somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি গর্বিত, আমি ‘ল্যাবরেটরিয়ান’....

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্মের পর নতুন এক জন্ম দিয়েছে এই গবর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল । এখনো মনে আছে স্কুলে প্রথম দিন যাবার পথে একজন মনোগ্রাম দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘’ তুমি ল্যাবরেটরিতে পড়? ‘’ । কোন এক অজানা কারনে খুব গর্ব করেই বলেছিলাম ‘’ হ্যা’’ আমি ল্যাবে পড়ি। হয়ত বাতাসের দোষ। ল্যাবরেটরিয়ান বাতাস।
আমার স্কুল আমার শৈশব , আমার কৈশর, আমার প্রাণ । আজ আমি যতটুকু পেয়েছি তার সিংহভাগ আমার স্কুলের কল্যানে । কোথাও যখন কেউ প্রশ্ন করে কোন স্কুল থেকে পাশ করেছি নিজেকে ল্যাবরেটরিয়ান পরিচয় দিতে এক পৈশাচিক আনন্দ পাই আমি ।
শীতকালীল সমাবেশ, টিফিন টাইমে মুড়ি মামার মুড়ি কিংবা জিভে জলআনা চটপটি। যদিও এখন সব স্মৃতি তবুও মনে হয় এইতো সবে ক’দিন হল শেষ করেছি । স্কুল পালানোর দিন গুলোর কথা আর নাই বা বললাম । স্কুল পালিয়ে ঢাকা কলেজের পুকুর , ধানমন্ডি লেক , বলাকা না হয় আজিমপুর । এই ছিলো আমাদের স্কুল পালানোর গন্ডী।
স্কুলজীবনের শেষ সময় গুলোর মধ্যে বেশখানিকটা সময় কেটেছে বিজ্ঞান ক্লাব আর বি এন সি সি রুমে । এক একটি স্মৃতি যেন এক একটি ইতিহাস । ল্যাবরেটরিয়ান’রা সবার থেকে সব দিক দিয়েই একটু বেশি এডভান্স হয় । আর মূল বাদড়াঁমি বা মধুরতম সময় কাটে এই স্কুলজীবনের শেষ সময় গুলোতে , নবম আর দশম শ্রেনিতে ।
খেলাধুলার ভেতর, স্কুলের করিডোড়ে বোতল দিয়ে ফুটবল খেলা, বা ডায়েরি আর কাগজের বল দিয়ে ক্রিকেট খেলা , কলম লড়াই , কাগজের বা হাতে হাতে ক্রিকেট/ ফুটবল ছিলো অন্যতম । নিম্নমাধ্যমিকের আগ পর্যন্ত এগুলোই যেন মূল আকর্ষন।
ল্যাবের ‘টিফিন’ যেন এক অমৃত । বুটের ডালের সাথে পরোটা , কলা – সিঙ্গারা , পুরি-জিলাপি বা নিমকি । আর জানুয়ারিতে শীতের সময় বার্ষিক ফলাফল দেয়ার সময় কোন এক শীতকালীন ফল । কমলা’র খোসা চোখে ছিটিয়ে দেয়া বা কলার খোসা দিয়ে প্রায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা । আজো ফিরে যেতে মন চায় সেইসব দিন গুলোতে ।
ল্যাবের প্রত্যেকজন শিক্ষক এক এক জন ‘’লেজেন্ট’’ । শামীম স্যার , আলমগীর স্যারের গনিত ক্লাস, আলতাফ স্যারের ইংরেজী , ওয়াদুদ কিংবা গোলাম মোস্তফা স্যারের সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাস, সালেহীন স্যার , শ্যামল স্যার বা নোমান স্যারের বজ্র কন্ঠ , ফররুখ স্যারের সিলেটি ভাষা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবিউল স্যারের নবাব সিরাজ উদ দৌলা’র সংলাপ ।আজিজুল হক স্যারের ক্লাসে ‘’ অথর্ব ‘’ আর ‘’ রাবিশ ‘’ শব্দে বকা দেয়া । তাদের জ্ঞান , পড়ানোর ধরন , ছাত্রদের সাথে বন্ধুর মত মিশে যাওয়া এক কথায় অসাধারন । তাদের ছাড়া আমার দশ বছরের ল্যাবরেটরিয়ান জীবন ব্যর্থ। মা- বাবা’র থেকে কোন অংশে কম নেই তারা । হাজার ভিড়ের মাঝে তাদের খুজে পেলেও ইচ্ছে হয় পা’য়ে হাত দিয়ে সালাম করি । তাদের সম্মান আমার কাছে এতটাই বেশি।
ল্যাব আমাকে কিছু দিন আর নাই দিক ‘ বন্ধু ‘ দিয়েছে একজীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। যাদের সাথেই আমার জীবনের দশটা বছর পাড়ী দিয়তে ফেলেছি । পাশ করেছি প্রায় দু’ বছর হতে চলল এখনো কারো বিপদে এক নিমেশেই হাজির সবাই । এখনো পুরোনো কোন বন্ধুকে কাছে পেলে মনে হয় যক্ষের ধন খুজে পেয়েছি । বুকে জড়িয়ে নিতে এক মুহূর্তও ভাবতে হয় না। শেষ পর্যন্ত আমরাই থাকবো একসাথে । সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা এটিই ।

‘’ শেখার জন্য এস, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও’’ মূলমন্ত্রে দিক্ষিত আমি । গভঃ ল্যাব কে আমি প্রানে ধারন করি। আমার শিকড় এখানে। যেদিন শেষ ক্লাস করি সেদিনও কষ্ট হয়নি, যেদিন এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল দিলো , সরাসরি সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলো সেদিনও কষ্ট পাইনি । পাবো না। হয়ত স্মৃতিগুলো মনের গহীনে প্রান ফিরে পাবার চেষ্টা করবে তবুও এতটুকু খারাপ লাগবেনা ।
কারন একটিই, অন্যান্যদের মত নিজেকে কখনো ‘এক্স’ পরিচয় দিই না । আমার পরিচয় আমি ‘ ল্যাবরেটরিয়ান ‘ । এ পরিচয় আমার আজীবনের ।

আমি গর্বিত , আমি ‘ ল্যাবরেটরিয়ান’ ।
ল্যাবাই – ল্যাবিউ
দেখা হবে......
OLsA Reunion 2015
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×