somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

......ও আমার নন্দিনী......

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পরীর বিয়ে। ভাবতেই মনটা কেমন যেনো ক’রে ওঠে আকাশের। দীর্ঘ দেড়টা বছর কোনো যোগাযোগ নেই পরীর সাথে। শুধু অভিমান নয়, তার চেয়েও অনেক বেশী কিছু ধীরে ধীরে বিষিয়ে দেয় ওদের মন। ভীষণ আবেগী আর গভীর একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে শত টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যায়, মিলিয়ে যায়। পড়ে থাকে একরাশ শূন্যতা আর বুক ভরা হাহাকার। সম্পর্ক হয়তো ভাঙ্গে, ভালোবাসাও কি তাই? তাই যদি হবে তবে পোড়ে কেনো ওরা? কেনো প্রতিটা দিন আকাশ ভাবে পরীর কথা? কেনো বিশেষ দিন, ক্ষণগুলোতে হাতড়ে বেড়ায় স্মৃতির ভান্ডার, হানা দেয় মনের বদ্ধ দুয়ারগুলোতে? কেনো অলস নিঃসঙ্গ প্রহরে চুপটি করে বসে থাকে ওদের কল্পনার মাচাটায়?

একাকী পরীর জীবনে নিজের উপস্থিতি নিয়ে বরাবরই সংকোচ ছিলো আকাশের। শুরু থেকেই মনে প্রানে চেয়েছে সুন্দর একটা সংসার হোক পরীর, বিবাহিত জীবনের সবটুকু সুখের নির্যাস মেখে পরিপূর্ণ হোক পরী সোনাটা। সেই ভাবনাটা বাস্তব হওয়ার অকারণ বিলম্বে ধৈর্যহারা হয়ে উঠছিলো আকাশ। পরীর সাথে যোগাযোগ রক্ষায় ওর বিবাহিত জীবনের প্রতিবন্ধকতাগুলো দিনদিনই যেনো গৌন হয়ে উঠছিলো পরীর কাছে, বাড়ছিলো অভিযোগ। পরীর নিজের সেই অভিজ্ঞতা হোক, সেটাও জুড়ে বসেছিলো আকাশের সেই ভাবনার সাথে।

সুদীর্ঘ দেড় বছরের বিরতির পর হঠাৎ পরীর মেইল... ‘কিছু জিনিস দেবার ছিলো। ঠিকানা জানানো যাবে? এটাই শেষ’। আকাশের জবাব... ‘শেষ ই যদি হবে তবে সাক্ষাতেই হোক’। কতোদিন পর দেখা। পুরনো পটভূমিতে পুরনো মুখ, অনুভূতি আর পরিস্থিতি কিছু ভিন্ন। ফাঁকা স্টেশনটার প্ল্যাটফর্ম ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে আকাশ শোনে পরীর বিয়ের আয়োজনের বৃত্তান্ত। কিছুটা শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার ছাপ পরীর আচরনে, খুশীও একইসাথে। আকাশের মিশ্র অনুভূতি। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার যেনো অবসান আর সেই সাথে পরীকে হারিয়ে ফেলার অন্যরকম এক শূন্যতা। মন বড় অদ্ভুত এক কারাগার। কিছু অনুভূতির সেখানে জাবজ্জীবন দন্ড, আবার কিছু অনুভূতি থানার খাতায় নাম লেখানো মৌসুমী আসামীর মত, আসে আর যায়।

অনুষ্ঠান জুড়ে সাজপোষাক পরা সব মানুষ। বেশ কিছু চেনা মুখ। আগে কখনো ছবি দেখেছে তাদের আকাশ। বিয়ের সাজে মঞ্চ আলো করে বসে আছে পরী আর তার বর। কেমন অচেনা লাগে পরীকে। কল্পলোকের পরীরাও কি এমন সুন্দর হয়? আড়াল থেকে দ্যাখে আকাশ। ইচ্ছে করে একটু ছুঁয়ে দিয়ে আসে পরীকে। সচেতন মন বাধ সাধে, পরী এখন তোমার নয়। ছিলো না কখনোই। তবুও আকাশ জানে আছে পরী, থাকবে সারাজীবন। এ এক অন্যরকম থাকা, পার্থিব সব হিসেবের বাইরে। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পথ ধরে আকাশ। প্রফুল্ল মনটা আস্তে আস্তে বিষাদে ছেয়ে যায়। কারণ বোঝে না আকাশ। গাড়ীর উইন্ডশীল্ডে মৃদু ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি, তবুও কেনো যেনো অনেক বেশী ঝাপসা দেখায় চারদিক।



পরী,

ভালো আছো তো? তোমার সেই দিনটার কথা মনে আছে? তুমি আর আমি ট্রেনে যাচ্ছিলাম অজানা গন্তব্যে। শুরুতে ফাঁকা থাকলেও আস্তে আস্তে ভরে উঠেছিলো ট্রেন টা। চারপাশে অচেনা সব মানুষ। গন্তব্যের নিশানা অজানা। তার মঝেও তুমি আর আমি মগ্ন হয়ে ছিলাম আমাদের ছোট্ট জগতটাকে নিয়ে। সময় এর সাথে আশেপাশের মুখগুলো আর ততোটা অপরিচিত লাগছিলো না। পাশের দম্পতির ছোট্ট মেয়েটার ঠোঁটেও মাঝে মাঝে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো পরিচিতের হাসি। সহযাত্রীর কথায় গন্তব্যের নিশানাও এক সময় জানা হলো। দাম্পত্য জীবনটাও এমনই এক যাত্রা। প্রথমে শুধুই দু’টো মানুষ। তারপর ধীরে ধীরে প্রাকাশ পায় একটা পরিপূর্ণ জগত, একই সুতোয় গাঁথা কতগুলো পরিবার। নতুন এই জীবনটাকে শুরুতে মনে হয় যেনো এক দুর্যোগ, এক অযাচিত শৃঙ্খল। ধীরে ধীরে সেটাই হয়ে ওঠে পরিচিত আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য অবলম্বন। মানুষের বাকীটা জীবনের সম্পর্ক আর সামাজিকতারও সেটা এক স্থায়ী ভিত্তি।

পরী, আমাদের সেই দুর্নিবার উচ্ছল ভালোবাসা, গভীর আকর্ষণ, এই দীর্ঘ পথচলার উত্থান পতন, ভাঙ্গন, বিদ্বেষ, অবিশ্বাস, সবই একটু একটু করে শিক্ষা রেখে গ্যাছে। ঠেকেই আমরা শিখেছি, কষ্টে পুড়েছি, বিষাদে লীন হয়েছি। আমার মনে হয় আমাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরী করতেই নিয়তির এই আয়োজন। আমার হিসেবে যেকোন সম্পর্কের স্থায়ীত্বের চাবিকাঠি বিশ্বস্ততা, সীমিত ও বাস্তব প্রত্যাশা এবং পারষ্পরিক আপোস ও সমঝোতার মনোভাব। আমি নিশ্চিত, তোমার উপলব্ধি দিয়ে তুমি গুছিয়ে নেবে তোমার এই নতুন জীবন ও সম্পর্ক।

বিবাহিত জীবনের ভালোবাসা আর অন্য একজনকে ভালোবাসার স্বরূপ নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন তুলেছো তুমি। বরাবরের মতোই বলবো... প্রতিটা ভালোবাসার ধরণ ই আলাদা। দাম্পত্যের ভালোবাসায় মিশে থাকে আস্থা, নির্ভরতা, পারষ্পরিক বোঝাপড়া, সন্তান ধারণ ও লালন, প্রাত্যহিক জীবন যাপনের আরও অন্যান্য সব নিয়ামক। সেখান থেকে ভালোবাসাটাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না যেমন, তেমনি জোর করে চাপিয়ে দেওয়াও যায়না। ওই ভালোবাসাটা ধীরে ধীরে নিঃসরিত হয়ে গড়ে তোলে এক স্থায়ী বন্ধন। সেটা চর্চায় বাড়ে, আস্থায় বিকশিত হয়, প্রকাশে রঙিন হয়। তোমার আমার ভালোবাসা সে এক ভিন্ন নিষিদ্ধ জগত, না পাওয়ার মাঝে সব খুঁজে পাওয়ার এক আকুতি যেনো। এ ভালোবাসায় দায়বদ্ধতার চেয়ে আবেগের প্রাধান্য, চাওয়া পাওয়ার হিসেবের চেয়ে উদারতাই কাম্য। পরিণতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার মাঝেই এই ভালোবাসার গাঁথুনি।

দীর্ঘ এই ভালোবাসার পথ পরিক্রমায় সময়ে অসময়ে কত কষ্ট এসে হানা দিয়েছে। সবশেষে আমরা বোধহয় সমকক্ষ হলাম। সেটা একদিকে যেমন স্বস্তির, অন্যদিকে শঙ্কার। স্বস্তির এইজন্য যে আমরা পরষ্পরের অবস্থানটাকে হয়তো আরো ভালোভাবে বুঝবো, আর শঙ্কার এইজন্য যে আমাদের যোগাযোগের গন্ডী আরও সীমাবদ্ধ হয়ে গ্যালো। সীমাবদ্ধতার এই বেড়াজালে আড়াল আর না পাওয়ার প্রকোপে হারিয়ে না ফেলি আমার পরীটাকে।

পরী, এতো ভাবনা, শঙ্কার মাঝেও আমার শেষ চাওয়া তোমার জীবনের পরিপূর্ণতা। না পাওয়ার কষ্টগুলো ছাপিয়ে সুখে ভরে উঠুক তোমার জীবন। পুরনো সব অবহেলা, অভিমান ভেসে গিয়ে উদ্ভাসিত হোক বাকী দিনগুলো। তোমার অসীম ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে জড়িয়ে রাখো তোমার ছোট্ট সংসার আর প্রিয় মুখগুলো। সুখে থাকো জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত। সুখস্মৃতি আর ভালোবাসায় কানায় কানায় ভরে উঠুক তোমার মনের বাড়ী। আমার জন্য চেয়ে নিলাম ছোট্ট ঝুলবারান্দাটা আর আমাদের কল্পনার মাচাটা। মাঝে মাঝে এসো। প্রতীক্ষায় থাকবো আমি, সারাজীবন।

The Introduction

All about Pori & Akash
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×