বুধবার হাটের দিন “খা খা খা বক্ষিলাইরে খা। কিরপিনেরে খা।” বলিতে বলিতে সাপের খেলা দেখাইতো। বানরের খেলা, যাদুর খেলা দেখাইয়া মজমা জমাইয়া তাবিজ বিক্রি করিত। ইহারা বেদের দল। যাযাবরের জীবন তাহাদের। দল বাধিয়া নানা জায়গা ঘুরিয়া বেড়াইতো। গাছে তলে, নদীর ধারে, বিলের পাড়ে ছোট ছোট ডেরা তুলিয়া রাত কাটাইতো। বলিত কামরূপ কামাক্ষা হইতে তাহারা সাপুড়ে বিদ্যা রপ্ত করিয়া আসিয়াছে। আচ্ছা কামরূপ কামাক্ষা কোথায়?
হাটবারে আরও একজন লোকের দেখা মিলিত নাম তাহার আইউব আলী। সে বলিত- “নাম মোহাম্মদ আইউব আলী, বাড়ী আমার বারুয়াখালী।” হাটে ইদুর মারিবার ঔষধ, নানা পোকা মাকড় মারিবার ঔষধ বিক্রি করিত সে।
বারো দুয়ারীর ঘোষবাড়ীর পাচু ঘোষাল, আশপাশের বিয়ে বাড়িতে যাহার ডাক পড়িত দই পাতিবার প্রয়োজনে, তাহার কথা। আদা ডাকাত কিংবা মতি চোরা- “চোর বইলেন নাগো। আমি চোর না। ছোট একটা মুরগি চুরির অপরাধে চোর সাব্যস্ত কইরা ফালাইলেন এইডা আপনেগো কি বিবেচনা?” সেই মতি চোরার গল্প।
কিংবা সেই ভিখিরিনি যাহার হস্তে পরিহিত বালাখানা কাপড় দিয়া মুড়াইয়া রাখিত। লোকে জিজ্ঞাসা করিলে কহিত-“সুনার গয়না চোর ছ্যাচ্চরে দেইখা ফালায় যদি তাই ঢাইকা রাখি।”
চেগারকোনার হুরমত, বিলপল্লীর গফুর, খোদাবক্স মাদবর, মেছের মাদবর, পিপুলিয়ার জয়নাল, কুকুরহাটির পবন পালোয়ান। এরূপ কত বিচিত্র চরিত্র মাথার ভিতর ঘুরপাক খাইতে থাকে। কাহার কথা বলিব?
কামার-কুমার-জেলে-বেদেবহর যাহারা বালক-কৈশোর-যৌবন বেলাকে নানা রঙে, নানা বর্ণে রাঙ্গাইয়া দিয়াছে সেইসব মানুষের গল্প লিখিতে খুব ইচ্ছা করে।
চলিবে...