somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইবনে খলদুন ও তার আল মুকাদ্দিমা -২

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'আল-মুকাদ্দিমা' শব্দের অর্থ যদিও বা ভূমিকা তথাপি এই আল-মুকাদ্দিমা আর সাধারন অর্থে যে ভূমিকা তার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে ।
ইবনে খলদুন তার ইতিহাসকে ৩টি গ্র্ন্থে ও ৭টি খন্ডে বিভক্ত করেছেন ।এই ব্যাপক পরিকল্পনার ভূমিকায় তিনি ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব , ঐতিহাসিকদের ভ্রান্তি এর কারন ও ফলশ্রুতি এবং তার ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন । মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট ও তৎকালে প্রচলিত এম্ন কোন বিষয় নেই যা তিনি সংগ্রহ করেননি । এ কারনেই তার এই ব্যাপক সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ একদিকে গ্রন্থটিকে যেমন একটি বিশ্বকোষ জাতীয় রচনায় পরিণত করেছে , অন্যদিকে তেমনি এটি তার ভূমিকারই বিষয় বিস্তার বলে পরিগনিত হয়েছে ।
তার মতে,মানুষের শ্রম ও চিন্তার ফসল রূপেই সভ্যতা সংস্কৃতির বিচিত্র উপাদান গড়ে উঠেছে । প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরূপতা ও সহায়তাই মানুষকে এ সকল উপাদান সৃষ্টির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে । কারন কোন একক মানুষের পক্ষে যেহেতু জীবনের সামগ্রিক চাহিদা মিটিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয় , সেজন্যই মানুষ সেচ্ছায় সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করতে উৎসাহিত হয়েছে এবং পরস্পরের সহায়তায় জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে নিয়েছে । (পৃঃ৩৭)
সভ্যতা সংস্কৃতির বিনির্মাণে এভাবে সামাজিক শক্তি ও প্রকৃতির উপস্থিতিকে প্রাধান্য দেয়া স্বত্বেও ইবনে খলদুন অতীন্দ্রিয় শক্তিতে বিশ্বাস করেন । এরই ফলশ্রুতি হিসেবে তিনি একাত্তবাদের ধারনাকে অত্যান্ত বলিষ্ঠ আকারে উপস্থাপিত করেছেন এবং যাদু,ইন্দ্রজাল ইত্যাদি সম্প্রকিয় ধ্যানধারণা পোষনেও তিনি নিস্পৃহ নন ।
চিন্তাশক্তির বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া স্বত্বেও মানুষ যে প্রানিজগতেরই অধীন এবং এই বৈশিষ্টের কল্যাণেই যে তথাকথিত ধর্মহীন জাতিগুলির মধ্যেও সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে, এ তথ্যকেও তিনি তার যুক্তির সমর্থনে উল্লেখ করেছেন । (পৃঃ৩৮)।
আল-আসাবিয়াঃ
অতীন্দ্রিয় শক্তির বধান্যতায় মানুষ যখন তাদের চিন্তাশক্তির আকর্ষণে পরস্পরের সহায়তা লাভে এগিয়ে গেছে এবং সম্মিলিত প্রয়াসে পৃথিবীর বুকে অধিকার প্রতিস্ঠার চেষ্টা করেছে ,তখনই 'উমরান' বা সভ্যতার জন্ম হয়েছে । ইবনে খলদুন তার আল-মুকাদ্দিমায় আলোচিত এই নুতন বিষয়ের নামকরণে এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ।
সহজ কথায় সভ্যতা সংস্কৃতি বলতে যা বুঝায় তা হল ,এই মানব সমাজেরই বিনিরমিত কীর্তিমালা । কিন্তু মানব সমাজ বা এই জনশক্তির প্রচেষ্টা স্বত্বেও উপরোক্ত কীর্তিমালা সর্বত্র সমানভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি । অনুরূপ বৈচিত্রের কারন হিসেবে প্রাকৃতিক প্রভাবের কথা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি । ইবনে খুলদুন এ প্রকার বহির্গত কারন ছাড়াও সমাজ শক্তির অন্তর্গত একটি কারণও অত্যান্ত সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করেছেন ।এ কারণটিকে তিনি নাম দিয়েছেন 'আসাবিয়া' বা গোত্রপ্রীতি ।
এ প্রীতিশক্তি যে পরিমানে সঙ্ঘবদ্ধ ও সক্রিয় হয়েছে ,সভ্যতা বিনির্মাণে তার প্রভাবও হয়েছে ততোই স্থায়ি ও দর্শনীয় । বস্তুতঃ এই গোত্রপ্রীতি থেকেই মানুষের গোত্রবদ্ধ জীবনের বিকাশ এবং এটি মানুষের সমাজ বিকাশের প্রাথমিক স্তর । ইবনে খুলদুন একেই 'বদয়া' বা 'যাযাবরী' জীবন বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবকালে এবং পরবর্তী ইসলামী চিন্তাধারাতেও এই 'আসাবিয়া' বা 'গোত্রপ্রীতি'কে সুনজরে দেখা হয়নি । ইসলাম এই যাযাবরী গোত্রপ্রীতির বাধা অপসারিত করেই সমগ্র আরবকে এক ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করতে চেয়েছিল । (পৃঃ ৩৯)
সাম্রাজ্যের বয়সসীমা ঃ
ইবনে খুলদুন সাম্রাজ্যের বয়ঃসীমা নির্ধারণ করেছেন । তার মতে , যে কোন সাম্রাজ্য সজীব সক্রিয় অবস্থায় তিন পুরুষের অধিক টিকে থাকে না ,এরপরও তার স্থায়িত্ব অবক্ষয়ের অধীন জীবন্মৃত অবস্থার নামান্তর মাত্র । আধুনিক রাষ্ট্র বলতে যা বুঝায় ,আল-মুকাদ্দিমায় তার কোন সুস্পষ্ট উল্লাখ নেই । অনেক স্থলেই রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্য একই পরিনতির অধীন ।
এভাবে ইবনে খুলদুনের মানুষ আদিম যাযাবর গোত্রজীবন থেকে যাত্রা শুরু করে পরিণামে নাগরিক সভ্যতার রূপকার হয়ে দাড়িয়েছে ।
তিনি বলেছেন,'যারা পরিশ্রমের দ্বারা জীবিকা অর্জনের সহজ পথ ত্যাগ করেছে তারাই এ সকল শ্রমবিমুখ শাস্ত্রাদির উপর নির্ভর করে প্রতারনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে । অবশ্য পরিনামে তারা নিজেরাই প্রতারিত হয়েছে । কারন সভ্যতার ভিত্তি প্রতারনা নয় পরিশ্রম । (পৃঃ৪১)।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×