আমার বেশীরভাগ ট্যুরই হটহাট করে হয়। বুধবার রাতে এক ইয়ারমেট কলিগ ওয়াসি ভাই ফোন করে বলল কালকে রেডী থাইকেন । দিনাজপুর যাবো । দ্রুতযান এর ৭টা টিকেট কাটা হইছে । আমি বললাম আর কে কে যাচ্ছে? জানালো তাহসিন, ওর কাজিন মাইমুর, আর ৩জন জুনিয়র কলিগ রিফাত, মঞ্জুর আর মুতাসিম । অফিসের প্রোডাকশন সার্ভারে কিছু ঝামেলা থাকায় উইকেন্ডে ঢাকা ছাড়তে চাচ্ছিলামনা তাও আবার এতদুর!! কি করবো বুঝতেছিনা আর উনাদের সাথে না যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা কারন এরা সবাই খুব প্রিয়টাইপ মানুষ ।
বৃহস্পতিবার যথারীতি অফিস করছি । যাওয়ার ইচ্ছা নাই তাই জোর করেই রাত ৮টা অব্দি অফিসে বসে আছি । ট্রেন ৮ঃ২০ এ বিমানবন্দর ষ্টেশন থেকে । এর মধ্যে সবাই পৌছে গিয়ে শুরু করলো আমাকে ফোন দেয়া একের পর এক অনিচ্ছা সত্ত্বেও ল্যাপ্টপ ব্যাগে ভরে রওনা দিলাম ষ্টেশনের পথে । যেহেতু ৮টা বাজে সেহেতু ধরেই নিয়েছিলাম আমি ট্রেন মিস করতে যাচ্ছি ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতেও হলোনা আর ওরাও মনে কষ্ট পেলনা । সাপ ও মরলো; লাঠিও ভাংলোনা কিন্তু বিধিবাম । বাংলাদেশের ট্রেন আবারো প্রমান করে দিলো সময়ের ট্রেন কখনই সময়ে ছাড়েনা । সেই ট্রেন আসতে আসতে বাজালো রাত ১০টা । যেহেতু ষ্টেশন এ পৌছে গেছি সো আমাকে না নিয়ে তারা যাবেনা ।
এরমাঝে ওয়াসি ভাই আমাকে কোনায় ডেকে নিয়ে বল্লোঃ বাসায় কিছু ঝামেলার কারনে সে যেতে পারছেনা; তো আমাকে যেতেই হবে আমি পুরাই আকাশ থেকে পরলাম । আমি ভেবেছি সে গেলে আমি পাশ কাটিয়ে চলে আসবো । উছিলা দিলাম কাপড়চোপড় কিছুই আনি নাই । সবাই সমস্বরে জানান দিলো ওদের কাছে এক্ট্রা কাপড় আছে । বুঝতে পারলাম আটকে গেছি
ট্রেন তখনও আসেনি । নয়টার মত বাজে । ষ্টেশন দাড়িয়েই ভাবতেছি এতদূর বাদ দিয়ে কাছে কোথায় যাওয়া যায় । কারন অফিসে না জানিয়ে ঢাকার এত বাইরে যেতে চাচ্ছি না। বিপদ আপদের তো আর মা-বাপ নাই । সবার কাছে প্রস্তাব দিলাম সিলেট/বগুড়া... । ওদের সবার কথা হলো ভাই বাসা থেকে ট্যুরের কথা বলে ব্যাগ নিয়ে বাহির হইছি যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়া যান কিন্তু বাসায় যাইতে কইয়েন না । কি করা যায় ভাবছি । এর মাঝে ওয়াসি ভাই ও চলে গেছে । সবগুলা জুনিয়র ছোট ভাইয়ের মত আর একসাথে জব করতেছি বছরের উপরে । ওদেরকে কষ্ট না দিয়ে মনস্থির করে ফেললাম । যেখানেই যাই দিনাজপুর টাইপ ওতদুরে যাবোনা ।
ট্রেনের ৭টা টিকেট নিয়েও পরলাম বিপদে । হাজার দুয়ের উপরে টাকার টিকেট । আমার কাছে একসাথে ২টা আর মুতাসিম এর কাছে ৫টা । এরই মধ্যে ভেঁপু বাজিয়ে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ষ্টেশনে এসে হাজির । ট্রেনের অবস্থা দেখে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি । বগিতে বাতি নাই; ফ্যান নাই । লোকাল বাসের মত এখনি লোকজন দাঁড়িয়ে আছে এই নাকি ফার্স্টক্লাশের অবস্থা মুতাসিম কে কোনায় ডেকে নিয়ে বললাম আর যাই করি এই ট্রেনে সারারাত জার্নি করে কোথাও যাবোনা । বললাম টিকেট বেচে দেন আমিও দল থেকে বের হয়ে টিকেট বেচা শুরু করলাম । সেইরকম অভিঞ্জতা ।।
জোরে জোরে চিল্লাইতেছি দি---না---জ---পু---র--- দি---না---জ---পু---র--- দ্রুতযান । দি---না---জ---পু---র--- দি---না---জ---পু---র ।। একলোক আসলো । টিকেট নেড়েচেড়ে দেখলো । আমাকে অবাক করে দিয়ে ২টা টিকেট নিয়ে নিলো মুতাসিম কে ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছি । কিন্তু ফোন পিক করতেছেনা ১০মিনিট পর বিজয়ীর হাসি নিয়ে আমার সামনে হাজির । বলল ভাই বেচে দিছি ৫টাই প্রশ্ন করলাম একসাথে ৫টা টিকেট বেচলেন কেম্নে? জানালো এর জন্যেই তো এর দেরী হইছে। একলোক পেয়েছিলো সে ২টা নিবে আরেকজন ৩টা । এই দুইজঙ্কে একসাথে ৫টা টিকেট দিয়ে দিছে । কিন্তু ৩৮০টাকার জাগার ৩৫০ এ বেচে আসছে ব্যাপার না । বেচতে তো পারছে ।
আর সবাই এই টিকেট বেচার কাহিনী জানেনা । ওরা যখন ট্রেনে ঊঠার তোরজোর করতেছে তখন জানালাম টিকেট তো বিক্রী করে দিয়েছি । সবার মুখের যা অবস্থা হলো তা দেখার মত এরমধ্যে মঞ্জুর আবার পল্টি নিচে চাচ্ছে । সবাই মুখোমুখি কেন না বলে টিকেট বিক্রী করেছি । বিপদ আসন্ন সবাইকে প্লাটফর্মের বাইরে এসে চা খাওয়ালাম । পরবর্তী কর্মপন্থা চিন্তা করতেছি কি করা যায়...
খন্দকার ভাইয়ের কথা মনে পড়লো । উনি আমাদের অফিসে গাড়ি চালাতেন নিজের মাইক্রো । ফোন দিলাম উনাকে । বললাম এই অবস্থা । গাড়ি নিয়ে আসেন । সিলেট যামু । জানালো ৩০মিনিট দেরী হবে গ্যাস ভরতে । গ্যাস নিয়েই রওনা দিচ্ছে
রাত ১১টা ১৫ এর দিকে উনি এসে হাজির...সবাই উঠে বসলাম গাড়িতে । যাক...অবশেষে ট্যুর তো হচ্ছে । তো চলুন হয়ে যাক আরেকটা সিলেট-জাফ্লং-তামাবিল-স্রীমঙ্গল ট্যুর
রাত ২টায় ভৈরব ব্রীজে
হোটেল রোজ ভিউ-১, সিলেট
হোটেল রোজ ভিউ-২, সিলেট
হোটেল রোজ ভিউ-২, লবি, সিলেট
হোটেলের রুমটা অসাধারন ছিলো...একদিকে সম্পুর্ন গ্লাস । রাতে চলতেছিলো ঝুম বৃষ্টি । গ্লাসের বাইরেই সোডিয়াম লাইটের আলোয় বৃষ্টির ফোঁটা ধরার চেষ্টা...আমার অসম্ভব প্রিয় ২টা ছবি
জাফ্লং যাওয়ার পথে-১
জাফ্লং যাওয়ার পথে-২
তামাবিল পৌছুলাম ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
জাফলং-১
জাফলং-২
লালাখাল
আবারো মেঘের ঘনঘটা
বোনাসঃ জাফর ইকবাল স্যারের রুম
ষ্টেশনে ২ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অতঃপর ট্রেনের টিকেট বিক্রী করে সিলেট ভ্রমনের সাথী হবার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৪