somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধঃএকটি পর্যালোচনা-২

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ তাঁর 'ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশঃ সমঝোতা সমাধান ' প্রবন্ধটিতে এ সম্পর্কে বলেন,
"ফ্ল্যাড এ্যাকশন প্লান FAP) -এর আওতায় প্রণীত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এলাকায় পানি ব্যাবস্থাপনা পরিকল্পনা বা ফ্যাপ-৬ (যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন ১৯৯৫ সালে প্রনিত হয় ) টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প Simulation পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা হয় । এ থেকে প্রাপ্ত কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিম্নরুপঃ
এক,
বর্ষাকালে বাংলাদেশে সুরমা-কুশিয়ারায় বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে ;এবং শুষ্ক মৌসুমে এই নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বাড়বে ,যার ফলে মৎস উৎপাদন , নৌচলাচল এবং সেচের উন্নতি হবে ।
দুই,
'ড্যাম ফেইলর' হলে পানির উচ্চতা অনেক বেড়ে যাবে এবং তা দশদিন বা তারও বেশিদিন ধরে বিদ্যমান থাকতে পারে । তবে যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে 'ড্যাম ফেইলর'এর আশংকা কম বলেও এতে প্রকাশ করা হয়েছে ।
তিন,
তবে যেহেতু এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবন ,তাই সম্ভাব্য ভূমিকম্প এবং প্রকল্প পরিচালনায় ভূল-ভ্রান্তির জন্য ড্যাম নির্মাণে বাড়তি ব্যবস্থা রাখতে হবে ।(৩)

এখন কথা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণের সময় এই ব্যবস্থাটাকে কতটুকু মানা হবে । লভ্যাংশের ব্যাপারটা সম্পর্কে ফারহাদ মাজহার তাঁর 'টিপাইমুখ প্রকল্প' নামে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন,
"পর্যালোচনা করে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলঃ
১.এই বাঁধের মাধ্যমে প্রথমে নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দিকে প্রাকৃতিকভাবে নেমে আসা পানির প্রবাহ রুদ্ধ করা হবে ।
২. পানি যেন ভাটির দেশ বাংলাদেশে প্রবাহিত না হয়ে ভারতে থেকে যায় সেই ব্যাবস্থা করা হবে । জলাধার তৈরী হবে সেই পানি দিয়ে ।
৩.ভারত এ রুদ্ধ পানির প্রবাহকে বিদ্যুতে পরিণত করবে ।
৪.ভারতের কাছাড় অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রনের উপায় হিসেবে এই পানি ব্যাবহার করা হবে ।

তো উপরের আলোচনা থেকে বুঝাই যাচ্ছে যে বাংলাদেশ ভারতের এই টিপাইমুখ বাঁধের ফলে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হতে পারে । বিদ্যুৎ বলে কথা । ভারতের মতো 'বিষাক্ত বন্ধু ' বাংলাদেশের জন্য কতটুকু বিদ্যুৎ দিবে বাংলাদেশের মত বন্ধুপ্রতিম দেশকে ন্যায্য হিস্যা হিসেবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।
এখন দেখা যাক বাংলাদেশ কতটুকু ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এই টিপাইমুখ বাঁধের বা প্রকল্পের ফলে ।আমার মনে হয়েছে এই টিপাইমুখ বাঁধ বা প্রকল্পের ফলে লাভ যতটুকু না হবে তার চেয়ে অনেকবেশি হবে ক্ষতি । ফারাক্কার ক্ষতির অভিজ্ঞতার কথা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ভুলেনি ।
ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং ২০০৫ সালে একটি গবেষণায় উজানে বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের কী পরিমান ক্ষতি হবে । তার বিস্তারিত দিয়েছেন । এর মধ্যে রয়েছে -
১.প্লাবনভূমির প্লাবনের ধরণ ও পরিমাণ এবং ঋতু বদলে যাবে ।
২.সুরমা ও কুশিয়ারার প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ শুষ্ক করায় সিলেট, মৌলবীবাজার ,হবিগঞ্জ , সুনামগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে ।
৩.শুধু সিলেট ও মৌলবীবাজারেই যথাক্রমে ৩০হাজার ১২৩ হেক্টর এবং ৫২০ হেক্টর প্লাবনভূমি কমে যাবে ।
৪. বর্ষায় জলমগ্ন হবে না সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উজানে ৭১ শতাংশ এলাকা , কুশিয়ারা নদীর প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকা নদীটির ডানপাশের প্লাবনভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হবে ।
৫.কুশিয়ারার বাম তীরের বরদাল হাওর শুকনো মৌসুমে পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে । কাউয়ার দিঘির হাওর দুই হাজার ৯৭৯ হেক্টর জলাভূমি হারাবে । (৫)
বন্ধুর জন্য বন্ধুর এত বিরাট অবদান ইতিহাসের আদ্যোপান্তো পর্যালোচনা পাওয়া যাবে না । এত বিরাট উপকার বাংলাদেশের জনগণ শতসহস্র কোটী বছরে নয় শুধু যুগ যুগ ধরেও ভুলতে পারবে না যদি টিপাইমুখ বাঁধ হয় ।

এই বাঁধের ধরণ বা চরিত্র ফারাক্কা বাঁধের মতো নয় । ফারাক্কা বাঁধ নির্মিত হয়েছিল এই যুক্তির উপর যে ভাগিরথীর-হুগলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা হবে । বলা হয়েছিল নদীতে তলানি পড়েছে বলে কলকাতা বন্দরে জাহাজ ভেড়ানো যাচ্ছে না, তাকে ধুয়ে নিয়ে সমুদ্রে ফেলবার জন্য শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়ানো দরকার । সুতরাং , গঙ্গা থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে শুকনো মৌসুমে হুগলীতে ফেলা হবে । কিন্তু টিপাইমুখ প্রকল্পের উদ্দেশ্য /চরিত্র আলাদা । এখানে পানি ধরে রাখার উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ তৈরি ও কৃষিকাজ । পানি ধরে রাখার কুফল তো ফারাক্কার মতো হবেই , এর সঙ্গে যুক্ত হবে জলাধার নির্মাণ ও বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রতিক্রিয়া । গোটা ফল ফারাক্কার চেয়ে ভয়াবহই হতে পারে ।
উজানের দেশ ভারত থেকে ভাটির দেশ বাংলাদেশ কমপক্ষে ৫৪ টি আন্তর্জাতিক নদ-নদী প্রবাহিত হচ্ছে । এর মধ্যে ৪ টি নদীর পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ ,পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়প্রাপ্ত বিভিন্ন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে রুদ্ধ করছে , নিয়ন্ত্রন করছে কিংবা সরিয়ে নিচ্ছে । আমরা ফারাক্কার কথা বলি কিন্তু তিস্তা নদীর উদাহরণও সমান ভয়াবহ । তিস্তা নদীর উৎপত্তি হিমালয় অঞ্চলের সিকিমে । এই নদী সিকিমের প্রান বলে অভিহিত করা হয় । সিকিমে ২০০৮ সালে ভারতে তিস্তা নদীর ওপর যে বিশাল বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে তার ক্ষমতা আগামী দশবছরের মধ্যে ৫০,০০০ মেগাওয়াট পৌঁছাবে । সিকিমে নির্মিত বিশাল তিস্তা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেখলে এর বিশালতা বুঝা যাবে । বিস্ফোরণে পাহাড় উড়িয়ে দিয়ে খোঁড়ল কেটে ভারত ২৯ টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ২৯ টি বাঁধ নির্মাণ করেছে এই নদীর উপর । বাংলাদেশ নিজের যে সেচ প্রকল্পের চিন্তা-ভাবনা করছিল তিস্তার উপর বাঁধ নির্মাণে পরিহাসে পরিণত হয়েছে । (৬)
'তিন'
এই বাঁধ প্রকল্পের জায়গাটা বরাক নদী ও তুইভাই নদীর সংযোগস্থলের ৫০০ মিটার ভাঁটিতে । প্রথমে এই প্রকল্প ব্রাক্ষণপুত্র ফ্লাড কন্ট্রোল বোর্ডের অধিনে ছিল । পরে ১৯৮৫ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ১৯৯৯ সালে বাঁধটিকে নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা নিপাকার হাতে ন্যাস্ত হয় । তখন এর নাম 'টিপাইমুখ হাইড্যাম' এর বদলে রাখা হয় 'টিপাইমুখ পাওয়ার প্রজেক্ট' (1500mw Tipaimukh Hydro-electric project ) । পূর্ব ভারতে এত বড় হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট এর আগে নেয়া হয়নি ।
মনিপুর ও মিজোরামের ৩১১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প । একটি হিসাবে দেখা গেছে যে, এর জন্য খরচ হবে ভারতীয় মুদ্রায় কমপক্ষে ৮ হাজার রুপিয়া । মনিপুরে এটা তৃতীয় পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প । টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে মনিপুর রাজ্যের ২৭৫.৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১৬ টি গ্রাম ডুবে যাবে । ৫১ টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং ৪০,০০০ এরও বেশি মানুষের জীবিকা ধ্বংস হবে । এর বিরুদ্ধে মনিপুরবাসি বারবার প্রতিবাদ জানাচ্ছে । এরই ফলশ্রুতিতে বাঁধ নির্মাণের স্থান অনেকবার বদলানো হয়েছে ।
এই বাঁধের উচ্চতা ধরা হয়েছে ১৬৮.২ মিটার এবং লোড ফ্যাক্টর ধরা হয়েছিল ২৬.২৫% । এর ৬ টি পাওয়ার হাউস থাকবে ,৬ টি টারবাইনের প্রতিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে ২৫০ মেগাওয়াট ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×