somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোদার ওপর খোদকারী

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ক্রেগ ভেন্টর জেনেটিক্সের জগতে এক পরিচিত নাম। তিনি হলেন ক্রেগ ভেন্টর ইন্সটিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা জেনেটিক্সের গবেষণায় অগ্রণী এক সংস্থা। নিচের লেখাটা তাঁর একটি বক্তৃতা অবলম্বনে লেখা।]
জেনেটিক কোড হল জীবনের ব্লুপ্রিন্ট। প্রতি জীবকোষে এই কোডই নির্ধারণ করে কোষের কার্যকারিতা - কোষ কোন কোন প্রোটিন তৈরী করবে, কিভাবে করবে। জেনেটিক কোড নিয়ে গবেষণায় মূলত দুটো ভাগ করা যায়। ধাপদুটোকে সাধারণভাবে বলা যায়, একটা জেনেটিক কোড পড়তে শেখা আরেকটা লিখতে শেখা। পড়তে শেখা বলতে জীবের জিনোমে বেসিক ব্লকগুলোর শৃঙ্খলা লিপিবদ্ধ করা। আর লিখতে শেখা বলতে সেই লিপিবদ্ধ শৃঙ্খলা থেকে পৃথকভাবে জীবকোষ তৈরী করা।

প্রায় এক দশক আগে প্রথম যখন আমরা একটি ভাইরাসের জিনোম পড়তে পেরেছিলাম তখন সেটা আমাদের ১৩ বছর পরিশ্রমের ফসল ছিল। আজ আমরা একই কাজ মাত্র ২ থেকে ৮ ঘন্টায় করে দেখাতে পারি। এর পরেও অনেক উদ্ভিদ, সাধারণ প্রাণী এমনকি মানুষের জিনোমও আমরা পড়তে পেরেছি। এ বছরের শেষে আমরা মনে করি আরো তিন থেকে পাঁচটি জীবের জিনোম পড়তে পারব। পরিবেশবাদী একটি সংস্থা এ বছরের মধ্যে ১৩০টি জিনোম পড়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

এবারে আসা যাক কৃত্রিম জীবনের কথায় - মানে জিনোম লেখার খেলায়। সবথেকে সরল জীবন ভাইরাস পরীক্ষাগারে তৈরী করা সম্ভব হয়েছে অনেকদিন হল। আমাদের সহকারী এক বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টায় এখন মাত্র দু-সপ্তাহে যথেষ্ট জটিল প্রকৃতির ভাইরাস তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে, এখনো অবধি পোলিও ভাইরাস সহ দশ হাজার প্রজাতির ভাইরাস তৈরী করা গেছে এই পদ্ধতিতে। মোটামুটিভাবে, এখন যেসব ভাইরাসের জিনোম পড়া গেছে, তাদের কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করাও সম্ভব। কিন্তু, নিজেদের পরিকল্পনামত ভাইরাস তৈরী করতে এখনো এক দশক লাগবে। তবে আশার কথা, আগামী দু-বছরের মধ্যে প্রোক্যারিওটিক কোষ আর দশ বছরের মধ্যে আমাদের শরীরের অংশ ইউক্যারিওটিক কোষ বানানো সম্ভব হবে।

জীবকোষ বানানোর পদ্ধতিও বেশ মজার। প্রথমে টুকরো টুকরো অবস্থায় বেস-পেয়ারগুলো তৈরী করা হয় - এগুলো আসলে কিছু রাসায়নিক ছাড়া কিছুই না। সেগুলোকরে জুড়ে তৈরী করা হয় সমগ্র একটি ক্রমোজোম। এই টুকরো জুড়ে গোটা ক্রোমোজম বানানোর কৌশল প্রকৃতি থেকেই শেখা। কয়েকটি বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণের মধ্যেও বেঁচে থাকতে সক্ষম। প্রথমে বিকিরণে এদের ক্রোমোজোম টুকরো টুকরো হয়ে গেলেও বারো থেকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেআবার এরা তাকে জোড়া লাগাতে সক্ষম। এহেন অদ্ভুত ক্ষমতাধারী ব্যাকটেরিয়াকেই কাজে লাগানো হয় গোটা ক্রোমোজম বানানোর জন্য। বানানো গোটা ক্রোমোজম এর পরে স্থান করে নেয় পুরোনো একটি জীবকোষে, যার মধ্যেকার ক্রোমোজম আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে এই পদ্ধতিই হল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

আমার বিশ্বাস জিনোম পড়া ও কৃত্রিম জীব সৃষ্টি মানুষের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে। অনেক এমন জীবাণু পাওয়া গেছে যারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, অনেকে বেঁচে থাকে জলের স্ফুটনাঙ্কে। পরিবেশের কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা কার্বন-মণো-অক্সাইড নিয়ে অনেকে অন্যান্য বায়ো-পলিমার উতপাদন করে যা তেলের পরিবর্তে ব্যবহার হতে পারে। নরওয়েতে মিথেন থেকে হাইড্রোজেন নিষ্কাশনেও এরকমই এক কৃত্রিম জীবাণু ব্যবহৃত হবে। ভবিষ্যতে রোবট নিজে থেকেই কৃত্রিম জীবাণু তৈরী করতে পারবে। ওষুধ আর রাসায়নিক শিল্পেও ব্যবহার হবে কৃত্রিম জীবাণু, কারণ এরা সহজেই জটিল থেকে জটিলতর রাসায়নিক উতপাদন করতে পারে, অতি সহজে ও কম খরচে। আরো মজার ব্যাপার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রয়োগে সাইনোব্যাকটেরিয়ার ফটো-সিন্থেসিসে পরিবর্তন এনে উপজাত হিসাবে হাইড্রোজেন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে হাইড্রোজেন যদি জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাহলে এই জীবাণুর ভূমিকা বাড়বে, সাথে আসবে আরো নতুন নতুন জীবাণু। এভাবেই আশা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে আমাদের খাদ্য, শক্তি বা রাসায়নিক শিল্পে অপরিহার্য হয়ে যাবে।

কিন্তু এত সম্ভাবনা সত্ত্বেও সমস্যার শেষ নেই। ১৯৯৯ সালে আমাদের প্রকল্প শুরুর আগে প্রায় দেড় বছর আমরা শুধু এথিকাল রিভিউতেই সময় দিয়েছি। সেও এক মজার ব্যাপার। বিভিন্ন ধর্মগুরুরা এসে তাদের ধর্মগ্রন্থ পড়ে সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করলেন যে কৃত্রিম জীবন তৈরী করা ধর্মীয় বিধিসংক্রান্ত কিনা। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থে এর বিরোধী কিছু না পাওয়ায় আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। এর পরেও সমস্যা হল বায়ো-টেররিসম। কৃত্রিম জীবাণু বা ভাইরাস যে টেররিস্টদের কাজে ব্যবহার হবে না তা কে বলতে পারে? আর তা হলে পরিণতি হবে ভয়ানক। কিন্তু আমরা এখনো ততটা এগোতে পেরেছি বলে মনে হয়না। তাই আমি আশাবাদী, তার আগেই আমরা এর প্রতিরোধ করার উপায় বের করে ফেলতে পারব। আমি আপাতত স্লোন ফাউণ্ডেশনের সাহায্যে একটি প্রকল্পের সাথে যুক্ত আছি, যাতে এই সমস্যার প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় খতিয়ে দেখছি।

তবুও বলে রাখা ভাল, বিজ্ঞান একটি পদ্ধতি মাত্র - ব্যবহারকারী মানুষ। যদি মানুষ একে ভুল পথে ব্যবহার করতে চায়, বিজ্ঞানের নিজস্ব সত্ত্বা তাকে আটকাতে পারে না। তাই মানুষের সমস্যা মানুষকেই মোকাবিলা করতে হবে। এ বিষয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আর এটম বোমার খুব একটা তফাত নেই, ব্যবহার যেমন হবে আমাদের ভবিষ্যতও তেমনই এগোবে।

পুরো টক শো দেখতে হলে দেখুন এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ১০:৪৪
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×