংগে সংমিশ্রণের ফলে উত্তর আমেরিকার মানুষজনের মহত্‍ গুণ লোপ পাচ্ছে , বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে তাই বাইরের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে ।
আটলান্টিক পার হয়ে বইটি যখন জার্মানীর হিটলারের হাতে এসে পৌঁছায় তখন হিটলার যেন আকাশের চাঁদ হাতে পান । গ্রান্টকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বইটিকে তার বাইবেল হিসেবে বিবেচনা করেন ।
ব্যস , হিটলারও এবার জার্মানদের বিশুদ্ধতা রক্ষার দায়িত্বে শুরু করলেন ইহুদী নিধন , আইন করলেন জার্মান কেউ ইহুদী কাউকে বিয়ে করতে পারবেনা ! বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেখা গেলো লাখ লাখ ইহুদী মারা পড়েছে !
ধুর ছাই , কালোদের মারতে গিয়ে দেখি সোস্যাল ডারউইনিস্টরা ইহুদীদের মারা শুরু করলো ! শুরু হলো তাই সোস্যাল ডারউইনিজমের বিরুদ্ধে প্রচারনা , বর্ণবাদ বিরোধী প্রচারণা !

তবু আজও বর্ণবাদ টিকে আছে , হয়ত রাষ্ট্রীয়ভাবে নয় , সামাজিকভাবে , সারা বিশ্বে , প্রতিটি মানুষের অন্তরে !
বর্নবাদ যে কেবল গায়ের রঙে হয় তা নয় , মুখে দাঁড়ি দেখলেই 'জঙ্গি' বলা বা ধুতি দেখলেই 'মালাউন' বলাও বর্নবাদ ।
অস্ট্রেলিয়া থেকে আমেরিকা , আফ্রিকা থেকে চায়না কেউ কি এই বর্নবাদ থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে ?
পারেনি , তাই কেবল মাঠের গ্যালারির ঐ বাঙালী দর্শকদের গালি দিয়া লাভ নাই । ঐ বাঙালী নিজেও জানে সে কালো , তবু সে নিজ দেশের রুবেলকে 'কাইল্লা' ডাকে , ভীনদেশের রাবাদাকে 'নিগ্রো' ডাকে ! এটা যে সে বর্নবাদের ভারিক্কি আদিখ্যেতায় ডাকে তা নয় , এটা তার একধরনের জন্মগত বিকৃত প্রবৃত্তি !

শেষ করছি , ইউরোপের মানুষদের নিজেদের 'Superior' ভাবার মুখে চুনকালির ঘটনা দিয়ে ।
বিংশ শতকের শেষের দিকে যখন ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হলো তখন ইউরোপিয়ানদের মাঝে আগ্রহ জন্মায় নিজেদের পুর্বপুরুষের ব্যুতপত্তি নিয়ে !
বংশের প্রাচিনত্ব জানতে সবাই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতে লাগলো ।
পরীক্ষা করে শেষে জানা গেল সবাই এসেছে ঐ আফ্রিকা থেকে যাদের তারা এতদিন 'Inferior' বলে আসছে !
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×