somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলের উপর বন - রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৪টা ডিঙ্গি নৌকায় বসে আছি ১১জন, মাঝিদের বৈঠার আঘাতে মৃদু দোলায় জল কেটে একটু একটু করে নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে জলের উপর মায়াবী বনের দিকে। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি আর মাঝে ঝোপ ঝোপ বন। মাথার উপর ঝুমমমম বৃষ্টি। গামছা-পলিথিন দিয়ে কোন রকমে ব্যাগ আর ক্যামেরা সুরক্ষা করে দিলাম ছাতা বন্ধ করে। বাড়িয়ে দিলাম দু’হাত বৃষ্টির; আর চোখ আকাশের পানে। অসম্ভব ভালোলাগায় ভিজে গেলো চোখ। গাইলাম গান গুনগুন করে। এত ভালোলাগার মাঝেও মনের কোনে কোথাও কি একটু কষ্ট লুকিয়ে আছে?? এমন কেউ কি আমার নেই যাকে এত আনন্দের, ভালোলাগার অনুভূতিটা জানাতে পারি!! নেই মনেহয়... যাইহোক পিচ্চি মাঝি আমার দিকে তাকিয়ে এমন হাসি দিলো যার অর্থ এমন ‘পাগল’ জীবনে এই প্রথম দেখতেছে :-)

গোয়াইঙ্ঘাট যাওয়ার পথে



গাড়ীর গ্লাসে



প্রতিটা ট্যুরেই একেকটা স্পেশাল স্মৃতি থাকে। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় ঝুমমমম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাওরের মাঝে রাতারগুলের স্মৃতি সেইরকমই যা জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঁচ বছর সিলেটে থেকেও কোনদিন জানা হয়নি এখানে রাতারগুল নামে একটা রিজার্ভ ফরেষ্ট আছে তাও সোয়াম্প ফরেষ্ট!! বছরের বেশিরভাগ সময় যার গাছগুলো অর্ধেক পানির নিচে থাকে । প্রথম আলোতে আর ফেসবুকে টুকটাক ছবি দেখে ক্রেজী ট্রাভেলার’রা একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নড়েচড়ে বসল। আরজু ভাই ফেসবুকে ইভেন্ট ক্রিয়েট করে ক্রেজী ট্রাভেলারদের সবাইকে আমন্ত্রন জানিয়ে দিল,তৈরি হয়ে গেলো দল।

সিলেটের বিখ্যাত গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নামলাম ভোর বেলায়। কোনরকম রুম ম্যানেজ করে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম নাস্তায় ‘ইষ্টিমুটুম’ এ সাথে ছিল অতীতচারন। এরপর রওনা হয়ে গেলাম গোয়াইঘাটের দিকে। বৃষ্টির থামার কোন লক্ষন নেই। কোথাও গুড়িগুড়ি কোথায় ঝুমঝুম বৃষ্টি। ভালোই লাগছিল। বৃষ্টি বরাবরই ভালো পাই কিনা ;-) আর যাত্রার মাঝের আড্ডাই হল ট্যূরের প্রধান আকর্ষণ। এর বর্ননা এখানে দেয়া যাবেনা হা হা

ট্রলারে উঠার সময় বৃষ্টি তার আসল রুপ নিয়ে হাজির হলো। সবাই ছইওয়ালা ট্রলারের নিচের কামরায় আশ্রয় নিলাম। প্রকৃতি নিজ হাতে গড়া সৌন্দর্য্যর বর্ননা করা আসলেই কঠিন। নয়ন জুড়িয়ে শুধু মনেই যা ধারন করা যায় যেখানে চোখ হলো ক্যামেরা আর মন হলো মেমোরি কার্ড। ধীরে ধীরে মনের মেমোরীকার্ড অসম্ভব ভালোলাগার কিছু ক্ষন আর স্মৃতি দিয়ে ভর্তি হতে থাকলো।







আমাদের কমন-সেন্স যে আসলেই খুব কম তার আরেকটা জ্বলন্ত উদাহরণ পেলাম লোকালয় থেকে ২ঘন্টা দূরের হাওরের মাঝে। যেখানে গাছের পাতা চুইয়ে জলের উপর টুপটুপ করে পানি পরার শব্দ আর বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ হবার কথা নয় সেখানে মানুষরূপী কিছু বানর বনের ভিতর ঢুকেই হাউকাউ শুরু করে দিল। কেন, কি কারনে যা এখনও বোধগম্য নয়। ইচ্ছা করতেছিল নৌকা থেকে নামিয়ে পানিতে চুবান দেই :-D যদিও দেয়া হয়নাই। উপায় না দেখে ওরা যেদিকে যায় আমরা তার উলটা দিকে ঘুরতে লাগলাম ।

সাত-আট ফিট পানির নিচে আর বাকি অংশ উপরে এরকম ঘন হিজল বনের মাঝে ঝুপ করে গাছগাছালির ডালপালার ফাঁক গলে ঢুকে গেলাম ভেতরে। বাকীটা শুধুই মুগ্ধ হওয়া। ফেরার পথে আরেকটা সোয়াম্প ঝোপের ভিতর ঢুকে বন্ধ করে দেয়া হলো আমাদের ট্রলারের ইঞ্জিন। বাতাসের শনশন শব্দ, হাওরের পানির কুলকুল ধ্বনি আর গাছের পাতা থেকে পড়া পানির টুপটুপ শব্দ আর সাথে নিস্তব্ধ নীরবতা!! এর বেশী বর্ননা আর সম্ভব না; চোখ বন্ধ করলেই যা অনুভব করতে পারি এখনও।










রাতের কীন ব্রীজ, সিলেট।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×