somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চন্দ্রস্নান

২২ শে জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেকদিনের পরিকল্পনা এবার শীতে সমুদ্র দেখতে যাবে আকাশরা। আগেও অনেকবার চেয়েছে, সুযোগ হয়নি। আকাশ আর ওর বউটা ঘোরাঘুরির পাগল। সুযোগ পেলেই এখানে সেখানে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু দূরে কোথাও যাওয়া হয়না অনেকদিন। ছুটি, সে যেনো সোনার হরিণ। এবার ঈদ এর পর যাওয়া মোটামুটি ঠিকঠাক। একই সময়ে পরীর ও বাইরে যাওয়ার কথা। সেভাবেই এগোচ্ছিলো সব। পরী ও খুব খুশী। ওর বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনায় আকাশের মন খারাপ দেখে ওর মনটাও দমে গিয়েছিলো অনেকখানি। আকাশদের ও ঘুরতে যাওয়ার কথায় ও আশ্বস্ত হয়।

কিন্তু বিধি বাম। পারিবারিক কিছু ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়া হলো না পরীর। আকাশদের ও যাওয়া কয়েক ধাপে পেছালো ছুটির অনিশ্চয়তায়। অবশেষে একদিন আকাশ রা চল্‌লো সমুদ্র দেখতে আর পরী রইলো পরিচিত গন্ডির মধ্যে মন উদাস বন্দী রাজকন্যা হয়ে। আকাশের ও মন খারাপ। তবুও মাঝে মাঝে সব মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না।

আকাশের সদ্য স্কুলগামী মেয়েটার চোখে অপার বিস্ময়। এক প্ল্যাটফর্ম ভর্তি মানুষ ওদের ট্রেনটায় উঠতে পারবে কি না সেই সংশয় কয়েকবার ব্যক্ত করলো বাবার কানে কানে। মোটামুটি বুঝতে শেখার পর এটাই ওর প্রথম ট্রেনে ওঠা। ট্রেন টা যেনো চলমান এক স্বপ্নপুরী। এক কামরা থেকে আরেক কামরায় চলে যাওয়া যায় সহজেই। সার্ভিস বয় খাবার আর চা নিয়ে ছোটাছুটি করছে। এ্যাটেনড্যান্ট ওর এলোমেলো ছোট্ট লাল লাগেজ টা গুছিয়ে রাখলো র্যায়ক এ। সব কিছুতেই মুগ্ধ ছোট্ট মেয়েটা। সবচেয়ে আবাক হয় পরিপাটি ওয়াশ রূম টা দেখে।

পরদিন সকাল থেকে শুরূ হয় ছোটা। সময় কম, দেখার আছে অনেক কিছু। দুপুরটা কাটলো উত্তাল নোনা জলে। বউটা আবেগাপ্লুত, মেয়েটা অভিভূত আর উচ্ছসিত। আকাশ ও ওদের সাথেই মিশে থাকার চেষ্টা করে অনেকদিন পর সমুদ্র দেখার আনন্দে। তার মাঝেও মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যায়। খুব মনে পড়ে পরীর কথা। কল্পনায় ওরা কতো ভেবেছে একদিন একসাথে সমুদ্র দেখবে...।

ছোট্ট পরিবার টা সারাক্ষণ ই একসাথে। তাই ইচ্ছে থাকলেও পরীর সাথে কথা হচ্ছে না যখন তখন। হঠাৎ সুযোগ মিল্‌লে কথা, মাঝে মাঝে এস এম এস। এর মধ্যেই ঘোরা হলো হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ আর প্রবাল দ্বীপ। প্রকৃতির সেই অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে পরীকে আরো বেশী করে অনুভব করে আকাশ। যতো বেশী ভালোলাগা, ততো বেশী যেনো পরী কে মিস্‌ করা। সারাক্ষণ মনে হতে থাকে... ইস্‌, কোনোভাবে পরীটা যদি আস্‌তে পারতো, কত্তো ভালো হতো। ওদিকে স্বল্প যোগাযোগের অস্থিরতায় পরীর মনে জমতে থাকে অভিমানের মেঘ, যদিও কথা হলে সারাক্ষণই বলছে... অনেক মজা করো তোমরা, এই ক’টা দিন তুমি শুধু আপুনির, আমি তো আছি সারাক্ষণ তোমার মন ছুঁয়ে।

হিসেব কষে না আসলেও সৌভাগ্যক্রমে ওরা পেয়ে যায় ভরা পূর্ণিমা। দোতলা বাংলোটার বারান্দায় ইজি চেয়ার এ ব’সে সামনে তাকালেই সৈকত। ছোট ঢেউগুলো তীরে এসে ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। বাতাসের হু হু শব্দ। বিশাল ঝলমলে চাঁদটা মধ্য আকাশে। তার আলোতে ভেসে যায় চারদিক। আকাশ আর ওর বউটা হাত ধরাধরি করে ব’সে থাকে। মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়ায় কেঁপে ওঠে বউটা। আরেকটু ঘন ক’রে জড়িয়ে ধরে আকাশ। মনে মনে ভাবে... পরীকে কখনো এভাবে এই অপার্থিব জোছনায় জড়িয়ে ধরা হবেনা এই জীবনে। ওর দু’টো ভালোবাসার একটা সারাজীবন অপূর্ণই থেকে যাবে, রয়ে যাবে স্পর্শের আনুভবের বাইরে, শুধু স্বপ্ন আর কল্পনার জগতে বন্দী হয়ে।

সারাদিনের ক্লান্তিতে অঘোরে ঘুমিয়ে থাকে আকাশের বউ আর মেয়েটা। রাত ফুরোবার অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায় আকাশের। ঘুমন্ত বউটাকে জাগিয়ে সৈকতে হাঁটতে যাবে ব’লে বেরিয়ে পড়ে একা। ফোন করে পরীকে। চাঁদটা তখন পশ্চিমে বেশ খানিকটা হেলে পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে সমুদ্রের মাঝামাঝি ঝুলে আছে বিশাল এক আলোকপিন্ড। নিঃসঙ্গ সমুদ্রটাকে আর নিঃসঙ্গ মনে হয়না। খালি পায়ে এলোমেলো হাঁটতে থাকে উদ্দেশ্যহীন। কখনো ভেজা বালিতে, কখনো পানির কিনারায়। ঢেউগুলো ছুটে আসার গর্জন শোনে দু’জন কান পেতে। পায়ের পাতায় আছড়ে পড়ে ওগুলো। মাঝেমাঝে টুকটাক কথা। জোর হাওয়া ছুটে এসে পরীর রিনরিনে শব্দগুলোকে ছড়িয়ে দেয় চারপাশে। আরো একটু হেলে পড়ে চাঁদটা। সমুদ্রের সান্নিধ্যে পূর্ণিমার আলো নীলাভ হয়ে ওঠে। প্রকৃতির সেই বিশালতার মাঝে অদ্ভুত নিঃসঙ্গ একাকী একটা মানুষ হঠাৎ করেই অনুভব করে সে আর একা নেই। পরী এসে ধরেছে তার হাতটা। বেলাভূমি ধরে হাঁটছে দু’জন মানুষ আধা জড়াজড়ি ক’রে অনন্তের পানে । নীলাভ জোছনায় অনন্ত সেই চরাচরে দু’জন মানুষ চন্দ্রস্নানে মত্ত।
The Introduction

More about Pori & Akash
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×